<p>বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের সর্ববৃহৎ রেল জংশন পার্বতীপুর রেলস্টেশন সম্প্রসারিত হচ্ছে। রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বর্তমানে যে প্ল্যাটফরম আছে সেটিও পশ্চিম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই সঙ্গে ব্রডগেজ রেল লাইনগুলো করা হবে ডাবল লাইন। </p> <p>সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৮৭৯ সালে পার্বতীপুর রেল জংশন স্থাপিত হয়। শুরুতেই এখান থেকে চার লাইনে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। সেই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চল থেকে এই স্টেশন দেখতে অসংখ্য মানুষ আসে বলে শোনা যায়। বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলের মানুষেরা পূজা, বিয়েসহ অন্য সব বড় অনুষ্ঠানে পার্বতীপুর হয়ে কলকাতায় গিয়ে কেনাকাটা করে দিনে দিনে ফিরে আসতে পারত।</p> <p>বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে পার্বতীপুর জাংশন হয়ে ৭৫টি ট্রেন চলাচল করত ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেলপথে। এর মধ্যে ছিল মেইল, লোকাল যাত্রীবাহী ট্রেন ও খাদ্য ও কয়লাবাহী ট্রেন। সেই সময় যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের অধিকাংশের ছিল কয়লাচালিত ইঞ্জিন। মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশে অসংখ্য রেলব্রিজ, কালভার্ট, ওয়াগন ও ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পরে পাকশী ব্রিজ, তিস্তা ব্রিজসহ অন্য সব ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ, কালভার্ট সংস্কার, পুনর্নির্মাণ এবং নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করে সচল করে তোলা হয়। ১৯৭৯ সালে কয়লাচালিত ইঞ্জিন বন্ধ করে আমদানি করা হয় হাঙ্গেরিয়ান ইঞ্জিন।</p> <p>অন্যদিকে আশির দশকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও ৯০-র দশকের প্রথম দিকে সুপার নিউমারারি ঘোষণা করে রেলের ৭৫ হাজার জনবল কমিয়ে নিয়ে আসা হয় ২৫ হাজারে। সারা দেশের ট্রেন চলাচল ও মালামাল পরিবহনে বিপর্যয় দেখা দেয় এ সময়। পার্বতীপুর রেল জংশন অনেকটা ভূতুড়ে স্থানে পরিণত হয়। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও সুপার নিউমারারি দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী ও কারখানার শ্রমিকরা এখান থেকে চলে যাওয়ায় বাংলো, রেল কোয়ার্টারগুলো খালি পরে থাকে। ফলে এ সব সাধারণ মানুষের দখলে চলে যায়।</p> <p>পরবর্তীতে দেশে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলেও পূর্বের জায়গায় ফিরে যেতে পারেনি বাংলাদেশ রেলপথ। পার্বতীপুরের রেলের বাংলো, ডাবল কোয়ার্টার, সিঙ্গেল কোয়ার্টারের ৯০ শতাংশ এখনো পাবলিকের দখলে রয়েছে। পার্বতীপুর রেলওয়ের হাসপাতালটির বেহাল দশা চলছে অনেক আগে থেকে। ডিজেল স্যাড. লোকোসেড ও সেন্ট্রাল লোকোমোটিভ ওয়ার্কসকে টিএলআর (অস্থায়ী) শ্রমিক নিয়োগ করে চালানো হচ্ছে।</p> <p>বর্তমানে পার্বতীপুর স্টেশন হয়ে যে সব যাত্রীবাহী আন্ত নগর ট্রেন চার লাইনে চলাচল করছে সেগুলো হচ্ছে, পঞ্চগড় রেল স্টেশন ও ঢাকার মধ্যে যাতায়াত করছে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস। এখান থেকে রাজশাহী স্টেশনের মধ্যে চলাচল করছে বাংলাবান্দা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া দোলনচাঁপা নামের একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে পার্বতীপুর রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া হয়ে সান্তাহার পর্যন্ত। চিলাহাটি রেল স্টেশন থেকে পার্বতীপুর হয়ে চলাচল করছে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ও নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন। তিতুমীর ও বরেন্দ্র নামের দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী পর্যন্ত চলাচল করে থাকে। আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস, রুপসা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে খুলনা পর্যন্ত। পঞ্চগড় পার্বতীপুরের মধ্যে চলাচল করে আন্তঃনগর কাঞ্চন এক্সপ্রেস ট্রেন। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন কুড়িগ্রাম থেকে পার্বতীপুর এবং এখান থেকে ঢাকা পর্যন্ত সপ্তাহে ছয়দিন চলাচল করে। পার্বতীপুর, লালমনিরহাট, বোনাড়পাড়া ও খুলনা রেল স্টেশনের মধ্যে চলাচল করা ট্রেন সংখ্যা মাত্র ছয়টি।</p> <p>পার্বতীপুর রেল স্টেশন মাস্টার মো. রফিক চৌধুরী বলেন, বর্তমান রেলস্টেশন বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে। নির্মাণ করা হবে পশ্চিম দিকে আধুনিক মানের ভবন। বর্তমান প্ল্যাটফরম ও রেলভবনের স্থলে নতুন করে ব্রডগেজ লাইন বসানো হবে। ট্রেন চলাচল করবে ডবল লাইন দিয়ে। ইতিমধ্যে রেল স্টেশন সম্প্রসারণের জন্য জায়গাার মাপজোক করা হয়েছে। শীঘ্রই মূল কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।</p>