<p>ঋতুচক্র পরিবর্তন রহস্য</p> <p>পৃথিবীর আহ্নিকগতির কারণে দিন-রাত্রি এবং বার্ষিকগতির প্রভাবে ঘটে ঋতুচক্রের পরিবর্তন। মহান আল্লাহর বাণী ‘তিনিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করেন, তিনি সূর্য ও চাঁদকে নিয়ন্ত্রণ করছেন; প্রত্যেকেই এক নির্দিষ্টকাল আবর্তন করে... (সুরা : ফাতির, আয়াত : ১৩)</p> <p>প্রসঙ্গত, প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করল, ‘হে রব, আমার কিছু অংশ কিছু অংশকে খেয়ে ফেলছে।’ তাকে অনুমতি দেওয়া হলো দুটি নিঃশ্বাসের- একটি নিঃশ্বাস শীতে, আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মে...।’ (বুখারি)</p> <p>শীতের বিরূপ প্রভাব ও জনদুর্ভোগ</p> <p>শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুসহ সবার সহনমাত্রা ছাড়িয়ে দেখা দেয় নানা জটিল রোগব্যাধি। শীত জনজীবনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে—</p> <p>‘উত্তরিয়া শীতে পরাই কাঁপে থরথরি</p> <p>ছিড়া বসন দিয়া মায় অঙ্গ রাখে মুরি’ (মৈমনসিংহ গীতিকা : মলুয়া)।</p> <p>বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা</p> <p>পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্র সমান দূরত্বে ঘুরতে থাকে, তবে পৃথিবীর যে তলদেশটি বেশি চওড়া সেটি সূর্যের কাছাকাছি চলে যায়। আর যে তলদেশটি কমলালেবুর মতো চাপা সেটির দূরত্ব সূর্য থেকে অনেক দূরে চলে যায়। ফলে পৃথিবীর যে গোলার্ধ সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে সেখানে তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হয়। অন্যদিকে যে এলাকাটি সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে সেখানে আসে শীতকাল।</p> <p>সময়গত ব্যবধানে শীত</p> <p>দেশে দেশে শীতকাল গণনায় সময়গত পার্থক্য রয়েছে। ব্রিটেনসহ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের আমেরিকা, কানাডায় ডিসেম্বরের ২১-২২ তারিখ থেকে শীত শুরু হয়ে তা অব্যাহত থাকে  মার্চের ১৯/২০/২১ পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়াবিদরা সে দেশের ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি তিন মাসকে বলেন শীতকাল। স্ক্যান্ডেনেভিয়ায় শীত শুরু হয় অক্টোবরের ১৪ এবং শেষ হয় ফেব্রুয়ারির শেষে। দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় শীত শুরু হয় জুনে এবং শেষ হয় আগস্ট মাসের শেষে। আয়ারল্যান্ড ও স্ক্যান্ডেনেভিয়ায় শীত শুরু হয় নভেম্বরে। চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশে শীতকাল গণনা শুরু হয় নভেম্বর থেকে। শৈত্যপ্রবাহ মহান আল্লাহর পরীক্ষা।</p> <p>ইবাদত ও শুকরিয়া</p> <p>প্রচুর শাক-সবজি আবাদ হয় শীতকালে, এটাও হতে পারে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের উপায়। তিনি বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক... অতঃপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাক-সবজি, জলপাই, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফলফলাদি...।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)</p> <p>শীতকালের রাত দীর্ঘ, থাকে না তাহাজ্জুদ-ঘুমের দ্বন্দ্ব। সহজতর হয় তাহাজ্জুদ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশায়...।’</p> <p>শীতকালের দিবাভাগ খুব স্বল্পস্থায়ী। ফলে নফল ও কাজা রোজা আদায়ে শীতকাল সহজসাধ্য, আদর্শ। হাদিসে শীতকালকে ইবাদতের বসন্তকাল বলা হয়েছে।</p> <p>শীতার্তের জন্য বিশেষ করণীয়</p> <p>অব্যবহৃত কাপড়, লেপ-কম্বল বিলিয়ে দেওয়া, অপরের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিতরণা করা</p> <p>রান্না করা খাবার বিতরণ</p> <p>শীত সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা, খাবার ও পোশাক সম্পর্কে ধারণা দেওয়া</p> <p>বিনোদন, পর্যটনের সময়ের বাড়তি খাবার স্থানীয়দের দান করা</p> <p>পর্যাপ্ত ওষুধ ও গা-গরম রাখতে সহায়ক খাবার নিশ্চিত করা</p> <p>জাকাতের টাকার কিছু অংশ জমা রাখা এবং তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সময় শীতার্তদের সাহায্য করা</p> <p>মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কর্তব্য শীতার্তদের পাশে থাকা ও সাহায্য করা।</p> <p>বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো</p> <p>শীতে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ : ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা : দাহার, আয়াত : ০৮)</p> <p>মানবতার কল্যাণে প্রিয়নবীর (সা.) বাণী—‘কোনো মুসলমান, কোনো বস্ত্রহীন মুসলমানকে বস্ত্র দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন...খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন...পানি পান করালে...।’ (আবু দাউদ)</p> <p>বস্তুত দেশের শীতার্ত বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো সচ্ছল মানুষের দায়িত্ব এবং ইবাদততুল্য এবং শীত-গ্রীষ্মেও রয়েছে মহান আল্লাহর আনুগত্যের আহবান,</p> <p>‘যেহেতু আসক্তি আছে কুরাইশদের</p> <p>গ্রীষ্ম ও শীতকালে দূরে সফরের,</p> <p>তারা করুক তবে তাঁর ইবাদত</p> <p>কা’বার প্রভুর দেওয়া নির্ধারিত পথ....’ (কাব্যানুবাদ সুরা : কুরাইশ, আয়াত : ০১-০৩)।</p> <p> </p>