প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যাঁরা

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যাঁরা
সংগৃহীত ছবি

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সেসব সাহাবির প্রশংসা করেছেন, যাঁরা ঈমান গ্রহণে অগ্রগামী ছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারা তাতে সন্তুষ্ট; তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এটা মহাসাফল্য।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০০)

সিরাত গবেষক ও ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত যে সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণকারী ব্যক্তিরা ছিলেন মহানবী (সা.)-এর পরিবার ও তাঁর ঘনিষ্ঠজন।

আর এটা খুবই স্বাভাবিক যে যাঁরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছিলেন, তিনি সর্বপ্রথম তাঁদের কাছেই ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছিলেন। এ দলের মধ্যে ছিলেন পরিবারের লোকজন, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব। কোনো সন্দেহ নেই যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি সেসব ব্যক্তিকে সত্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, যাঁদের মুখমণ্ডলে কল্যাণ ও সত্য-প্রীতির আভা প্রস্ফুটিত ছিল, যাঁরা নবীজি (সা.)-এর সততা, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক স্বচ্ছতা ও বংশীয় মর্যাদা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ কারণেই তাঁরা তাঁর প্রতি এত বেশি অনুরক্ত ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন যে প্রথম আহ্বানেই সাড়া দিয়ে তাঁরা ইসলাম কবুল করেন।

ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী হওয়ার এক দুর্লভ গৌরব অর্জন করেন। এই তালিকার শীর্ষে ছিলেন উম্মুল মুমিনিন খাদিজাতুল কুবরা (রা.), তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস জায়েদ বিন হারিসা বিন শুরাহবিল কালবি (রা.), মহানবী (সা.)-এর চাচাতো ভাই আলী ইবনু আবি তালিব (রা.), যিনি তখনো তাঁর লালন-পালনাধীন শিশু ছিলেন এবং তাঁর হিজরতের সঙ্গী আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। এই মোবারক কাফেলার সবাই প্রাথমিক দিনগুলোতে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কোনো প্রকার সন্দেহ, সংশয় ও দ্বিধা ছাড়াই।

অতঃপর আবু বকর (রা.) ইসলামের প্রচারে তৎপর হয়ে ওঠেন।

তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়, কোমল স্বভাব, পছন্দনীয় আচার-আচরণের অধিকারী, সচ্চরিত্র ও উদার হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর দানশীলতা, দূরদর্শিতা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সৎ সাহচর্যের কারণে তাঁর কাছে মানুষের সমাগম সর্বদা লেগেই থাকত। মানুষ তাঁর সান্নিধ্যকে নিজেদের জন্য সৌভাগ্যের মনে করত। তিনি তাঁর কাছে আগমন ও প্রত্যাগমনকারী এবং আশপাশে বসবাসকারীদের মধ্যে যাঁকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করতেন তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তাঁর এই আন্তরিক প্রচেষ্টায় উসমান (রা.), জোবায়ের (রা.), আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.), সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) এবং তালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রা.)-এর মতো ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করেন।
এই মহাসম্মানিত ব্যক্তিরাই হচ্ছেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মোবারক কাফেলা। তাঁদের পরে প্রাথমিক অবস্থায় আরো যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন বিলাল হাবশি (রা.) ছিলেন তাঁদের একজন।

এরপর ইসলাম গ্রহণ করেন বনু হারিস বিন ফিহর গোত্রের আবু উবায়দা আমির ইবনুল জাররাহ (রা.), আবু সালামা বিন আবদুল আসাদ মাখজুমি (রা.), আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা.), উসমান বিন মাজউন জুমাহি (রা.) এবং তাঁর দুই ভাই কুদামা ও আবদুল্লাহ, উবায়দা বিন হারিস বিন মুত্তালিব, সায়িদ বিন জায়েদ এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ ওমর (রা.)-এর বোন ফাতেমা বিনতে খাত্তাব, খাব্বাব বিন আরাত তামিমি (রা.), জাফর বিন আবি তালিব ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস, খালিদ বিন সায়িদ বিন আস আল উমাবি ও তাঁর স্ত্রী আমিনা বিনতে খালাফ। অতঃপর তাঁর ভাই আমর বিন সায়িদ বিন আস, হাতিব বিন হারিস জুমাহি ও তাঁর স্ত্রী ফাতিমা বিনতে মুখাল্লিল এবং তাঁর ভাই খাত্তাব বিন হারিস, তাঁর স্ত্রী ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার ও তাঁর ভাই মা’মার বিন হারিস, মুত্তালিব বিন আজহার জুহরি এবং তাঁর স্ত্রী রামলা বিনতে আবু আউফ, নাঈম বিন আবদুল্লাহ বিন নুহাম আদবি (রা.)। তাঁদের সবাই কুরাইশ ও কুরাইশের বিভিন্ন শাখা গোত্রের সন্তান ছিলেন।

কুরাইশের বাইরে অন্য গোত্র থেকে প্রাথমিক অবস্থায় ইসলাম গ্রহণকারীরা হলেন আবদুল্লাহ বিন মাসউদ, মাসউদ বিন রাবিআ, আবদুল্লাহ বিন জাহাশ আসাদি ও তাঁর ভাই আহমাদ বিন জাহশ, বিলাল বিন রিবাহ হাবশি, সুহাইব বিন সিনান রুমি, আম্মার বিন ইয়াসার আনসি, তাঁর পিতা ইয়াসার ও তাঁর মাতা সুমাইয়া এবং আমির বিন ফুহাইরা (রা.)। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের মুসলমান নারীদের মধ্যে আছেন উম্মু আইমান বারাকাত হাবশি, উম্মুল ফদল লুবাবাতুল কুবরা বিনতে হারিস হিলালিয়া (আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিবের স্ত্রী), আসমা বিনতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।

উল্লিখিত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে প্রথম পর্যায়ের ইসলাম গ্রহণকারীর গুণে গুণান্বিতদের সংখ্যা পুরুষ-নারী মিলে ৩০০ জন। তবে এটা অকাট্যভাবে জানা যায়নি যে তাঁরা সবাই প্রকাশ্যে দাওয়াত চালু হওয়ার আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, নাকি ইসলামের দাওয়াত প্রকাশ্যভাবে চালু হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কেই কেউ ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব করেছিলেন।

উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে জায়েদ বিন হারিসা (রা.) যুদ্ধে বন্দি হয়ে দাসে পরিণত হন। পরে খাদিজা (রা.) তাঁর মালিক হন এবং তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবায় নিযুক্ত করেন। এরপর তাঁর পিতা ও চাচা তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মক্কায় আসেন। কিন্তু তিনি বাড়ি না গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকাকেই বেশি পছন্দ করেন। প্রচলিত প্রথানুযায়ী তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে পোষ্য পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। এ জন্য তাঁকে যায়েদ বিন মুহাম্মাদ (সা.) বলে ডাকা হতো। পরে সে প্রথা শরিয়তে রহিত হয়।

তথ্যঋণ : আর রাহিকুল মাখতুম ও নবীয়ে রহমত

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জুমার দিন যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমার দিন যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।

এরপর নামাজ শেষ হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)

জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো— 

১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা

আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।

তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

২. জুমার নামাজ আদায়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

৩. জুমার দিন গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা

জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)

৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়

জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৬. সুরা কাহাফ পাঠ

জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)

৭. গুনাহ মাফ হয়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

৮. দরুদ পাঠ

জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)
 

মন্তব্য

মুসলিম বিশ্বের ৫ মসজিদে বড় ইফতার আয়োজন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
মুসলিম বিশ্বের ৫ মসজিদে বড় ইফতার আয়োজন

ইবাদতের পাশাপাশি বর্তমানে ইফতার হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষঙ্গ। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেলবন্ধন শক্তিশালী করতে মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ইফতারের নানা আয়োজন হয়। মুসলিম বিশ্বের বড় পাঁচ ইফতার আয়োজন নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ

১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান।

প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে। তারা আরো বলেছে, প্রতিবছর রমজানে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবু তারা চেষ্টা করছে সবাইকে যেন মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা যায়।
(অ্যারাব নিউজ)

২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে। শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখের বেশি ইফতার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখ ইফতার আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়।

তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার সাহরি বিতরণ করা হয়। (কালের কণ্ঠ)

৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইফতার আয়োজন। এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোজাদার ইফতার করে থাকেন। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হয়। মসজিদ কমিটি স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করে থাকে।

(এপি নিউজ)

৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সামাজিক সম্প্রীতিমূলক আয়োজন এরই মধ্যে এক যুগ পার করেছে। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এই আয়োজনে অংশ নেন। গণ-ইফতার মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। বহু পর্যটকও এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন। গত বছর গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার ব্যক্তি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০০ টেবিল। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি তাতে অংশ নেয়। (এসআইএস ডটগভ ডটইজি ও সিবিসি নিউজ)

৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর  ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।

 

মন্তব্য

ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

মাওলানা মুহাম্মদ নোমান
মাওলানা মুহাম্মদ নোমান
শেয়ার
ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

ইতিকাফ এমন এক মহৎ ইবাদত, যেখানে বান্দা দুনিয়ার সব বন্ধন ছিন্ন করে কেবলমাত্র আল্লাহর হয়ে যায়। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে এই ইবাদত পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।

আল্লামা ইবনুল মুনজির (রহ.) বলেন, সব আলেম একমত যে ইতিকাফ সুন্নত, ফরজ নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের ওপর ওয়াজিব করে নেয়, তবে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।

(আল-ইজমা, পৃষ্ঠা-৫৩)

ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো অবস্থান করা। পারিভাষিক অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করে এবং ইবাদতে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় ‘আকিফ’ ও ‘মুতাকিফ’ (ইতিকাফকারী)। (লিসানুল আরব, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-২৫৫)

শরিয়তের দৃষ্টিতে, ইতিকাফ মানে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করা। (উমদাতুল কারি, খণ্ড-১১, পৃষ্ঠা-১৪০)

আর রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি স্বতন্ত্র সুন্নত।

মদিনায় হিজরত করার পর থেকে ওফাত পর্যন্ত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফের আমল মহানবী (সা.) কখনো ছেড়ে দেননি। (ফাতহুল বারি, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৮৫)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর উম্মাহাতুল মুমিনিনরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

ইতিকাফের ফজিলত

১. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সব নেকি তার জন্য লেখা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮১)

২. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তার মধ্যে ও জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন, যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব। (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস : ৭৩২৬; শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি, হাদিস : ৩৯৬৫)

লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তিতে ইতিকাফের গুরুত্ব  

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকেও উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৩)

সেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইতিকাফের মূল লক্ষ্য ছিল লাইলাতুল কদর পাওয়া। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন।

এরপর তিনি মাঝের ১০ দিন তুর্কি কুব্বাতে (এক ধরনের ছোট তাঁবুতে) ইতিকাফ করেছেন। যে তাঁবুর দরজার ওপর একটি কার্পেট ঝোলানো ছিল। (বর্ণনাকারী বলেন) তিনি তাঁর হাত দিয়ে কার্পেটটিকে কুব্বার (তাঁবু) এক পাশে সরিয়ে দিলেন। এরপর তাঁর মাথা বের করে লোকদের সঙ্গে কথা বললেন। লোকেরা তাঁর কাছে এলো। অতঃপর তিনি বলেন, আমি প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছি—এই রাতের (লাইলাতুল কদরের) খোঁজে, এরপর মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করেছি। এরপর আমাকে বলা হলো, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে। তখন লোকেরা তাঁর সঙ্গে ইতিকাফ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৭)

প্রকৃত অর্থে ইতিকাফের ইতিবাচক ফলাফল মানুষের জীবনে তাত্ক্ষণিকভাবে, এমনকি ইতিকাফের দিনগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া পরবর্তী রমজান পর্যন্ত অনাগত দিনগুলোর ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। আতা আল-খুরাসানি (রহ.) বলেন, ইতিকাফকারীর উদাহরণ ওই ব্যক্তির মতো, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে পেশ করে বলছে, হে আল্লাহ যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা করো, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না; হে আমার রব, যতক্ষণ না তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না। (শারহুল ইবনে বাত্তাল আলাল বুখারি, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮২)

ইতিকাফের কিছু মাসআলা 

১. ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। হাদিসে আছে, একান্ত বাধ্য না হলে মসজিদ থেকে বের হবে না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১১৫)

মনে রাখবেন, ইতিকাফ মানে বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহর হয়ে যাওয়া। মসজিদে সঙ্গীদের সঙ্গে গল্প করা, মোবাইলে ফোনালাপ, গোসল করতে বেশি সময় লাগানো—এসব ইতিকাফ পরিপন্থী কাজ। ইতিকাফে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সব কিছুর চিন্তা থেকে মনকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেবল আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে হবে। তবেই ইতিকাফ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২১ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২১ মার্চ ২০২৫

আজ শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৯ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৭ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৩ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ২৭ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৪৯ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৬টা ১০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ