ইসলাম জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম। মানবজীবনের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়ে ইসলামে পূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। যেসব বিষয় মানুষের জন্য উপকারী তা করতে ইসলাম নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। যেমন—হাঁটা।
ইসলাম জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম। মানবজীবনের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়ে ইসলামে পূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। যেসব বিষয় মানুষের জন্য উপকারী তা করতে ইসলাম নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। যেমন—হাঁটা।
হাঁটার শক্তি আল্লাহর দান
আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে মানুষসহ কিছু প্রাণীকে হাঁটার শক্তি দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সব জীব সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন।
হেঁটে চলতেন নবীজি (সা.)
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রাত্যহিক প্রয়োজনে কোথাও গেলে হেঁটেই যেতেন। এমনকি কিছুটা দূরে গেলেও কখনো কখনো হেঁটে যেতেন। যেমন—হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কুবাতে গমন করতেন সাওয়ার হয়ে বা হেঁটে।
মসজিদ-ই-নববী থেকে প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার দূরে মসজিদে কুবা অবস্থিত।
পথচলা যখন প্রশংসনীয় কাজ
পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে পথচলা বা হাঁটার প্রশংসা করা হয়েছে। মূলত মানুষের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে তার পথচলার বিনিময় কেমন হবে। যেমন—
১. সতর্ক করার জন্য পথচলা : মানুষকে সতর্ক করার জন্য পথচলা প্রশংসনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘নগরীর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসুলদের অনুসরণ কোরো।
২. আল্লাহর স্মরণে পথচলা : যেখানে গেলে এবং যে পথে চললে আল্লাহকে স্মরণ হয়, তা প্রশংসনীয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কোরো, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯)
৩. জীবিকার সন্ধানে পথচলা : আল্লাহ জীবিকার সন্ধানে পথচলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন। অতএব, তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কোরো এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে আহার গ্রহণ কোরো। পুনরুত্থান তো তাঁর কাছেই।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১৫)
হাঁটাহাঁটি ও পথচলা যখন নিন্দনীয়
কখনো পথচলা বা হাঁটা নিন্দনীয়, যখন তা মন্দ উদ্দেশ্যে হয়। যেমন—
১. দোষচর্চা করতে পথচলা : মানুষের দোষ ছড়িয়ে দিতে পথচলা নিন্দনীয়। ‘(অনুসরণ কোরো না) পেছনে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা কালাম, আয়াত : ১১)
২. অহংকার প্রকাশের জন্য : মুমিনের পথচলায় অহংকার ও অহমিকা প্রকাশ পায় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ কোরো না; তুমি কখনোই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭)
ইসলাম যেভাবে হাঁটতে উৎসাহিত করে
ইসলাম মানুষকে হাঁটতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। নিচে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
১. হেঁটে জুমায় অংশগ্রহণ : আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘...যে ব্যক্তি জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয়, বরং হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছে বসে খুতবা শুনবে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর রোজা পালন ও রাতভর নামাজ আদায়ের সওয়াব পাবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
২. আল্লাহর পথে পায়ে ধুলা মাখা : আবু আবস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির দুই পা আল্লাহর পথে ধূলি-ধূসরিত হয়, তা জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১১৬)।
হাদিসে ধূলি-ধূসরিত শব্দটি হাঁটার প্রতি ইঙ্গিত দেয়।
৩. বেশি পথ অতিক্রম করে মসজিদে আসা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকজন মসজিদ-ই-নববীর কাছে এসে ওই খালি স্থানে বসতি স্থাপনের ইচ্ছা করল। মসজিদ-ই-নববীর পাশে কিছু খালি জায়গা ছিল। বিষয়টি নবী (সা.) অবগত হলে তিনি তাদের বললেন, হে বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা! তোমরা তোমাদের বর্তমান ঘরবাড়িতেই থাকো। নামাজের জন্য মসজিদে আসতে তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লিখিত হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৫)
৪. হেঁটে তাওয়াফ করা : ইসলামী শরিয়ত হেঁটে তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কায় আগমন করলেন, তখন তিনি প্রথমে মসজিদে (হারামে) প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন। এরপর এর ডান দিকে গেলেন এবং তিনবার রমল করলেন এবং চতুর্থবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৯৪৯)
৫. সাফা ও মারওয়ায় হাঁটা : হজের গুরুত্বপূর্ণ বিধান সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সায়ি করা তথা হাঁটা। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সাফা থেকে অবতরণ করতেন তখন (স্বাভাবিক) হাঁটতেন, এমনকি তাঁর পদদ্বয় উপত্যকার নিম্নভূমিতে অবতরিত হলে তিনি সায়ি করে তা পার হতেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৯৮১)
৬. লাশের সঙ্গে হাঁটা : একাধিক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা লাশের সঙ্গে হেঁটে কবরস্থানে যেতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের মধ্যম গতিতে পথচলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সুনানে আবি দাউদ, ৩১৮০-৩১৮২)
৭. অন্যের চলার পথ সুগম করা : মুমিন শুধু নিজে হাঁটবে না, বরং অন্যের হাঁটার পথও সুগম করবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তাআলা তার এই কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫২)
আল্লাহ সবাইকে ইসলাম মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।
সম্পর্কিত খবর
পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে মা-বাবার জন্য দোয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তিনটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তা হলো-
ربِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيْنِي صَغِيرًا
উচ্চারণ : রব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সগিরা।
অর্থ : হে আমার রব, তাদের উভয়ের ওপর অনুগ্রহ করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ
উচ্চারণ : রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪১)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
رَّبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيۡتِيَ مُؤۡمِنٗا وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۖ
উচ্চারণ : রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনা, ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ক্ষমা করুন।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰهُ وَ اَصۡلِحۡ لِیۡ فِیۡ ذُرِّیَّتِیۡ ۚؕ اِنِّیۡ تُبۡتُ اِلَیۡکَ وَ اِنِّیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
উচ্চারণ : রাব্বি আওঝিনি আন আশকুরা নিমাতাকাল-ল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা, ওয়া-আন আমালা সালিহান, তারদোহু, ওয়া-আছলিহলি ফি যুররিয়্যিাতি, ইন্নি তুবতু ইলাইকা ওয়া-ইন্নি মিনাল মুসলিমীন।
অর্থ : ‘হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন; আমার জন্য আমার সন্তান সন্ততিদের সৎকর্মপরায়ণ করুন, আমি আপনার কাছে তাওবা করলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত : ১৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় উম্মতের মুক্তি ও নাজাতের চিন্তায় থাকতেন। তাদের সওয়াবের পাল্লা কিভাবে ভারী হয়, সে কথা বাতলে দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা চারটি কাজ বেশি বেশি করো।
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সালমান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চারটি কাজ বেশি বেশি করো।
যে দুটি আমল বেশি বেশি করলে আল্লাহ খুশি হন
এক. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
এটি বেশি বেশি পাঠ করা। এটি আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি আমল।
দুই. ইস্তেগফার
ইস্তেগফার একজন সফল মুমিনের অন্যতম গুণ। মানুষ শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা ও পরিবেশের কারণে গুনাহের কাজে জড়িয়ে থাকে, আর এই গুনাহ থেকে নিজেকে পবিত্র করার বড় মাধ্যম হলো ইস্তেগফার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।
তিন. জান্নাত চাওয়া
জান্নাত মুমিনের চিরস্থায়ী সুখের আবাস। সব মুসলমানের মনের একান্ত আকাঙ্ক্ষা হলো, চির সুখের জান্নাতে প্রবেশ করা। তাই মাহে রমজানের পবিত্র সময়ে আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি জান্নাত প্রার্থনা করা।
চার. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া
যাপিত জীবনে মানুষ যা-ই করুক, কেউ জাহান্নামে যেতে চায় না। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জাহান্নামে যেতে চায়।
আল্লাহ তাআলা নিজেও চান না মানুষ জাহান্নামে যাক। সে কারণে যেসব কাজ জান্নাতের অন্তরায় তা থেকে বেঁচে থাকা, আল্লাহ তাআলার কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা করা।
রমজান হলো, আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি চাওয়ার মাস। আর উপরিউক্ত চার কাজের তিনটিই হলো চাওয়ার। ক্ষমা, জান্নাত, জাহান্নাম, আরেকটি হলো পড়ার—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজান মাসে বেশি বেশি চার আমল করার তাওফিক দান করুন।
রমজান মাস আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও ধৈর্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা পায় অনেকে। বিভিন্ন দেশে এ মাসে ইসলাম গ্রহণ করেন অনেকে। তেমনি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের একটি মসজিদে রমজানের প্রথম দিনে একসঙ্গে ১৭ তরুণ-তরুণী ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
গত ৫ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানায় কোরিয়া মুসলিম ফেডারেশন।
কোরিয়া মুসলিম ফেডারেশন জানায়, গত ১ মার্চ পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে সিউল সেন্ট্রাল মসজিদে কালেমা শাহাদাত পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭ তরুণ-তরুণী মসজিদের ইমামের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন এবং কোরআন পাঠ করেন। এরপর তাঁরা শাহাদাহ পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করেন।
মুসলিম ফেডারেশন আরো জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি তাঁরা ফেডারেশনের ইসলামবিষয়ক মৌলিক শিক্ষা কোর্স শুরু করেছিলেন। এক মাস পর কোর্সটি সম্পন্ন করে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সময়ে তাঁরা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর পাঠ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, কোরিয়ান মুসলিম ফেডারেশন প্রতি মাসে ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বা মুসলিম হতে আগ্রহী তাদের জন্য মাসব্যাপী একটি কোর্স পরিচালন করে।
সূত্র : আলজাজিরা মুবাশির
ওমরাহ শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। পবিত্র কাবাগৃহের জিয়ারতই মূলত ওমরাহ। ইসলামের ভাষায় পবিত্র হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ে পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরাহ বলা হয়।
আবশ্যকীয় কাজ
ওমরাহ পালনে প্রধানত চারটি কাজ।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম
ইহরাম পরিধানের আগে বেশ কিছু করণীয় আছে। তা হলো ইহরাম পরিধানের আগে সব ধরনের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে; যেমন—হাত পায়ের নখ কাটা, গোঁফ, চুল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
ইহরাম পরিধানের আগে ফরজ গোসলের মতো গোসল করা সুন্নত। এরপর পুরুষদের সেলাইবিহীন পোশাক এবং নারীদের যেকোনো উপযুক্ত পোশাক পরিধানের মাধ্যমে ইহরাম পরিধান করতে হবে। মিকাত (ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট স্থান) বা তার আগে ওমরাহর নিয়ত করতে হবে। এরপর তালবিয়া পড়তে হবে।
গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহারের পর ইহরামের কাপড় পরিধান করতে হবে। এরপর ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে। ফরজ নামাজের ওয়াক্ত না হলে অজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজের পর কিবলামুখী হয়ে ইহরাম পরিধান করতে হবে।
ইহরামের নিয়তে এই দোয়া পড়া যায়
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল ওমরতা ফা-ইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি ওমরাহর ইচ্ছা করছি, আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন। ’
এরপর বলতে হবে : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা ওমরতান/ওমরাহ (অর্থ : হে আল্লাহ! ওমরাহকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)।
তালবিয়া পাঠের নিয়ম
এরপর নবী (সা.) যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়তে হবে। সেই তালবিয়া হচ্ছে : ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। ’
পুরুষরা উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়বেন। ওমরাহর ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তাওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়ার বিধান আছে। তাওয়াফ শুরু করলে তালবিয়া পড়া ছেড়ে দেবেন।
নিষিদ্ধ কাজ
ইহরাম পরিধানের পর কিছু কাজ নিষিদ্ধ; যেমন—সেলাইযুক্ত কাপড় বা জুতা ব্যবহার নিষিদ্ধ। অনুরূপ মস্তক ও মুখমণ্ডল ঢাকা, চুল কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা, নখ কাটা, ঘ্রাণযুক্ত তেল বা আতর লাগানো, স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা, যৌন উত্তেজনামূলক কোনো আচরণ বা কোনো কথা বলা, শিকার করা, ঝগড়া-বিবাদ বা যুদ্ধ করা, চুল-দাড়িতে চিরুনি বা আঙুল চালনা করা যাতে ছেঁড়ার আশঙ্কা থাকে, শরীরে সাবান লাগানো, উকুন, ছারপোকা, মশা-মাছিসহ কোনো জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা, যেকোনো ধরনের গুনাহর কাজ করা।
তাওয়াফের নিয়ম
পবিত্র কাবাগৃহ সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়। ওমরাহর উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে এই দোয়া পড়া : ‘বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজু বিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল কাদিমি মিনাশ শায়ত্বনির রাজিম। আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।’
এরপর তাওয়াফ শুরু করার জন্য হাজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবেন। ডান হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করবেন এবং চুমু খাবেন। যদি হাজরে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারেন, হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন এবং হাতে চুমু খাবেন। যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারেন তাহলে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবেন এবং তাকবির বলবেন। কিন্তু হাতে চুমু খাবেন না।
এরপর ডান দিক ধরে চলতে থাকবেন। বাইতুল্লাহকে বাঁ দিকে রাখবেন। যখন রুকনে ইয়ামানিতে (হাজরে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছবেন তখন সেই কর্নার চুমু খাবেন এবং তাকবির ছাড়া শুধু স্পর্শ করবেন। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তাওয়াফ চালিয়ে যাবেন; ভিড় করবেন না।
তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ ও হাজরে আসওয়াদকে বাঁ দিকে রেখে রুকনে শামি ও রুকনে ইরাকি অতিক্রম করে রুকনে ইয়ামানিতে আসবেন। এই স্থানে তালবিয়া, তাকবির, তাসবিহ ইত্যাদি পড়বেন। অতঃপর (সম্ভব হলে) রুকনে ইয়ামানি স্পর্শ করবেন। সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হবেন এবং কোরআনে শেখানো এই দোয়া পড়বেন : ‘রব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান নার। ’
যখনই হাজরে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবেন, তখন হাজরে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবির বলবেন। তাওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি—জিকির, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াত করবেন।
পুরুষের তাওয়াফ ভিন্ন যেখানে
তাওয়াফের মধ্যে পুরুষকে দুটি জিনিস করতে হয়। তা হলো—
১. তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করা। ইজতেবা মানে ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নিচ দিয়ে এনে চাদরের পার্শ্ব বাঁ কাঁধের ওপর ফেলে দেওয়া। তাওয়াফ শেষ করার পর চাদর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেবেন। কারণ ইজতেবা শুধু তাওয়াফের মধ্যে করতে হয়।
২. তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল মানে ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকি চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন। সাত চক্কর তাওয়াফ শেষ করার পর ডান কাঁধ ঢেকে নিয়ে মাকামে ইবরাহিমে আসবেন এবং পড়বেন ‘ওয়াত্তাখিযু মিম মাকামি ইবরাহিমা মুসল্লা। ’
তাওয়াফ শেষে যে নামাজ পড়তে হয় : অতঃপর মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস পড়বেন।
দুই রাকাত সালাত আদায় করার পর জমজমের পানি পান করবেন। মাতাফের (তাওয়াফ করার স্থান) চারদিকে জমজমের গরম ও ঠাণ্ডা পানির ঝার/ড্রাম আছে। জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করবেন এবং পান করার সময় বলবেন ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফি’আ, ওয়ারিযক্বাও ওয়াসি’আ, ওয়াশিফাআম মিন কুল্লি দা’ঈ’। (হে আল্লাহ! আমাকে উপকারী জ্ঞান দান করুন! পর্যাপ্ত রিজিক দান করুন! সব রোগের শিফা দান করুন)।
সায়ি করার নিয়ম
সাফা-মারওয়ায় সায়ি করার নিয়ম হলো, জমজমের পানি পান করে ধীরে ধীরে সাফা পাহাড়ে আরোহণ করবেন। সাফা ও মারওয়া পাহাড় দুটি কাবা শরিফের পাশেই অবস্থিত। এরপর মাসআ (সায়ি করার স্থান) আসবে। যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবেন তখন পড়বেন ‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ‘ইরিল্লাহ।’
এই আয়াত শুধু সায়ির শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বেন। সাফা-মারওয়ায় প্রতিবার আয়াতটি পড়বেন না। এরপর বলবেন ‘নাবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি।’ (অর্থ : আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি)।
অতঃপর সাফা পাহাড়ে উঠবেন, যাতে কাবা শরিফ দেখতে পান। কাবার দিকে ফিরে ‘আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলবেন। কাবা নজরে এলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করবেন। নবী (সা.)-এর দোয়ার মধ্যে ছিল—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ, আনজাযা ওয়াদাহ, ওয়া নাসারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদা।’
এই জিকিরটি তিনবার উচ্চারণ করবেন এবং এর মধ্যে দোয়া করবেন। একবার এই জিকির বলবেন। এরপর দোয়া করবেন। দ্বিতীয়বার জিকিরটি বলবেন এবং এরপর দোয়া করবেন। তৃতীয়বার জিকিরটি বলে মারওয়া পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন। তৃতীয়বারে আর দোয়া করবেন না। যখন সবুজ রং চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন তখন যত জোরে সম্ভব দৌড়াবেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দেবেন না। দ্বিতীয় সবুজ রং চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন। এভাবে মারওয়ায় পৌঁছবেন। সবুজ চিহ্নিত স্থানে এই দোয়া পড়বেন : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আ-আযযুল আকরাম।’
সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে নারী-পুরুষ সবাই স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন। মারওয়ার ওপর উঠে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করবেন। সাফা পাহাড়ের ওপর যা যা পড়েছেন ও বলেছেন এখানেও তা তা পড়বেন ও বলবেন। এরপর মারওয়া থেকে নেমে সাফার উদ্দেশে হেঁটে যাবেন। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার স্থানে হেঁটে পার হবেন আর দৌড়ানোর স্থানে দৌড়ে পার হবেন। সাফায় পৌঁছার পর আগে যা যা করেছেন তা তা করবেন। মারওয়ার ওপরও আগের মতো তা তা করবেন। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবেন। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফায় এলে এক চক্কর। সায়ির মধ্যে যা খুশি জিকির, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবেন।
সায়ি শেষ হলে এই দোয়া পড়বেন
‘রব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস ছামিউল আলিম। ’
মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা
সাত চক্কর সায়ি শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবেন অথবা মাথার চুল ছোট করবেন। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। মাথা মুণ্ডন করা চুল ছোট করার চেয়ে উত্তম। নারীরা আঙুলের এক কর পরিমাণ মাথার চুল কাটবেন। এই আমলগুলোর মাধ্যমে ওমরাহ সমাপ্ত হবে। সুতরাং ওমরাহ মূলত ইহরাম, তাওয়াফ, সায়ি, মাথা মুণ্ডন বা মাথার চুল ছোট করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।