বছর ঘুরে আবারও ঈদুল ফিতর চলে এসেছে। আগামীকাল সোমবার (৩১ মার্চ) দেশজুড়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। সবাই চায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। সড়কপথে যাত্রা করতে গিয়ে প্রতি ঈদেই বিপাকে পড়েন উত্তরবঙ্গগামী মানুষ।
তবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে এবার নেই চিরচেনা সেই যানজট-ভোগান্তি। স্বস্তিতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে মানুষ।
আজ রবিবার (৩০ মার্চ) উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।
এ মহাসড়ক দিয়ে ২৩ জেলার যানবাহন চলাচল করে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের সুবিধা নিয়ে চলাচল করতে পারছে। তাই যানজটে পড়তে হচ্ছে না। এর আগে ঢাকা থেকে চার লেন সড়ক ব্যবহার করে যানবাহন এলেঙ্গা পর্যন্ত আসত।
এরপর থেকে যেতে হতো দুই লেন সড়কে। এতে সৃষ্টি হতো যানজটের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাগামী যাত্রীবাহীগুলো ফাঁকা। আর উত্তরের পথে যাত্রীরা দূরপাল্লার বাস ছাড়াও লোকাল বাস ও লেগুনায় গাদাগাদি করে বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি ট্রাক কিংবা বাসের ছাদেও যাচ্ছেন।
প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংখ্যাও অনেক। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত এলাম, কোনো যানজট পাইনি। স্বস্তিতেই বাড়ি যাচ্ছি।’
লায়লা আক্তার যাচ্ছেন ধনবাড়ীতে। তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। কিছুই করার নেই। ঈদ বলে কথা।’
ময়মনসিংহ থেকে বগুড়াগামী হামিদুর রহমান এলেঙ্গা বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। গাড়ি পাচ্ছি না। ভাড়া দ্বিগুণ চাচ্ছে।’
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বগুড়াগামী বাসচালক দেলোয়ার হোসেন এলেঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে বলেন, ‘টাঙ্গাইল অংশে যানজট নেই। তবে গাজীপুরের দিকে কিছুটা চাপ আছে।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতি প্রান্তে ৯টি মোট ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে। মোটরসাইকেলের টোল পৃথক লেন রয়েছে। তাই সেতু এলাকায় টোল দিতে গিয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেতুতে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ এবং দুর্ঘটনার ফলে রবিবার সকালে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রতিদিন গড়ে সেতু দিয়ে ১৮/২০ হাজার যান চলাচল করলেও ঈদে এর সংখ্যা ২ থেকে ৩ গুন বৃদ্ধি পায়।’
তিনি জানান, যমুনা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (৩০ মার্চ) একদিনে ৪৫ হাজার ৪৭৮টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয় ৩ কোটি ২১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। টাঙ্গাইল আংশের উত্তরবঙ্গগামী লেন দিয়ে ২৯ হাজার ২৮৮টি যানবাহনে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ টাকা। সিরাজগঞ্জ অংশের সেতু পশ্চিম প্রান্তে ঢাকাগামী লেন দিয়ে ১৬ হাজার ১৯০টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৩১ লাখ ১৮ হাজার ৮৫০ টাকা।
এ ছাড়া ঈদযাত্রার ৫ দিনে (২৫ মার্চ-২৯ মার্চ) যমুনা সেতু দিয়ে মোট ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৫০ টাকা।
মহাসড়কে দায়িত্বপালনরত কালিহাতী থানার ওসি আবুল কালাম ভূইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও কোনো যানজট নেই। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সদা তৎপর। ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন।’
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘মানুষকে স্বস্তি দিতে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটারে নিরলস কাজ করছেন। আশা করি অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবারের ঈদ আনন্দময় হবে।’
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, ‘মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনী ও র্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ সার্বক্ষণিক করে যাচ্ছেন।’