শিল্প ক্ষেত্রে দেখবেন ঈদে সকল শ্রমিককে সেভাবে বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঈদ উপলক্ষে তড়িৎ ব্যবস্থায় তাদের বেতন ভাতা দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু নাই। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা বাদেও গণতন্ত্র সংকটে আছে। হাসিনা কেড়ে নিয়েছে ভোটাধিকার, এখন সেই অবস্থায়ই আছে। সামগ্রিক সংকটের মধ্যে দেশ নিমজ্জিত।
কালের কণ্ঠ: আপনারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছেন। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় তো ভালো করছে
বাড়ির কর্তা যেভাবে সংসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বাড়ির দারোয়ান সেটা করতে পারবে না। কখনো-কখনো বাড়ির কর্তাকে দারোয়ানের উপর নির্ভর করতে হয়, যখন সে বাইরে যায়। যা অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু উপযুক্ত হচ্ছে কর্তা। এটি মনে রাখতে হবে। তারা (সরকার) রাজনীতিবিদ না, রাজনৈতিক সংগঠকও না। এই কাজটি রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদদের আসার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
কালের কণ্ঠ: দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞতা আছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের। এখন আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। তাহলে যদি নির্বাচন দ্রুত হয় তাহলে, আপনারা কি কিছুটা সুবিধা পাবেন না?
রাষ্ট্র পরিচালনা করে দৃশ্য একটি রাজনৈতিক দল, কিন্তু অদৃশ্যত জনগণ। নির্বাচিত হয়ে আসার পাঁচ বছর পরে, ওই জনগণের কাছে তাদেরকে ফিরে যেতে হয়। অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। এখন যে সরকার আছে সেটি তো জনগণের সরকার নয়। এখন আওয়ামী লীগ তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তার কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে। বিএনপির সঙ্গে যখন জামায়াতে ইসলাম থাকে, তখন তারা ১৮-১৯ টি আসন পায়। আর তারা (জামায়াত) বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করলে পায় ২-৩ টি। এর বাইরে কিছু দলের একটা দুইটা আসল পাওয়ার নজির আছে। তাহলে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা, দেশ পরিচালনা করা, এগুলোর সম্পর্ক আছে। তাই বিএনপিকে কেউ যদি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সেটা ভুল হবে।
কালের কণ্ঠ: এনসিপি ও জামায়াত চাচ্ছে সংস্কারের পরে নির্বাচন। তাদের চাওয়াটা আপনি কীভাবে দেখছেন?
নির্বাচন সম্পর্কে কেউ যদি আস্থাশীল হয়, তাহলে সে যেকোনো সময় নির্বাচনকে স্বাগত জানাবে। আর আস্থাশীল না হয় তাহলে, একটি ভিন্ন পথ খোঁজার চেষ্টা করবে। কীভাবে অন্যভাবে ক্ষমতার ওই জায়গায় পৌঁছানো যায়। সে তো জানে নির্বাচন হলে, তিনটা সিট পাবে। আর না হলে হয়তো একটাও পাবে না। আর যারা নতুন তারাও যদি নির্বাচন না চায় তাহলে তাদেরকেও ওই দলভুক্ত করা যায়। মানে তারা নির্বাচনের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এখন জনগণের ডিমান্ড নির্বাচন ও গণতন্ত্র। আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা না করে ফেলে পারি, তাহলে সংকট ঘনীভূত হবে। এই জায়গাটিতে যদি শূন্যতা রাখি, তাহলে মানুষ একসময় ক্ষুব্ধ হবে।
কালের কণ্ঠ: এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন চাচ্ছে, আর বিএনপি নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন চাচ্ছে। নতুন গঠিত দলসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আপনাদের চাওয়ার পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে না?
না, এখানে পার্থক্য নাই। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। ছাত্রদের পড়াতেও পারতাম, কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে, রাজনীতি করাটা আমার জন্য ঠিক। এ জন্য রাজনীতিতে এসেছি। আমার বুঝে আসেনা সেকেন্ড রিপাবলিক কেনো লাগবে। আমাদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে কেনো।
কালের কণ্ঠ: তারা তো বর্তমান সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান চায়।
সংবিধান বাদ দেয়া যায় না, সংবিধান সংস্কার করা যায়। এমনকি নতুন সংবিধান করতে হলে সংসদে যেতে হবে। পার্লামেন্টে যেতে হলে পার্লামেন্ট বানাতে হবে। আর এটা বানাতে হলে নির্বাচনের দরকার। তো ইলেকশনে না গিয়ে আমি এসব সংবিধানে হাত দেবো? আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় এটা এক ধরনের পাগলামি। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে, যুদ্ধ করেছে। একটি ক্ষুদ্র অংশ পাকিস্তানের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। তাদের কাছে ৭১ মানে স্বাধীনতা মনে হয় না। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষে। তারা এজন্যই ২৪ কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা মনে করে। সে কারণেই সেকেন্ড রিপাবলিক, সে কারণেই গণপরিষদ চায়। যারা স্বাধীনতাকে মানতে না পারবে, তাদেরই আরেকটি স্বাধীনতার কথা তাদের বলতে হয়, হবে।
কালের কণ্ঠ: ছাত্র আন্দোলনকারীদের দুইজন এখন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন, অন্যদিকে ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আপনি কি মনে করেন আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে?
গত সাত আট বছরে মানুষের মধ্যে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব কিনা? কারণ এই বর্তমান সরকার প্রধান শিক্ষার্থীদের দল গঠনে উৎসাহিত করেছে প্রকাশ্যে। সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের রেখেছে। যে সরকার আলাদা একটি দল গঠনে ও ঐ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের প্রতিনিধি সরকারে থাকে, সে স্বাভাবিক কারণে ওই সরকারে ক্ষমতায় আসুক, সেই প্রক্রিয়া, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং, সেই ব্যবস্থাপনা করবে না এটা বিশ্বাসযোগ্য না। সরকার প্রধান হিসেবে বড় উদাহরণ গত সাত মাস ধরে তিনি বলে আসছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। হঠাত্ করে কয়দিন আগে তিনি বলেছেন, নির্বাচন জুনে হবে। হয়তো আবার কোনো এক মাসে আমরা শুনব জুনের সম্ভব হচ্ছে না, পরবর্তী বছরের (২০২৬) জুনে হয়তো সম্ভব হবে। তাই আমার মনে হয়, তিনি প্রমাণ করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি হয়ে পড়তে পারে। যেটা সরকারের কার্যক্রমে ওপর নির্ভর করছে।
কালের কণ্ঠ: তাহলে কি আপনারা সন্দেহ করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না?
সরকার গঠনে দুই উপদেষ্টা ও তাদের সহযোগীরা যে কাজগুলো করছে তাতে সন্দেহ না, বাস্তবতায় মনে হচ্ছে ওই দিকেই সরকার যাচ্ছে।
কালের কণ্ঠ: এনসিপিসহ আরো কিছু দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়। গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে আপনারা দাবি করেন। তাহলে তাদের সঙ্গে আপনারা কেনো একমত হতে পারছেন না?
এগুলো রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি, যা বাদ দিতে হবে। আমরা ইলেকশন চাইলে, ইলেকশন দেয় না সরকার। অন্যদিকে আমরা কেনো সরাসরি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাচ্ছি না সেটা আবার বলে তারা। এগুলো ফাইজলামি। এসব বাদ দিতে হবে। আগে সরকারকে (আওয়ামীলীগকে) বাতিল করতে হবে। প্রেস নোট দিতে হবে। কিন্তু সরকার প্রধান বলছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিস্থিতি দেশে নেই। এনসিপি তো কিছু বলে না। না বলার আগে আমাদের প্রশ্ন আসছে কেনো। আমরা চাই, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। যারা নির্বাচিত হয়ে আসার সমার্থ রাখে না, কিন্তু এমপি হওয়ার ইচ্ছা জাগে, তারাই নির্বাচন নিয়ে সময় ক্ষেপণ করতে চায়। বাহানা করতে চায়। সেজন্য বলি আগে কারা কি চায় সেটা ঠিক করুক। আর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে বুঝা যাবে কত ধানে কত চাল।
কালের কণ্ঠ: অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে, দল থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তারপরেও কেনো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?
যারা চাঁদাবাজি করে তারা বিএনপি করে না। ছাত্রদল করে না। স্বেচ্ছাসেবক দল করে না। আমি অন্তত বিশ্বাস করতে চাই না, কোনো ছাত্রদলের নেতা-কর্মী চাঁদাবাজি করবে। এটা অসম্ভব হতেই পারে না। যখন কোনো মুসলিম কুরআন হাদিস অস্বীকার করবে, আল্লাহকে অস্বীকার করবে, সে সময় থেকে সে আর মুসলিম থাকে না। ছাত্রদলের কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, রাজনীতি আছে, নেতৃত্ব আছে। ওইটা যে অস্বীকার করবে, অস্বীকার করে চাঁদাবাজি করবে, সে তখন ছাত্রদলের কেউ না। স্পষ্ট করেই দল থেকে বলা হয়েছে। সে একটা দুষ্কৃতকারী। তাকে একটা সাধারণ লোক ধরে পুলিশে দিতে পারে। পুলিশও ধরে নিয়ে আইনসম্মত ব্যবস্থা নিতে পারে। সে তো আমার দলের না। বরঞ্চ এদের কাউকে কাউকে ব্যবহার করে এদের নাম ব্যবহার করে, দলকে কলুষিত করছে একটি বিশেষ একটি মহল। যারা চক্রান্ত করছে। এ ধরনের কাজ যারা করে তারা তার পদে থাকে না। আমি ইসলামের কোনো কিছু মানি না, তাহলে কী মুসলিম দাবি করতে পারি?
কালের কণ্ঠ: জামাতের সঙ্গে বিএনপির কী গভীর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে?
জামায়াতসহ অন্যান্য ছোট রাজনৈতিক দল আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিস্ট পার্টিও আমাদের কাছে আসে, জামায়াতও আমাদের কাছে আসে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় জামাতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হয়েছে। কিন্তু যখন কেউ ফ্যাসিবাদের দোসর হবে; শুধু জামায়াত না, অন্য যেকোনো সংগঠন, তখন সে আর আমার বন্ধু না। এখানে দূরের, কাছের বলে কোনো কিছু নাই। জামাত একটি আলাদা সংগঠন। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। জামায়াতের সিদ্ধান্ত অতীত থেকে একদম ২৪ সাল পর্যন্ত ভুলে ভরা। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ভুল করেনি তা বলবো না, কিছু ভুল থাকতে পারে। কিন্তু জামাতের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এটা দূরে আর কাছের ব্যাপার নয়।