পারভেজ হোসেন যা চাচ্ছিলেন, ঠিক তাই হচ্ছিল! দিনটাই যেন বাঁহাতি ওপেনারের জন্য বরাদ্দ ছিল। তা না হলে লিস্ট ‘এ’ তো বটেই, স্বীকৃত ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়ার পথে শেষ দুটি শটেই ব্যাট মুঠো ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুবারই বল উড়ে গেছে সীমানার ওপারে। এই শেষ দুই ছক্কায় রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম লিখে নিয়েছেন পারভেজ।
শাইনপুকুরের বিপক্ষে জেতার জন্য আবাহনীর দরকার ছিল মামুলি ৮৯ রান। তা তাড়া করতে গিয়ে পারভেজের ব্যাটে প্রলয়নাচন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ঝড়ের পূর্বাভাস দেন। অফ স্পিনার রহমতউল্লাহ আলীর প্রথম বল ডট।
পরের পাঁচ বল থেকে পারভেজ নেন ২৮ রান। চার দিয়ে শুরুর পর টানা চার ছক্কা। এরপর ছক্কা মেরেছেন আরো দুটি, চার তিনটি। সব মিলিয়ে ১৫ বলে ফিফটি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু বিপিএলে তাঁর করা ৪২ বলের সেঞ্চুরিটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম। এবার ওয়ানডে সংস্করণের দ্রুততম ফিফটির সঙ্গেও জুড়ে গেল তাঁর নাম। ব্যাটিংটা যে উপভোগ করছেন, গতকাল ম্যাচ শেষে বাসায় ফেরার পথে টেলিফোনে জানালেন পারভেজ, ‘অবশ্যই অনেক বড় অর্জন আমার জন্য। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেরও। অনেক ভালো লাগছে। ব্যাটিংটা উপভোগ করছি। ওভাবেই খেলার চেষ্টা করছি।’
ইনিংসটি পারভেজের অনুপ্রেরণার অংশও হয়ে গেছে, ‘এমন ইনিংস খেলতে পারা অবশ্যই ভালো অনুভূতি দেয়, অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।’ তবে আড়াই শর বেশি স্ট্রাইক রেটের এই ইনিংস দিয়ে নিজেকে মাপেন না পারভেজ। ৪৭৪ রান করে চলতি ডিপিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই ব্যাটার জানিয়েছেন সেই কথা, ‘আমি এবার ও রকম আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি না। পরিস্থিতি বুঝে সময় নিয়ে খেলার চেষ্টা করছি। আজ (গতকাল) সহজ সমীকরণ ছিল বিধায় সুযোগটা নিয়েছি। বেশির ভাগ ম্যাচে আমার স্ট্রাইক রেট ৯০-৯৫ এর মধ্যে থাকছে। ম্যাচের আবহ, দলের অবস্থা—এসব বুঝে এখন খেলার চেষ্টা করছি।’
ব্যাটে ধারাবাহিকতায় পারভেজের ম্যাচ পরিকল্পনায় পরিবর্তন স্পষ্ট। আগ্রাসী ক্রিকেটের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসাও ওই ধারাবাহিকতার জন্য, ‘আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে ধারাবাহিক হওয়া একটু কঠিন। দুই-একটা ইনিংস ও রকম হতে পারে। তাই আমি চেষ্টা করছি পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলে ধারাবাহিক হওয়ার।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের এই ক্রিকেটারকে নিয়ে স্বপ্নের ঘুড়ি আকাশে উড়েছিল। কিন্তু সময় নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে পারভেজকে। যুবদলের অনেকে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে গেলেও এখনো থিতু হতে পারেননি তিনি। সাতটা টি-টোয়েন্টি অবশ্য খেলেছেন। তবে ২২ বছর বয়সী পারভেজও বড় স্বপ্ন দেখেন, ‘পিছিয়ে পড়িনি। আমার মনে হয় আমি শুধু বিপিএলটা নিয়মিত খেলতে পারিনি। যার কারণে ব্যাপারটা ও রকম মনে হচ্ছে। সুযোগ পেলে আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ছিলাম। কিন্তু ম্যাচ খেলা হয়নি। ওটা নিয়ে হতাশ না। দলের কম্বিনেশনের ব্যাপার ছিল। সামনে যখন সুযোগ আসবে, ভালো কিছুর আশা আছে।’ পারভেজের আশার পালে নতুন করে হাওয়া দেবে গতকালের বিস্ফোরক ইনিংসটি।