সারা জীবন যে সুর-সংগীতের আরাধনা করে গেলেন, তা দিয়েই শেষ বিদায় জানানো হলো সন্জীদা খাতুনকে। চোখে জল, হাতে ফুল নিয়ে সংস্কৃতিজন, সহযোদ্ধা, সহকর্মী, শিক্ষার্থী, গুণমুুগ্ধ—সবাই বিদায় জানালেন পরম শ্রদ্ধায়। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে নিবিড় পরিচর্যায় যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, সেই ছায়ানটের আঙিনা হয়ে নিজের কর্মক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অসংখ্য শোকাতুর মানুষ সন্জীদা খাতুনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংস্কৃতি সাধনার এই মহীরুহকে তাঁরা বিদায় জানান, রবীন্দ্রনাথের গান ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,/এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে’ গাইতে গাইতে।
গতকাল বুধবার সন্জীদা খাতুনের প্রতি সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নেমেছিল। দুপুর ১২টার পর মরদেহ ধানমণ্ডির ছায়ানট ভবনের উঠানে রাখা হয়। সেখানে সকাল থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন অসংখ্য মানুষ। সারিবদ্ধভাবে ফুল নিয়ে এগিয়ে যান শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের চেনা-অচেনা মানুষেরা।
ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের কয়েক তলা ভবনের সিঁড়ি, বারান্দা ও উঠানে দাঁড়িয়ে তাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ সময় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সবাইকে নিয়ে গান গেয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম, শাহীন সামাদ, অদিতি মহসিন, লাইসা আহমেদ লিসা, পার্থ তানভীর নভেদ, রুচিরা তাবাসসুমসহ আরো অনেকে। ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’, ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’, ‘মারের সাগর পাড়ি দেব’, ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে মূল হারাবি’সহ কয়েকটি গান ধীরলয়ে সমস্বরে গান সবাই। ‘আগুনের পরশমণি’ ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে ছায়ানটে ঘণ্টাখানেকের এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে ছায়ানটের সহসভাপতি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, ‘রমনার বটমূলে এখন যে বর্ষবরণ কোটি বাঙালির আবেগের জায়গা নিয়েছে, তার পেছনের মানুষটি সন্জীদা খাতুন। পহেলা বৈশাখের যে আয়োজন বিশাল আয়োজনে রূপ নিল, এর পেছনে কাজ করেছেন তিনি।’ এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে সন্জীদা খাতুনের মরদেহ ছায়ানট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলা বিভাগ থেকে দুপুর আড়াইটায় তাঁর কফিন নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
সেখানেও গানে গানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে শেষ বিদায় জানান। সেখান থেকে মরদেহ আবারও হাসপাতালের হিমঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
সন্জীদা খাতুনের নাতি-নাতনিসহ স্বজনদের অনেকে বিদেশে রয়েছেন। তাঁরা দেশে আসার পর অন্য আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন সন্জীদা খাতুনের সন্তান পার্থ তানভীর নভেদ।