<p style="text-align:justify">কমরেড মণি সিংহের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পটভূমিতে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। সেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যেকোনো আস্ফালন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পোস্তাগোলা শ্মশানঘাটে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, টঙ্ক ও তেভাগা-কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা মণি সিংহের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">এরপর বিকেলে বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করে কমরেড মণি সিংহ ট্রাস্ট। অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, ড. এ এস এম গোলাম মরতুজা, চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাবেক ছাত্রনেতা আসলাম খান, লুনা নূর প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">সভায় সিপিবি সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘কমরেড মণি সিংহ সৎ ও আদর্শ রাজনীতির প্রতীক। শোষণমুক্তি ও সংগ্রাম, আদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, সাহস, আত্মত্যাগ, গরীব শোষিত-নির্যাতিত মেহনতি মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং গভীর দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। তিনি বৈষম্যহীন সমাজের যে স্বপ্ন দেখেছেন তার বাস্তবায়ন এখন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।’</p> <p style="text-align:justify">মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ বাস্তবায়িত হয়নি। ধনী গরিবের বৈষম্য প্রকট। সামাজিক অবক্ষয় তলায় নেমেছে। নীতিহীন, নৈতিকতাহীন রাজনীতি চর্চা চলছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কমরেড মণি সিংহের আদর্শের পথে এগোতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল বলেন, ‘উপমহাদেশের কিংবদন্তী বিপ্লবী মণি সিংহকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মানের কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছি। প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, জেল-জুলুম হুলিয়া নির্যাতনের চিত্র, মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা ফুটে উঠেছে। মহান নেতার প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করছি। আশা করি, তার জীবন থেকে নতুন প্রজন্ম শিক্ষা নেবে।’</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানের শুরুতে কমরেড মণি সিংহের প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন সংগঠন পুস্পমাল্য অর্পণ করে। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনাসভা শেষে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘কমরেড মণি সিংহ : সোমেশ্বরী পারের কিংবদন্তী বিপ্লবী’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, পোস্তাগোলা শ্মশানঘাটে স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবি সূত্রাপুর থানা কমিটির সভাপতি বিকাশ সাহা। বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, ডিএসকের পরিচালক শামসুল আলম, সিপিবি নেতা সাইফুল ইসলাম সমীর, সূত্রাপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বী খান ও সরকারি সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।</p> <p style="text-align:justify">সভায় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সামাজিক বিপ্লব সংগঠিত করার স্বপ্ন নিয়ে কমরেড মণি সিংহ তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। এই সামাজিক বিপ্লবই মানুষের মুক্তি দিতে পারে। সিপিবি এই সামাজিক বিপ্লব সম্পন্ন করতে তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। একমাত্র সমাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও শোষণ-বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়া যাবে।’</p> <p style="text-align:justify">সভায় আগামী ৩ জানুয়ারি শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির ‘ঢাকা সমাবেশ’ সফল করার জন্য শ্রমজীবী মানুষসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।</p>