<p style="text-align:justify">ক্ষমতায় থেকে আর্থিক খাতের সুশাসন নিয়ে বড় বড় বুলি ছাড়তেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। লোটাস কামাল নামে পরিচিত আওয়ামী লীগ সরকারের এই অর্থমন্ত্রী নিজের মেয়াদের বেশির ভাগ সময়ই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন। সুযোগ পেলেই ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিতেন। আদতে তিনি নিজেই ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একজন ঋণখেলাপি।</p> <p style="text-align:justify">২০১৪ সালে তিনি যখন দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বিদায় নিলেন তখন খেলাপির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকায়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের কারণে এখন সেই খেলাপি ঋণ গিয়ে পৌঁছেছে দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকায়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শেখ হাসিনার মতো এ সরকারের প্রশাসনেও বিরাশি ব্যাচের দাপট" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/20/1729390161-e72023644c72238404ad7533a0eda434.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শেখ হাসিনার মতো এ সরকারের প্রশাসনেও বিরাশি ব্যাচের দাপট</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/20/1437034" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি নিজ দপ্তরে ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কিন্তু তলে তলে নিজেই ঋণখেলাপি হয়ে বসে ছিলেন তিনি। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং। নামকাওয়াস্তে যার মালিক সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল এবং স্ত্রী কাশমেরী কামাল।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল মুস্তফা কামালের হাতে। সোনালী ব্যাংক থেকে কম্পানিটির ঋণের পরিমাণ এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর মাসিক কিস্তি ২৭ লাখ টাকা। তা-ও তিনি পরিশোধ করেন না। ফলে সেটা খেলাপি হয়ে পড়ে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আজ ২০ অক্টোবর দিনটি কেমন যাবে আপনার?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/20/1729390189-6a0fe32c3736658bde52846b7df05e01.gif" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আজ ২০ অক্টোবর দিনটি কেমন যাবে আপনার?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/10/20/1437035" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করেই কম্পানিটিকে ভালো গ্রাহক হিসেবে দেখিয়ে আসছিল সোনালী ব্যাংক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিমের মাধ্যমে। শুধু লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, খেলাপি হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত গ্রাহক বা আন-ক্লাসিফায়েড হিসেবে দেখানো হচ্ছিল থারমেক্স, মডার্ন স্টিল, গুলশান স্কিনসহ অনেক কম্পানিকে। পুরো তালিকাটিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার গোপন করা তথ্য পাওয়া যায় সে সময়।</p> <p style="text-align:justify">কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে অন্য সব কম্পানিকে খেলাপি করা গেলেও অদৃশ্য ক্ষমতার বলে টাকা পরিশোধ না করেও নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে রয়ে যায় লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং। সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান ধমকা-ধমকিও করেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত কর্মকর্তাদের।</p> <p style="text-align:justify">পরে এ বিষয়ে জানার জন্য সোনালী ব্যাংকে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তো দূরের কথা, কোনো উপস্থাপনা পরিচালক বা জেনারেল ম্যানেজার ওই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।</p> <p style="text-align:justify">তদন্ত কর্মকর্তাদের একজন জানান, তৎকালীন ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ছিল গভীর সম্পর্ক। তাই যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে নিয়মকে তোয়াক্কাই করতেন না মুস্তফা কামাল।</p> <p style="text-align:justify">তবে গোপন সূত্রে জানা গেছে, শুধু লোটাস ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের একাধিক কম্পানি ঋণ নিয়েছে সোনালী ব্যাংক থেকে। যার সবটাতেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">গত পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ সংকটে ফেলে গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তাঁর সময় ব্যাংক খাতে ভয়াবহভাবে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। পরিচালকরা যোগসাজশ করে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে গেছেন অবাধে। এতেও অর্থমন্ত্রী হিসেবে কোনো পদক্ষেপ নেননি মুস্তফা কামাল।</p> <p style="text-align:justify">মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এ সময় কয়েক গুণ বেড়েছে অর্থপাচার। পরিবারের ব্যবসার স্বার্থে আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রেখেছিলেন। তাঁদের ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বৈধ করার পাশাপাশি আয় বাড়াতে অনেক বিধান পরিবর্তন করে সুবিধা নিয়েছেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেননি। করোনা-পরবর্তী সব মন্ত্রী যখন নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন, তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন বাসায়।</p> <p style="text-align:justify">একদিকে মন্ত্রণালয়ের কাজে না থাকলেও ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সময় দিতে কার্পণ্য করেননি মোটেও। জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির প্রথমবার যে ১০টি সিন্ডিকেট চিহ্নিত হয়েছিল তার একটি আ হ ম মুস্তফা কামালের শ্যালক আরিফ হোসেনের। অ্যাসেস নামের এই প্রতিষ্ঠান মূলত ছিল মুস্তফা কামালের নিজস্ব কম্পানি। সে সময় তিনি পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">একইভাবে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তিনি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সিন্ডিকেটের দুটি লাইসেন্স তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল ও কন্যা নাফিসা কামালের নামে করেন। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—অরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল ও অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ। এর বাইরে রয়েছে অরবিটাল মেডিক্যাল সেন্টার ও গুলশান মেডিকেয়ার লিমিটেড।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শেয়ারবাজার কারসাজি</strong></p> <p style="text-align:justify">২০১০ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় লোটাস কামালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে। তিনি তখন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। নানা অভিযোগ থাকার পরও শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কোনো ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি লোটাস কামালকে। তাঁর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে নিঃস্ব হয়েছেন শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। লোপাট করে নেওয়া হয়েছে তাঁদের পুঁজি।</p> <p style="text-align:justify">২০১০ সালের কারসাজিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের পকেটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা গেছে বলে বিভিন্ন তদন্তে জানা যায়। লোটাস কামাল শেয়ার জালিয়াতি করে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালের ওই কেলেঙ্কারির পর কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ভবন নির্মাণে অনিয়ম</strong></p> <p style="text-align:justify">এদিকে রাজধানীর গুলশানে প্রভাব খাটিয়ে ১৪ তলার অনুমোদন নিয়ে ২০ তলা ভবন গড়ে তুলেছেন মুস্তফা কামাল। ১৪ তলার ওপরের ছয় তলাই বাড়ানো হয়েছে নকশায় ব্যত্যয় ঘটিয়ে। রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর সার্কেলে গুলশান এভিনিউ সংলগ্ন ৫৯ ও ৬০ নম্বর প্লট মিলিয়ে বিশাল ভবন বানিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।</p> <p style="text-align:justify">দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ হ ম মুস্তফা কামালের দাখিল করা নির্বাচনী হলফনামায় দেখা গেছে, লোটাস কামালের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪১ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৪ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ টাকা মূল্যের সম্পদ। তবে লোটাস কামালের পরিবারের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, তাঁদের দেশে-বিদেশে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ রয়েছে, তার ১ শতাংশও আয়কর ফাইলে নেই।</p>