পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার মামলা ও সারা দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ প্রায় ৮০টি মামলা দেওয়া হয়। তার মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশ চলার সময় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রক্রিয়ার শেষ দিকে তাকে নতুন করে জড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন
বেরোবিতে আবু সাঈদের স্মরণে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্ট পরে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর কারাভোগ করেন। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৮ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন চলে যান তিনি।
আরো পড়ুন
নাইক্ষ্যংছড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল বিএনপি নেতার
এ ছাড়া ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলা করেছিল দুদক। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছরের এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি তাকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
২০১৪ সালে লন্ডনে এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ ও ‘পাকবন্ধু’ উল্লেখ করেছেন বলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কটূক্তির অভিযোগ এনে নড়াইলের আদালতে মানহানির মামলা করেন শাহজাহান বিশ্বাস নামের এক কথিত মুক্তিযোদ্ধা। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদন্ড দেন নড়াইলের আদালত। অন্যদিকে শুধু ঢাকার আদালতেই মানহানির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তা ছাড়া একই অভিযোগে সে সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে অসংখ্য মামলা করা হয়।
আরো পড়ুন
ধস নেমেছে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনে
এ ছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রোদ্রোহের মামলাও হয়েছে। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে যোগসাজশ করে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। নোয়াখালীতেও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আরেকটি মামলা আছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ওই মামলাতেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাও রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন তথাকথিত ‘জননেত্রী পরিষদের সভাপতি’ এ বি সিদ্দিকী।
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে নির্বাহী আদেশে জামিনে রয়েছেন। রায় ঘোষণা হওয়া এ দুটি মামলা বাদে তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মোট মামলা রয়েছে ৩৫টি। সবগুলো মামলাতেই এখন তিনি জামিনে আছেন।
আরো পড়ুন
তরুণদের সামর্থ্য আগ্রহী করেছে সিমন্সকে
১৩টি মামলা হয়েছে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে অর্থাৎ ১/১১ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। বাকিগুলো দায়ের করা হয় পরবর্তী বিভিন্ন সময়। মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রয়েছে। বাকি মামলাগুলো হয়েছে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে।
এদিকে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক কারণে হওয়া ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। এ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
ফ্রান্সে এসআইএএল ফুড ফেয়ারে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ
সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। জেলা কমিটি সুপারিশ দেবার পর সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করা হবে। এরপর তালিকা তৈরি করে মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।
জেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের সঙ্গে এজাহার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।
আরো পড়ুন
স্পিনের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশেরও
আবেদন পাবার সাত কর্মদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি জেলার পাবলিক প্রসিকিউটরের (ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) কাছে মতামতের জন্য পাঠাবেন। এরপর ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) তার মতামত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠাবেন। পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত সংগ্রহ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন।
জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ পাবার পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করবে এবং মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
আরো পড়ুন
রাজধানীতে ঘন কুয়াশায় শীতের আমেজ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। এ নিয়ে আমরা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সিনিয়র আইনজীবীরা কয়েক দফা বৈঠক করেছি। কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় এ মিথ্যা ও গায়েবি মামলাগুলো দ্রুত শেষ করা যায় তার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে প্রচ- রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত। এগুলো সবই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলা। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি, অথচ দেওয়া হয়েছে নাশকতার মামলা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির মামলা। অথচ এসবের সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য মিথ্যা মামলা। অথচ তিনি দেশে নেই আজ এক যুগেরও বেশি সময়। খুব শিগগিরই আমরা (সিনিয়র আইনজীবীরা) আবারও বসব এবং এ নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা করব। আশা করি খুব শিগগিরই মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটা আমরা শুরু করতে পারব ইনশা-আল্লাহ।’
আরো পড়ুন
সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে ফিরল বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলাগুলো পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে যে অবস্থায় ছিল এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে। পাশপাশি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের (প্রায়) ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৪ লাখ মামলাও সেই একই তিমিরে রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এসব মামলা প্রত্যাহারের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।’