<p>যশোরের শার্শা উপজেলায় গত ১৬ বছরে স্থানীয় সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের মদদে ৬৯ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। আর এর মধ্যে ৬১ জনই তাঁর নিজ দলীয় নেতাকর্মী।</p> <p>এমপি আফিল নিয়োগ বাণিজ্য, জমি দখল, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, টেন্ডার বাণিজ্য আর সন্ত্রাসী বাহিনী লালন করে অবৈধ সম্পদ শুধু বাড়িয়েই গেছেন। আর এসব অপকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ালেই তাঁর নির্দেশ বা ইশারায় খুন করা হয়েছে। ঢাকায় শেখ আফিলের একাধিক বাড়ি ছাড়াও যশোর ও শার্শায় রয়েছে আলিশান বাড়ি। এ ছাড়া স্ত্রী, ছেলে এবং নিজ নামে দেশে-বিদেশে তিনি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। একক আধিপত্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি এলাকায় গড়ে তোলেন ভয়ংকর সন্ত্রাসী বাহিনী।</p> <p>যশোরের পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, শেখ আফিলের সন্ত্রাসীদের হাতে ২০০৯ সালের ১০ মার্চ শার্শার বাগআঁচড়া বাজারে বাড়ির ছাদে খুন হন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট লক্ষণপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য আব্দুল হামিদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়ার কারণে তৎকালীন শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে সাবেক এমপি তাঁর মিলের মধ্যে ডেকে এনে নির্যাতন করেন। ২০১২ সালের ১৫ জুন শার্শায় দৈনিক গ্রামের কাগজের সাংবাদিক জামাল উদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শার্শা থানায় মামলা করা হলেও বিচার হয়নি। ২০১৩ সালে উপজেলার পুটখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।</p> <p>২০১৫ সালে যুবলীগের কর্মী তোজাম্মেল হোসেন ওরফে তুজামকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যা মামলায় শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রহিম সরদারকে প্রধান আসামি করা হয়। রহিম সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিনের অনুসারী।</p> <p>অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে এলাকায় এককভাবে অটো ব্রিকসের ব্যবসা করেছেন এমপি শেখ আফিল। এ ছাড়া জমি দখল করে এবং শত শত বিঘার ফসলি জমির মাটি কেটে ঘেরে পরিণত করেছেন।</p> <p>নাভারনের ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বাবু জানান, শার্শায় ৩০০ বিঘা জমি দখল করেছেন আফিল। ১১০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা আফিল জুট উইভিং মিলসের প্রায় ৫০ বিঘাই গরিব মানুষদের কাছ থেকে দখল করা।</p> <p>উপজেলা নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচন হলফনামায় শেখ আফিলের বার্ষিক আয় ছিল ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পরেরবারই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনে হলফনামায় উল্লেখ করেন সাত কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৪৮ টাকা।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক এমপি আফিলের মদদে মাদক ব্যবসাও করতেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস কবির বকুল, কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ টিংকু, উলসি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়নাল হক, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার, এমপির ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুজ্জামান।</p> <p>এ ছাড়া এমপির দখল ও টেন্ডার বাণিজ্য, লুটপাটের তদারকি করত লক্ষণপুরে কামাল বাহিনী, বাহাদুরপুরে মফিজ বাহিনী, বেনাপোলে ওয়াহিদ বাহিনী, কায়বায় টিংকু বাহিনী, উলসীতে আইনাল বাহিনী এবং শার্শায় সোহরাব ও হাসান বাহিনী। বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুর হাট এলাকার ব্যবসায়ী জাহাংগীর হোসেন জানান, সাবেক এমপি প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ টাকা সেলামি নিতেন এই পশুর হাট থেকে। পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ জানান, শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে।</p> <p>এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শেখ আফিল উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।</p> <p>প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা অপকর্মের দায়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই তালিকায় শেখ আফিল উদ্দিনের নামও রয়েছে।</p> <p> </p> <p> </p>