শাইখুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ
মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ
শেয়ার
শাইখুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম
মাজাহিরে উলুম সাহারানপুর মাদরাসা, উত্তর প্রদেশ ভারত।

শায়খুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর ক্ষণজন্মা আলেমদের অন্যতম। ভারতবর্ষে হাদিস ও ফিকহ চর্চায় উজ্জ্বল তারকা ছিলেন তিনি। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ছিলেন তাঁর আপন চাচা। মাওলানা জাকারিয়া (রহ.) মুসলিম বিশ্বে বহুল পঠিত ‘ফাজায়েলে আমাল’সহ হাদিসের বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন।

ফাজায়েলে আমালের মতো গ্রন্থ রচনা করায় তাঁকে তাবলিগের নেসাবপ্রণেতা বা পাঠক্রম রচয়িতা বলা হয়।

জন্ম ও পড়াশোনা : মুহাম্মদ জাকারিয়া ১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের কান্দলায় সম্ভ্রান্ত দ্বিনি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া (রহ.)। বাবার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি।

দ্বিনদারি, ইলমচর্চাসহ ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্নতা ছিল সম্ভ্রান্ত এই বংশের প্রধান বৈশিষ্ট্য। শৈশবেই পবিত্র কোরআন হিফজ করা ছিল তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য। শৈশবে বাবার অনুশাসন ও পড়াশোনা নিয়ে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আপবিতি’-কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন। গাঙ্গুহে পিতার মাদরাসায় ১০ বছর প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করে ১৯১০ সালে তিনি মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুর মাদরাসায় ভর্তি হন।
এখানে পাঁচ বছর থাকা অবস্থায় দরসে নিজামির সব কিতাব তিনি পড়ে ফেলেন। এ সময় পিতার তত্ত্বাবধানে হাদিসের প্রসিদ্ধ ছয়টি গ্রন্থ পড়েন। পাশাপাশি জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা খলিল আহমেদ সাহারানপুরি (রহ.), মাওলানা ইলিয়াস (রহ), মাওলানা জাফর আহমদ উসমানি (রহ.)-এর কাছেও হাদিসের গ্রন্থগুলোর পাঠ গ্রহণ করেন।

কর্মজীবন : ১৩৩৫ হিজরি মোতাবেক ১৯১৫ সালে সাহারানপুর মাদরাসায় পড়শোনা শেষ করে সেখানেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী।

১৩৮৮ হিজরি মোতাবেক ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৩ বছর তিনি শিক্ষকতা করেন। এই সময় তিনি কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি।

জ্ঞান সাধনার উপমা : মাওলানা জাকারিয়া (রহ.) ছিলেন ইলম অর্জনের উপমাতুল্য ব্যক্তিত্ব। মাত্র এক-দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে রাত-দিন ইলমচর্চায় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। তা ছাড়া সময়ের যথাযথ ব্যবহারে তিনি খুবই যত্নশীল ছিলেন। তিনি খেলাধুলা, আনন্দ-বিনোদন বা এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতেন। তবে তিনি কাব্য প্রতিযোগিতায় ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

রচনাবলি : মাওলানা জাকারিয়া (রহ.) হাদিস ও ফিকহ চর্চার পাশাপাশি কিছু অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি তিন খণ্ডের ‘আলফিয়াতুল হাদিস’-সহ ৩০টির বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, তাবলিগ জামাতের বহুল পঠিত ফাজায়েলে আমাল, মুয়াত্তা মালিকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওজাজুল মাসালিক (আরবি), শামায়েলে তিরমিজি-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ খাসায়েলে নবুওয়াহ (উর্দু), লামিউদ দারারি আলা জামিউল বুখারি, হাজ্জাতুল উইদা ওয়া ওমরাতিন নবি ইত্যাদি।

পারিবারিক জীবন : পিতার মৃত্যুর পর অসুস্থ মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করে মাওলানা রউফুল হাসানের মেয়ের সঙ্গে মাওলানা জাকারিয়া (রহ.)-এর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১৩৩৫ হিজরিতে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর ১৩৫৫ হিজরিতে দীর্ঘদিন সংসারিক জীবনযাপনের পর তাঁর স্ত্রী মারা যান। এরপর ১৩৫৬ হিজরিতে চাচা মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর মেয়ে ইউসুফ (রহ.)-এর বোন আতিয়্যাহর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। 

মদিনায় গমন : ১৩৩৮ হিজরিতে মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরি (রহ.)-এর সফরসঙ্গী হয়ে প্রথমবার হজ পালন করেন। এরপর আরো অনেকবার তিনি পবিত্র হজ পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ১৪০২ হিজরি মোতাবেক ১৯৮২ সালে মদিনায় এসে মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। 

ইন্তেকাল : ১৯৮২ সালের ২৮ মে সৌদি আরবের মদিনা নগরীতে ইন্তেকাল করেন। সেখানের জান্নাতুল বাকিতে নিজ শিক্ষক ও পীর আল্লামা খলিল আহমদ সাহরানপুরি (রহ.)-এর পাশে দাফন করা হয়। তাঁর জানাজা পড়ান মসজিদ-ই-নববীর ইমাম আবদুল্লাহ জাহিম।

সূত্র : সাইয়েদ আবুল হাসান নদবি (রহ.) লিখিত ‘মুহাম্মদ জাকারিয়া আল-কান্দলবি ওয়া মাআসিরুহু আল-ইলমিয়্যাহ’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যাত্রাপথে নামাজের সময় হলে যেভাবে পড়বেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যাত্রাপথে নামাজের সময় হলে যেভাবে পড়বেন

আল্লাহ মুমিন নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন। মুমিনের দায়িত্ব হলো যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)

আর নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের কথা হাদিসেও এসেছে।

এ বিষয়ে অবহেলা করলে জাহান্নামের হুমকি এসেছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলার কারণে এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪২০)

সফরকালে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত। তা হলো- 

এক. চলন্ত জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে নামাজ ‍পড়া

চলন্ত লঞ্চ, জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে ফরজ নামাজ সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাসহ আদায় করবেন।

দাঁড়ানো যদি কষ্টকর হয়, তাহলে বসে স্বাভাবিক রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করবেন। এভাবে নামাজ আদায় করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা পুনরায় পড়তে হবে না। 

দুই. অপারগ হলে ইশারায় পড়া এবং পরবর্তীতে কাজা করা 

আর যদি কেবলামুখী হয়ে রুকু-সিজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ পড়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে সতর্কতামূলক ওই ফরজ নামাজ পরবর্তী সময়ে আবার পড়ে নেবেন। 

তিন. পারলে যানবাহন থেকে নেমে নামাজ পড়া

আর বাসে যেহেতু সাধারণত দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়া যায় না, তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে গন্তব্যে পৌঁছে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে না বলে মনে হলে এবং নেমে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অসুবিধাজনক না হলে পথিমধ্যে নেমে ফরজ নামাজ পড়ে নেবেন।

চার. নামা সম্ভব না হলে ইশারায় পড়া ও পরে কাজা করা

আর দূরের যাত্রা হলে অথবা যে ক্ষেত্রে নেমে গেলে ঝুঁকি অথবা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে সে ক্ষেত্রে বাস না থামলে সিটেই যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ আদায় করে নেবেন এবং সতর্কতামূলক পরবর্তী সময়ে এর কাজা করে নেবেন।

পাঁচ. নামাজের জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া

উল্লেখ্য, দীর্ঘ যাত্রায় বাসচালকদের উচিত ফরজ নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে কোনো মসজিদে যাত্রাবিরতি করা। এ বিষয়ে বাস মালিকদেরও ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়ে রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতিগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যাত্রীদের কর্তব্য হলো, বাসের একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে চাইলেও তার জন্য বাস থামাতে চালককে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।(তথ্যসূত্র : ইলাউস সুনান : ৭/২১২; মাআরিফুস সুনান : ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/১০১)।

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫

আজ বুধবার ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৬ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৯ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৯ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৪ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৩৫ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪৯ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

লঞ্চে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
লঞ্চে নামাজ আদায় করা যাবে কি?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : লঞ্চ বা জাহাজ ঘাটে ভিড়ে থাকা অবস্থায় তাতে ফরজ নামাজ আদায় করা যাবে কি? এ অবস্থায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করা আবশ্যক কি না?

- খোরশেদ আলম, বরিশাল

উত্তর : লঞ্চের কোনো অংশ জমি স্পর্শ অবস্থায় থাকলে লঞ্চে নামাজ পড়তে আপত্তি নেই; অন্যথায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করতে হবে। (হিন্দিয়া : ১/১৫৮, নূরুল ঈজাহ : ৯৯)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

নিজেই নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার বিধান কী?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
নিজেই নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার বিধান কী?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : কোনো স্বপ্ন দেখে নিজেই অনুমানের ভিত্তিতে তার ব্যাখ্যা করার বিধান কী?

-আতিক, মিরপুর।

উত্তর : স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিজে বুঝতে পারলে কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। তা না হলে অভিজ্ঞ দ্বিনদার হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/৫২৭)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ