গোল্ডবার্গ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে তিনি মিথ্যা বলছেন এবং সেখানে কোনো গোপন তথ্য শেয়ার করা হয়নি, তখন তিনি এটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। ওই গ্রুপ চ্যাট ফাঁস হওয়ার পরও ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পূর্বের অবস্থানে অটল আছে। তারা এখনো বলছে, কোনো গোপন তথ্য ফাঁস হয়নি।
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ হোয়াইট হাউসের কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এটি স্বীকার করছেন, যা হয়েছে, তা খুব গুরুতর ভুল ছিল।
’
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো বলেন, এই সিগন্যাল ফাঁস ‘নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’ তবে তিনি যোগ করেন, এই অ্যাপটি ‘খুব একটা ভালো নয়।’
এ ছাড়া তিনি সাংবাদিক গোল্ডবার্গকে একজন ‘আপাদমস্তক প্রতারক’ বলেও অভিহিত করেন। অন্যদিকে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আটলান্টিকের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ বলেন, একজন সাংবাদিকের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা না করে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আসলে স্বীকার করা উচিত যে তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল এবং সেই ত্রুটির সমাধান করা দরকার।’
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওই চ্যাটে অংশ নিয়েছিলেন। বুধবার ক্যারিবিয়ান দেশ জ্যামাইকা সফরে গিয়ে তিনি স্বীকার করেন, ‘নিঃসন্দেহে কেউ ভুল করেছে...একটি বড় ভুল...একজন সাংবাদিককে গ্রুপে যোগ করেছে।’
ওই চ্যাটের আরেক অংশগ্রহণকারী হলেন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। তিনি হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটিকে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এই বিষয়টির তদন্ত করবে এবং খতিয়ে দেখবে যে কিভাবে একজন সাংবাদিক সেখানে যুক্ত হলেন। এটিকে ভুল হিসেবে স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন, কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘বড় কোনো বিষয় নয়’ বলে মন্তব্য করলেও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ মঙ্গলবার রাতে বলেন, তিনি এর ‘সম্পূর্ণ দায়ভার’ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের পদত্যাগ দাবি করেছেন। কারণ একজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে অসাবধানতাবশত তিনি যেসব তথ্য শেয়ার করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিপক্ষের হাতে পড়লে মার্কিন কর্মকর্তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারত।
সাংবাদিক গোল্ডবার্গ এই সপ্তাহের শুরুতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটনে সাড়া ফেলে দেন। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন, কিভাবে তিনি ওই গ্রুপ চ্যাটে ভুলবশত যুক্ত হন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, তিনি তার প্রতিবেদনে কিছু তথ্য সচেতনভাবেই প্রকাশ করেননি। কারণ সেগুলোতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম ও ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার পরিকল্পনার গোপন বিবরণ ছিল। কিন্তু পিট হেগসেথসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গোল্ডবার্গকে মিথ্যাবাদী প্রমাণের চেষ্টা করেন।
পরে এ বিষয়ে গত বুধবার দ্বিতীয় কিস্তিতে নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকরা নিজেরাই যাতে সত্য-মিথ্যা বুঝতে পারেন, তাই তিনি ইয়েমেনে মার্কিন হামলার পরিকল্পনাসংক্রান্ত মেসেজগুলো প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা একটি ‘অনিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যমে’ যেসব তথ্য আদান-প্রদান করেছেন, জনগণ চায় তা উন্মুক্ত হোক। ‘বিশেষ করে, যেহেতু প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা শেয়ারকৃত ওই সব মেসেজের গুরুত্বকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছেন।’ দ্বিতীয় এই লেখায় তার সহলেখক ছিলেন শ্যেন হ্যারিস।
এই ঘটনায় হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সরাসরি গোল্ডবার্গকে আক্রমণ করে ‘ট্রাম্পবিরোধী ঘৃণাকারী’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, মিডিয়ার ‘অপপ্রচারকারীরা’ এই ‘সিগন্যাল ষড়যন্ত্র’ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ‘আসল গল্প হলো হুতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান।’
আটলান্টিকে প্রকাশিত মেসেজগুলোতে ইয়েমেনে মার্কিন হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত ছিল। কিছু মেসেজে হামলা-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন, ইয়েমেনে সিআইএর কার্যক্রম ও হুতির ওপর আসন্ন ইসরায়েলি হামলার ব্যাপারেও আলোচনা ছিল।
গত বুধবারও পিট হেগসেথ আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলেন। তিনি হাওয়াইতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তারা জানে এটি যুদ্ধ পরিকল্পনা নয়।’ ওখানে ‘কোনো ইউনিট, কোনো স্থান, কোনো রুট, কোনো ফ্লাইট, কোনো সূত্র, কোনো পদ্ধতি বা কোনো গোপন তথ্য ছিল না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তার কাজ হলো ‘সময়মতো আপডেট দেওয়া’ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমি ঠিক সেটাই করেছি।’
তবে সামরিক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ওই তথ্য অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সেগুলো একটি কমার্শিয়াল মেসেজিং অ্যাপে শেয়ার করা কখনোই উচিত হয়নি।