<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কেউ হাসছেন, কেউ নির্বাক চোখে তাকিয়ে রয়েছেন; কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন। কয়েকজন আবার শুয়ে-বসে যা মন চায় বিড়বিড় করে তাই বলছেন। এদিকে দু-একজন হাতে তসবিহর ছড়া নিয়ে জপছেন। অপরিচিত মানুষ দেখলে তাঁদের কেউ বা কথা বলতে চাচ্ছেন। বয়সে কিছুটা তারতম্য থাকলেও সবারই এক জায়গায় মিল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাঁরা সবাই </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অসহায়</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। আর তাঁদের সযত্নে আগলে রাখছেন রাজধানীর উত্তরখানের </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নামের প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাসেবীরা। নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য গড়ে তোলা এই বৃদ্ধাশ্রমে বর্তমানে ৯০ জন অসহায় মানুষ রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আশ্রিতদের কেউ পড়ে ছিলেন রাস্তায়, রেলস্টেশনে, কেউ বা উদ্বাস্তু হয়ে মাজারে, আবার কেউ স্বজন দ্বারা বিতাড়িত। কেউ অন্ধ, কারো পা ভাঙা। এ ছাড়া নিপীড়িত, পরিচয়হীন ও অত্যাচারিত কয়েকজনেরও ঠাঁই মিলেছে এখানে। তাঁদের মধ্যে মানসিক সমস্যাজনিত দুজন গর্ভবতীকে আনার পর এখানে সন্তান হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মেয়ে ও আরেকজনের ছেলে হয়েছে। ওই শিশুদের বয়স এখন এক বছরের বেশি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আশ্রিত ও তাঁদের তদারকিতে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে আসা প্রতিটি মানুষের জীবনে রয়েছে করুণ গল্প। তাই তাঁরা এই আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমকেই জীবনের শেষ ঠিকানা হিসেবে আপন করে নিয়েছেন। তাঁদের কেউ লোক মারফত এখানে এসেছেন। কেউ আবার এসেছেন পুলিশ কিংবা র‌্যাবের মাধ্যমে রাস্তার পাশ থেকে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কথা হয় ৯৮ বছরের সখিনা বিবির সঙ্গে। তিনি বললেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় তাঁর জন্মস্থান। ছোটবেলায় মা-বাবা মারা যান। পরে কিছু স্বজন ও মানুষজন লালন-পালন করে। এরপর বিয়ে দেন। বিয়ের পর ভালোই কাটছিল সংসার। স্বামীও একসময় মারা যান। স্বামীর বাড়িতেও আর ঠাঁই মেলেনি। এর পরই নিঃসন্তান ও ভাই-বোন, মা-বাবাহীন  সখিনার জীবনে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। কাজ শুরু করেন মানুষের বাসাবাড়িতে। এভাবে এক পর্যায়ে এসে বয়সের ভারে আর কুলাতে না পেরে, স্বজনদের কাছে ঠাঁই না মেলা প্রায় চোখের আলোহীন এই নারীর অবশেষে আশ্রয় মেলে এই বৃদ্ধাশ্রমে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রায় দেড় বছর ধরে এখানে থাকছেন সখিনা বিবি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ডাইন চোখে কিছুই দেহি না, বাম চোখে ঝাইপসা ঝাইপসা দেখি একটু-আধটু। এভাবে ঠাহর করে চলি। ৪০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। এর পর থেকে এক্কের পর এক ভর আসতেই থাকে আমার জীবনে। এখন আর কী করমু, এহানে আছি, ভালো আছি। তারা অনেক আদর-যত্ন করে। নামাজ ও তসবি পইরা মৃত জামাই আর তাগো (স্বেচ্ছাসেবী) লাইগা দোয়া করি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আশ্রিতদের সেবা করেন যাঁরা : আশ্রয়</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নেওয়া মা-বোনদের সেবা-যত্ন দেন ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী। তাঁরা আশ্রিতদের </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বলে সম্বোধন করেন। এখানে কারো মৃত্যু হলে নেওয়া হয় দাফনের ব্যবস্থা। এ পর্যন্ত শতাধিক বৃদ্ধা মারা গেছেন। তাদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা তাঁরাই করেছেন। বেশির ভাগকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া একজন এমবিবিএস ডাক্তার বৃদ্ধাদের রীতিমতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তবে হাসপাতালে নিতে কিংবা কারো মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের সময় অ্যাম্বুল্যান্সের সংকট রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যেভাবে যাত্রা শুরু : প্রতিষ্ঠানটির</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> স্বপ্নদ্রষ্টা সৈয়দা সেলিনা হক শেলী একজন সমাজকর্মী। কাজ করতে গিয়ে দেখেন, অসহায়-নিপীড়িত মহিলারা তাঁর কাছে আশ্রয় চান। এভাবে এই সংখ্যা এক পর্যায়ে ১০ জন হয়ে যায়। পরে ২০১০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রবীণদের জন্য প্রত্যাশিত জীবন চাই</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> শিরোনামে অসহায় বয়স্ক নারীদের জন্য যাত্রা শুরু আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বছরখানেক আগে ভাড়া ভবন থেকে নিজস্ব ভবনে আসে এই বৃদ্ধাশ্রম। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেভাবে অনুদান আসে : সেলিনা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হক শেলী কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছোটখাটো দাতা ছাড়া আমাদের বেশির ভাগ সহায়তা একেক দিন একেকজন করেন। আগে ভাড়া ভবনে চলছিল আমাদের কার্যক্রম। সেখানে অনেকটা ঠাসাঠাসি করেই তাঁদের রাখতে হতো। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মানুষের অনুদান এবং একজন ব্যবসায়ী এই ভবন করে দেওয়ার পর এখানে আসতে পেরেছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>