<p>প্রত্যেক মানুষ সুখ-শান্তি ও সফলতা চায়। কিন্তু সুখ-শান্তি ও সফলতা বলতে অনেকেই শুধু পার্থিব জীবনের আরাম-আয়েশ আর স্বাচ্ছন্দ্যকেই বুঝে থাকে। এ জন্য দেখা যায়, পার্থিব দুনিয়া অর্জনের পেছনে মানুষের যত পরিশ্রম-প্রচেষ্টা। পার্থিব জীবনের উন্নতি, খেল-তামাশা, সাজসজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা, রূপবতী নারী, সন্তান-সন্ততির প্রতিযোগিতা, বহুতল প্রাসাদ, অট্টালিকা, ক্ষণিকের ভোগসামগ্রী অর্জন এবং মোটা অঙ্কের ধন-সম্পদ, হিসাব-নিকাশের পরিকল্পনার পেছনেই অনবরত চেষ্টা-প্রচেষ্টায় নিমজ্জিত হয়, অথচ পরকালের জীবনই আসল ও চিরস্থায়ী জীবন।</p> <p>পরকালের সুখ-শান্তি, সফলতাই হলো প্রকৃত এবং চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি, সফলতা। বুদ্ধিমান তো তারাই, যারা সেই অনন্ত-অসীম, চিরস্থায়ী জীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে। তাদের কাছে পার্থিব দুনিয়া মূল্যহীন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয়ই আখিরাতের নিবাস হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত!’ (সুরা : আল-আনকাবুত, আয়াত : ৬৪</p> <p>দুনিয়া স্থায়ী জিনিস নয়, তার সব কিছু ক্ষণিকের। কিছুকাল দুনিয়া উপভোগ করার পর একসময় সব ফুর্তি শেষ হয়ে যায়। দুনিয়ার কোনো সুখ-শান্তি, আনন্দ কোনো কিছুই স্থায়ী নয়; পক্ষান্তরে আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী ও অনন্ত-অসীম। তার আনন্দ ও নিয়ামত সব কিছুই চিরস্থায়ী। তার বসন্ত সদা অম্লান। সুতরাং প্রকৃত জীবন শুধু আখিরাতেরই জীবন। এ জন্য প্রকৃত বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে দুনিয়ায়ই পরকালের পাথেয়, পুঁজি সংগ্রহ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে স্বীয় আয়ত্তাধীনে রেখেছে এবং মৃত্যুর পরের জন্য নেকির পুঁজি সংগ্রহ করেছে, সে ব্যক্তিই প্রকৃত সবল ও বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে আল্লাহর প্রতি ক্ষমার আশা পোষণ করে, মূলত সে-ই অক্ষম (নির্বোধ)।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)</p> <p>দুনিয়াতে মানুষের বেঁচে থাকতে হলে আহারের প্রয়োজন আছে। আর এ জন্য জীবিকা উপার্জনের বিভিন্ন মাধ্যম তাকে গ্রহণ করতে হয়। এটা দুনিয়ার চিরাচরিত নিয়ম। আল্লাহকে স্মরণ রেখে বৈধ পন্থায় জীবিকা উপার্জনে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে বেশি স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)</p> <p>তবে দুনিয়ায় ততটুকু অর্জন করা যায়, যতটুকু অর্জন করলে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে যথেষ্ট হয়। কারণ দুনিয়া হলো মানুষের প্রয়োজন পূরণের স্থান। কেননা দুনিয়া হলো পরকালের আবাদ ভূমি। দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় আখিরাতের ফসল ফলাতে হবে। কেননা পরকালের পাথেয় সংগ্রহের একমাত্র জায়গা দুনিয়া। পরকালীন সুখ-শান্তি ও দুঃখ-কষ্ট নির্ভর করে দুনিয়ায় মানুষের কাজকর্ম ও জীবনাচার। মানুষের সৃষ্টি এবং তাকে দুনিয়ায় পাঠানো কোনো নিরর্থক বিষয় নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে তারা আমাকে আহার্য জোগাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা জীবিকাদাতা, শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬-৫৮)</p> <p>আল্লাহর ভয়, মৃত্যুর স্মরণ ও আখিরাতের ভাবনা মানুষের পার্থিব ও পরকালীন জীবনকে সার্থক করে তোলে। মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার সব চিন্তা-ভাবনা একমাত্র আখিরাতের চিন্তায় বিলীন করে দেয়, আল্লাহ তাআলা তার দুনিয়ার সব চিন্তার ব্যাপারে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৩০)</p> <p>হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বনি আদম, তুমি আমার ইবাদতের জন্য সব ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্ত হও, তাহলে আমি তোমার অন্তর প্রাচুর্যপূর্ণ করে দেব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬৬)</p> <p>আল্লাহ তাআলা আমাদের পরকালীন পাথেয় সংগ্রহ করার তাওফিক দান করুন।</p>