<p>সদ্যোবিদায়ি সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর তা হু হু করে বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সদ্যোবিদায়ি আগস্ট মাসে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলার।</p> <p>দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৮.৮৮ শতাংশ। গতকাল রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।</p> <p>ব্যাংকাররা বলছেন, বিদায়ি সরকারের ওপর অনেকটাই বিরক্ত হয়ে এপ্রিলে রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা করেন প্রবাসীরা। এ কারণে ওই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে। তবে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর থেকে এটি অনেকাংশেই বেড়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাচারকারীরা সবাই চাপে থাকায় হুন্ডি অনেকটাই কমেছে। এ কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ছে।</p> <p>কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্ট মাসের পুরো সময়ে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলার, যা তার আগের বছরের (আগস্ট ২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। আর আগের মাস এপ্রিলে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩১ কোটি ডলার।</p> <p>তথ্য বলছে, মাসের প্রথম পাঁচ দিনে মাত্র ১২ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এলেও মাস শেষে তা দুই বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ মাসের প্রথম পাঁচ দিন গড়ে দিনপ্রতি রেমিট্যান্স এসেছিল দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে মাস শেষে প্রতিদিনে গড় সাত কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপ্রিল মাস থেকে টানা তিন মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এলেও জুলাই মাসে তা কমে যায় এবং দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এখন প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। তাঁদের সচেতন করা হচ্ছে। আগামী দিনে আরো বেশি পরিমাণ বৈধ পথে প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ওই মাসে ব্যাংকটি মোট ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক। ব্যাংকটি ২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের ২০ কোটি ৬০ লাখ এবং চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংক ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এ ছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।</p> <p>অন্যদিকে গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২১ আগস্টে এসেও তা একই অবস্থায় থাকে। তবে ২৮ আগস্ট তা কিছুটা বেড়ে ২০.৫৯ বিলিয়নে দাঁড়ায়।</p> <p>কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৫.৪৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে গত বুধবার জানিয়েছেন, দেশের রিজার্ভ এখন কমবে না।</p> <p>এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন হুন্ডি অনেকাংশে কমে এসেছে, সে কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে আরো বেড়ে আড়াই বিলিয়ন ছাড়াতে পারে। নতুন গভর্নর আসার পর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে ব্যাংকিং চ্যানেলে আরো বাড়বে বলে আসা ব্যক্ত করেন তিনি।</p>