ক্রীড়া প্রতিবেদক : মানসম্মত পারফরম্যান্সে কেউ কেউ দূরত্বটা কমিয়ে নিচ্ছেন। আবার মানহীনতা কারো কারো জন্য সেটিকে যোজন যোজন বাড়িয়েও দিচ্ছে। দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সাম্প্রতিক উপস্থিতি পর্যালোচনায় বোলার আর ব্যাটারদের মধ্যে বিস্তর এই ফারাকই খুঁজে পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন।
বাইরের লিগে দেশের ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়লেও যে সেখানে ব্যাটারদের চাহিদা তৈরি হতে দেখেননি তিনি।
এই মৌসুমেই যেমন তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে আছেন বা থাকছেন বাংলাদেশের সাত ক্রিকেটার। এই মুহূর্তে লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) খেলছেন তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাওহীদ হৃদয় ও শরিফুল ইসলাম। তাওহিদ ও মুস্তাফিজ খেলছেন একই দল ডাম্বুলা সিক্সার্সের হয়ে। কলম্বো স্টাইকার্সে আছেন তাসকিন। আর টুর্নামেন্ট শুরুর পর পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলীর পরিবর্তে ক্যান্ডি ফ্যালকনস দলে ভিড়িয়েছে আরেক পেসার শরিফুলকে।
এরপর আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগে লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলবেন সাকিব আল হাসান। এই টুর্নামেন্ট শেষে কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও দেখা যাবে এই অলরাউন্ডারকে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।
সুযোগ পাওয়া এই ক্রিকেটাররা যেন বাংলাদেশ দলের সামপ্রতিক পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবিই। সাত ক্রিকেটারের মধ্যে তাওহীদ ছাড়া বাকিদের পরিচয় বোলার না হয় অলরাউন্ডার। চাহিদায় বোলারদের এগিয়ে থাকাই স্বাভাবিক। কারণ কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়িয়েছেন তাঁরাই। সদ্যঃসমাপ্ত বিশ্বকাপের দিকে তাকালেও হচ্ছে। সেরা ১৫-তে আছেন বাংলাদেশের দুজন, পাঁচে রিশাদ ও ১৩ নম্বরে তানজিম হাসান সাকিব।
তাঁদের মধ্যে শরিফুল বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি একটিও। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত দেড় বছর স্বপ্নের মতো কাটানোর পুরস্কারই হিসেবেই ডাক এসেছে তাঁর। ব্যাটারদের ডাক না পাওয়ার কারণ হিসেবে অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সকেই দায়ী করলেন মিনহাজুল। এই সাবেক প্রধান নির্বাচক বলছিলেন, “কাকে দলে নিয়ে কোথায় খেলাবে, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সে পরিকল্পনা থাকে। সেখানে তারা হয়তো আমাদের ব্যাটারদের উপযুক্ত মনে করছে না। আর টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ব্যাটারদের পারফরম্যান্সও ‘আপ টু দ্য মার্ক’ নয়। সে জন্যই হয়তো দল পাচ্ছে না।” দলে দলে বোলারদের সুযোগ পাওয়ার কারণও সেই পারফরম্যান্সই, ‘আমাদের বোলাররা যে ভালো করছে, এটি তো সবাই দেখছে। পারফরম করায় ওদের চাহিদাও বাড়ছে।’
একই মত ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমেরও, ‘বোলিং ইউনিট হিসেবে আমরা যে ভালো করছি বা ভালো একটা অবস্থানে আছি, এটি তার বড় প্রমাণ। বিশ্বকাপেও আমাদের বোলারদের পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বোলিং গ্রুপ হিসেবে আমরা যথেষ্ট ভালো এখন। শরিফুলের সুযোগ পাওয়া সেটিই প্রমাণ করে। বিশ্বকাপে সে একটা ম্যাচও খেলেনি। কিন্তু গত এক-দেড় বছর শরিফুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নজরকাড়া বোলিং করেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চোখ রাখে।’ অন্যদিকে মানহীন ব্যাটিংয়ের ছবিও দেখেন তিনি, ‘এখন এত এত আসরের মধ্যেও মাত্র একজন ব্যাটারের সুযোগ পাওয়া প্রমাণ করে আমাদের ব্যাটিং বিভাগের দৈন্যতা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ছাপ ফেলা সে রকম ব্যাটারই তো নেই।’