১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এক বিভীষিকাময় ‘কালরাত’ নেমে এসেছিল এ দেশের মানুষের জীবনে। মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মেতে ওঠে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে। আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস।
আরো পড়ুন
ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তাকে ঘেরাও করে মারধর
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিট প্রতীকী ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করা হবে। কেপিআই বা জরুরি স্থাপনা ব্যতীত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনাগুলোতে এ সময় কোনো অবস্থাতেই আলোকসজ্জা করা যাবে না।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
আরো পড়ুন
এবার পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তাকে বদলি
২৫ মার্চের কালরাতে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মার্চের দিনগুলোতে বাংলাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, তখন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেদিন মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিচালনা করে ঘুমন্ত-নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগসহ সারা দেশে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহীদ হন ছাত্র-শিক্ষক, পুলিশ ও সেনা সদস্যসহ হাজারো নিরপরাধ মানুষ। তাঁদের আত্মদানের পথ ধরেই দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
’
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী যে বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম, সে বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে মানুষের কোনো মৌলিক অধিকার ছিল না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বীরত্বে জাতি স্বৈরাচারের অত্যাচার-নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যেতে চায়।’
আরো পড়ুন
সাভারে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই বাঙালিরা বুঝতে পারে, তারা নানাভাবে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দ্বারা শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্বাধিকার আন্দোলন চূড়ান্তভাবে দানা বাঁধে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ১৯৭১ সালের মার্চে শুরু হয় বাঙালিদের অসহযোগ আন্দোলন। স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে। ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে বিকেলে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর। কারফিউ জারি করা হয়। জনবসতিতে দেওয়া হয় আগুন। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। মধ্যরাতে ঢাকা হয়ে ওঠে লাশের শহর।
কর্মসূচি
এক মিনিটের প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানান কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরিসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণা ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আজ সকাল ১০টায় অথবা সুবিধাজনক সময়ে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। গৃহীত কর্মসূচি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার প্রচার করবে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের স্মরণে আজ বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময়ে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ গণহত্যা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।