♦ ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন সেটি ২০২৯ সালের ডিসেম্বরে করা হয়েছে
♦ এই সমুদ্রবন্দরের আয়তন এক হাজার ৩১ একর, প্রকল্প ব্যয় ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা
কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজের জন্য জাপানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী ২২ এপ্রিল রাজধানীর ঢাকায় সম্ভাব্য চুক্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। চুক্তির পর শুরু হবে ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনাল নির্মাণকাজ। আর পুরো প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।
আরো পড়ুন
কয়েক বিভাগে তীব্র বজ্রপাতের শঙ্কা, প্রাণ বাঁচাতে ঘরে থাকার পরামর্শ
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাগরপথে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী। এখানে এক হাজার ৩১ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। এরই মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় সাগরে বাঁধ বা ব্রেকওয়াটার তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার কৃত্রিম চ্যানেল।
এরই মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা নিয়ে একের পর এক বিশাল আকৃতির জাহাজ ভিড়ছে। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় বারবার পিছিয়েছে পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন নামের প্রকল্পটি ২০২০ সালের মার্চে নেওয়া হয়। ২০২৬ সালের মধ্যে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
আরো পড়ুন
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে প্রভাব পড়বে না
এখন সেটি পিছিয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরে করা হয়েছে। ফলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের খরচ দুই দফায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায়। আর প্রথম পর্যায়ে টার্মিনাল নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, যার পুরোটাই বহন করবে জাপানি সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এরই অংশ হিসেবে জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান এবং থোয়া করপোরেশনের সঙ্গে ২২ এপ্রিল চুক্তি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী চার বছরে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কনটেইনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ আরো একটি মাল্টিপারপাস জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।
আরো পড়ুন
আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শনে যান। তখন তিনি বলেছিলেন, এরই মধ্যে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৯ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের কাজ শেষ হবে। এরপর ২০৩০ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) আসা-যাওয়া করতে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ২২ এপ্রিল। অনুষ্ঠানটি হবে ঢাকায়। সব ঠিক থাকলে ওই দিনই চুক্তি হবে। তিনি বলেন, প্রায় ছয় হাজার ১৯৭ কোটি টাকায় এই চুক্তিটি হবে। পুরোটাই হবে জাইকার অর্থায়নে।
২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চুক্তির মেয়াদ থাকবে। এরি মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল নির্মাণ করবে। নির্মাণকাজে বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করবে জাপানি প্রতিষ্ঠানটি। এসব প্রযুক্তির অনেক কিছুই বাইরে তৈরি হবে। শুধু দেশে এনে স্থাপন করা হবে। তাই নির্মাণকাজ অনেক দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, মাতারবাড়ী বন্দরে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টন ধারণক্ষমতার কার্গো জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে। ফলে পণ্যের পরিবহন খরচ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। ২০২৯ সালের মধ্যে বছরে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে।