<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ দেশে দুর্নীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। বরং অনেক আগে থেকেই তা চলে আসছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশকে কি একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর মোটাদাগে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে বর্তমান সরকারসহ সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত হলে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে যা কিছু করণীয়, তা বাস্তবায়িত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে আইডিবি, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘদিন ধরে সব সরকারকেই দুর্নীতি হ্রাস করার উপায় হিসেবে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। টিআইবিও বিভিন্ন সময়ে সভা, সেমিনার ও রিপোর্টের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে নানাভাবে বিগত সব সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন একটা হয়নি। অর্থাৎ দেশ এখন পর্যন্ত দুর্নীতিমুক্ত হতে পারেনি। যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেবা খাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে। গত ৩ ডিসেম্বর টিআইবির প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাসপোর্ট সেবা নিতে গিয়ে গত বছর দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। সেবা খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় বিচারিক সেবা নিতে গিয়ে। এরপর ভূমি, ব্যাংকিং, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সেবায় ক্রমানুসারে বেশি ঘুষ দিতে হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বলা বাহুল্য, দেশে যতগুলো সমস্যা জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়াচ্ছে; দুর্নীতি তার মধ্যে একটি। জনসংখ্যাধিক্য ও ক্ষুদ্র আয়তনের এ দেশটিতে দারিদ্র্য ও সম্পদের অভাবের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি রয়েছে। টিআই ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্নীতির ওপর জরিপ চালিয়ে যে ফলাফল প্রকাশ করেছিল, তাতে পর পর টানা পাঁচ বছরেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে গত বছর ১৬টি পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগের জন্য পৃথক, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নিয়োগ বোর্ড এবং স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস গঠন করাসহ ১৬টি পরামর্শ বাস্তবায়ন করলে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের (রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রম) আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা যদি দুর্নীতিমুক্ত হন, তাহলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয় বলেও আশা ব্যক্ত করেছিলেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি প্রতিরোধে গত বছর ৭ নভেম্বর এক পূর্ণাঙ্গ রায়ের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে হাইকোর্টও ১৬ পরামর্শ দেন। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা যদি দুর্নীতিমুক্ত হন, তাহলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয় বলে ওই রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করলেও সমাজে দুর্নীতি বিদ্যমান থাকায় জনগণ এর সুফল পরিপূর্ণভাবে পাচ্ছে না। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে সব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যথাযথ ব্যবস্থা করা; দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন; সর্বদা দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং দুর্নীতিবিষয়ক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা জরুরি। দুর্নীতি রোধের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংস্কারসহ কার্যকর গবেষণার মাধ্যমে দুর্নীতির প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও তা দূর করতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি। তা ছাড়া গণাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়া; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় সম্পৃক্ততা বিচ্ছিন্ন করা এবং সর্ব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানোও আবশ্যক। আসুন, সবাই মিলে দুর্নীতিকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">kekbabu@yahoo.com</span></span></span></span></p>