কোথাও যোগাযোগের জন্য রাস্তা, কোথাও ফসল রক্ষা বাঁধ, কোথাও অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করে হাওরাঞ্চলের নদ-নদী ও খাল খুন করা হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নামছে বর্ষাকালে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে সড়ক বা বাঁধ নির্মিত হওয়ায় এবং জলবায়ুগত পরির্তনের কারণে হাওরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বর্ষাকালীন পানি নিষ্কাশন। আঘাত এসেছে হাওরের জীবন-জীবিকা ও জীববৈচিত্র্যের ওপরও।
এতে নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বন্ধ হয়ে যাওয়া নদ-নদী ও খালগুলো। পরিবেশবিদ, কৃষিবিদ ও স্থানীয় অভিজ্ঞ কৃষকরা বলেছেন, বাঁধের বদলে রাবার ড্যাম দেওয়া হলে নদী ও খাল রক্ষা হবে। হাওরের নদ-নদীর এই অবস্থায় গবেষকরা সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার কাজে লাগানোর আহবান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, গোলাবাড়ি ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় পাটলাই নদীর সংযোগ খাল খালগাঙে বিশাল বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
বাঁধটি গুরমার হাওরের ফসল রক্ষা করে বললেও এই নদীর দক্ষিণ তীরে আলাদাভাবে বাঁধ রয়েছে। এর পূর্বে নজরখালীতেও স্থায়ী বাঁধ রয়েছে। এখানে বাঁধ দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানালেন কৃষকরা।
উথারিয়া নদী হয়ে একসময় পানি মহাসিং নদীতে নামত।
কৃষকরা জানালেন, উথারিয়া নদীটির ধারা বড়দই বিলসংলগ্ন খালের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দেখার হাওরের পানি নিষ্কাশনের খালটি স্বাধীনতার পর স্থায়ী বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে সুরমা নদীর ওপর পাহাড়ি ঢলের একক চাপ তৈরি হয়েছে।
২০১২ সালে তাহিরপুর উপজেলার কালাগাঙ নদীতে বাঁধ দেওয়ার পর স্থায়ী দোকানপাট ও বাসাবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এই উপজেলার মনাই ও সরমরা নদীও বাঁধ দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
এভাবে অগুনতি নদী, খাল সড়ক, বাঁধ ও নানা স্থাপনায় স্থায়ী ভরাট করা হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘অপরিকল্পিত বাঁধ, রাস্তাঘাট ও উন্নয়ন অবকাঠামো এখন হাওরের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। হাওরে জোরপূর্বক এমন উন্নয়ন নিতে চাচ্ছে না প্রকৃতি। এ কারণে বর্ষাকাল বন্যা হয়।’
উন্নয়ন পরামর্শক ও অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, ‘হাওরের নদ-নদী, খালগুলো পলি, অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত বাঁধ, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সংকটে পড়েছে।’