চেয়ারম্যান : এই, তুমি তো অলরেডি ক্যাডার। আবার আসছ কেন?
—স্যার, আমি প্রশাসনে আসতে চাই। (ইতোপূর্বে আমি রেলওয়ে ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছিলাম, কিন্তু যোগ দিইনি। এক্সটার্নাল স্যার আমাকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ওপর ১২-১৩টি প্রশ্ন করলেন।
ড্রোন কিভাবে ওড়ে, স্যাম্পলিং থিওরেম, ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং দিয়ে কিভাবে পাওয়ার সেভিং বাল্ব ও ফ্রিজ কাজ করে—এ ধরনের প্রশ্ন। ৫-৬টি প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে পেরেছিলাম।)
এক্সটার্নাল-২ : বলো তো ‘গিনি সহগ’ কী?
—স্যার, কোনো দেশের ধনী ও গরিবের আয়বৈষম্য মাপার একটি সূচক হলো ‘গিনি সহগ’।
বাংলাদেশে এর মান কত?
—স্যার, ১.৪৯!
গিনি সহগের মান ১-এর চেয়ে বড় হয়?
—স্যরি স্যার, ০.৪৯ হবে।
বলো, গিনি সহগের মান বেশি হওয়া ভালো, নাকি কম হওয়া ভালো?
—স্যার, কম হওয়া ভালো। শূন্য হলে সবচেয়ে ভালো। গিনি সহগের মান শূন্য মানে ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য নেই।
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কী?
—স্যার, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এই নীতিতে যে উন্নয়ন সেটা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।
এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া একদম প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়।
উন্নয়ন কাকে বলে?
—স্যার, আমি উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না এই মুহূর্তে। তবে কিছু ডাইমেনশন বলতে পারি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হতে পারে, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, শিক্ষা, প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতেও উন্নয়ন হতে পারে।
আমি আপনার কাছে উদাহরণ জানতে চাইনি, সংজ্ঞা বলুন।
—স্যার, মানুষের জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনকেই উন্নয়ন বলে।
ইতিবাচক পরিবর্তন মানে কী? আগে মানুষ ভাত কম খেত, এখন বেশি খায়?
(এক্সটার্নাল-২ স্যার আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে চেয়ারম্যান স্যারকে প্রশ্ন করতে অনুরোধ করেন।)
চেয়ারম্যান : তোমার ক্যাডার পছন্দক্রমের প্রথম ৫টির নাম বলো।
—প্রশাসন, কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ, ট্যাক্সেশন, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস, রেলওয়ে।
তুমি রেলওয়ে ছেড়ে প্রশাসনে আসতে চাচ্ছ! ধরো, তোমাকে একটি উপজেলার ইউএনও বানিয়ে দিলাম। তুমি এখন কী করবে সেই উপজেলার জন্য?
—স্যার, এই প্রশ্নের উত্তর আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার বাড়ি শহর থেকে বেশ দূরে। আমি দেখেছি যে সন্ধ্যার পরে আমার মা কিংবা বোন কোথাও যেতে চাইলে তারা হয় সঙ্গে করে আমাকে নিয়ে যায়, নইলে আমার ভাই কিংবা বাবাকে নিয়ে যায়। তারা রাতে বাইরে নিরাপদবোধ করে না। আমি ইউএনও হলে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করব, স্যার।
সবাই বলে ইউএনও হলে অনেক ক্ষমতা, গাড়ি-বাড়ি পাওয়া যায়। এসব পেয়ে গেলে কি তোমার নারীদের নিরাপত্তার কথা মনে থাকবে?
—(খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলি) আমার কাছে ‘জাতীয় স্বার্থ’ ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে, স্যার।
বলো তো—ডিসি, ইউএনও তাঁরা কোন মন্ত্রণালয়ের অধীন?
—স্যার, ডিসি, ইউএনও তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীন নন। এরা কেবিনেট ডিভিশনের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা ও উপজেলায় রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
বলো তো, সুখ কাকে বলে?
—সুখ একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। যেটা আমার কাছে সুখ, সেটা আপনার কাছে দুঃখের কারণও হতে পারে!
(স্যার আরো কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেন। আমাকে বিরক্তির সুরে বের হয়ে যেতে বললেন এবং বললেন, যাতে বেশি বেশি চিন্তা করি আর বই পড়ি। মন খারাপ নিয়ে আমি বের হয়ে আসি। সেদিন আমার আগে আটজন ভাইভা দিয়ে খুব হাসিখুশিভাবে বের হয়েছিল। ভেবেছিলাম কোনো ক্যাডার পাব না এবার। পরে ফল প্রকাশের পর দেখি, প্রশাসন ক্যাডারে মেধাক্রমে সপ্তম হয়েছি।)