খাবারের স্বাদ বাড়াতে পেঁয়াজ অতুলনীয়। ভাজাপোড়া থেকে শুরু করে পান্তাভাত বা গরম ভাতসহ প্রায় খাবারের সঙ্গে অনেকে কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে থাকেন। এ ছাড়া মুড়ি মাখানো থেকে শুরু করে বিকেলের নাশতায় তৈরি খাবার যেমন পেঁয়াজু, পুরি, শিঙ্গাড়া- এই পেঁয়াজ ছাড়া অসম্ভব।
অনেকে আবার সালাদ হিসেবেও কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে থাকেন।
তবে এই পেঁয়াজ কেবল মুখরোচকই নয়। এটি আপনার স্বাস্থ্যর জন্যও বেশ ভালো। আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে পেঁয়াজ নানা ভাবে কাজ করে থাকে। চলুন, জেনে নিই পেঁয়াজের গুণাবলি।
পেঁয়াজে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ফোলেটের মতো উপাদান রয়েছে। তাই সালাদ হিসেবে পেঁয়াজ খেলে শরীরের নানা উপকার হয়। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো—
আরো পড়ুন
স্বাস্থ্যকর চিকেন সালাদ, রাখতে পারেন ইফতারে
হজম ভালো হয়
গ্রীষ্মকালে অনেক সময় গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁচা পেঁয়াজ হজমশক্তি উন্নত করে।
এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা পেট পরিষ্কার করে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে
কাঁচা পেঁয়াজ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
তাই সালাদে কাঁচা পেঁয়াজ রাখা সব সময় ভালো।
ত্বকের জন্য ভালো
যেহেতু পেঁয়াজে সালফার ও ভিটামিন সি থাকে, তাই তা ত্বকের জন্য উপকারী। ত্বকের জ্বালা কমাতে, ব্রণ হওয়া আটকাতে সহায়তা করে। গরমে অতিরিক্ত ঘাম ও দূষণের কারণে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। কাঁচা পেঁয়াজ খেলে তা ত্বক মেরামত করে।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভালো
কাঁচা পেঁয়াজে ক্রোমিয়ামসহ অন্যান্য উপাদান রয়েছে, যা শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষত উপকারী। কারণ এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এ ছাড়া পেঁয়াজ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে। তাই ক্যান্সার রোগীদের জন্য পেঁয়াজ অত্যন্ত উপকারী।
হার্টের সমস্যা সমাধানে
যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য পেঁয়াজ অত্যন্ত উপকারী। খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া যাদের বাতের ব্যথার সমস্যা আছে তাদের জন্য পেঁয়াজ উপকারী।
ঘা শুকাতে
পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। তাই ফোঁড়া বা ঘা হলে তাতে পেঁয়াজের রস ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যায়। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের হয়ে যায়।
আরো পড়ুন
আলু-পেঁয়াজ একসঙ্গে রাখলে কী ক্ষতি
সর্দি-কাশি দূর করতে
কফযুক্ত কাশিতে পেঁয়াজের রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে কিছুদিনের মধ্যেই তার ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া হেঁচকি বন্ধ করতেও পেঁয়াজের রস অত্যন্ত কার্যকর। পোকা কামড়ালে সেই স্থানে পেঁয়াজের রস লাগালে তাতে আর চুলকানি কিংবা জ্বালাপোড়া হয় না।
মাথা ব্যথা
যাদের ঠাণ্ডা কিংবা সাইনাসের কারণে মাথা ব্যথা আছে তারা এক চা চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে দুই চা চামচ পানি মিশিয়ে খান, ব্যথা দ্রুত কমে যাবে।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচায়
এই গরমে প্রায় অনেকেই হিট স্ট্রোকের সম্মুখীন হয়েছেন। যাদের এই সমস্যা আছে তাদের হিট স্ট্রোক হলে পায়ের ওপর ও ঘাড়ের পেছনে পেঁয়াজ বেঁটে দিলে শরীরে ঠাণ্ডা প্রভাব ফেলে, যা স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া এটি চুল পড়া রোধ করতেও সাহায্য করে। যাদের চুল পড়ার সমস্যা আছে তারা পেঁয়াজের রস সপ্তাহে দুই বার করে চুলে লাগালে উপকার পাবেন।
আরো পড়ুন
ওয়াই-ফাইয়ের তরঙ্গ কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
তবে যেকোনো জিনিস অতিরিক্ত ভালো নয়। তাই অতিরিক্ত কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন।