অতি লোভে তাতী নষ্ট- এ প্রবাদটি আরো একবার সত্যি হলো সীতাকুণ্ডে ছিনতাই করে পালিয়ে গিয়েও আরো টাকার লোভ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্যের জীবনে। গতকাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে তারা হাজতে গিয়ে এ সত্যি উপলব্ধি করলেও এতে লাভবান হয়েছেন ইতিপূর্বে তাদের হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ট্রাক চালক।
থানা সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীর হাতিয়া থানার ইসলামপুর গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে মোঃ মামুন উদ্দিন (২৯) গত ১৮ আগস্ট দুপুরে ট্রাক নিয়ে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে সীতাকুণ্ডের শুকলালহাট পেট্টোল পাম্পের কাছে চা খাওয়ার জন্য দাড়ালে অজ্ঞান পার্টির দুই সদস্য তার সামনে এসে একটি গামছা মুখে লাগিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তিনি প্রথমে চোখে ঝাপসা দেখেন এবং অল্পক্ষণের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যান। এই সুযোগে তারা পকেটে থাকা নগদ ২০ হাজার ৩০০ টাকা, দামী মোবাইল ফোন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইকার্ডসহ মূল্যবান সব কিছু নিয়ে যায়।
এদিকে সফলভাবে ছিনতাই শেষ করে পালিয়ে গিয়েও তারা আবার গত ২৬ আগস্ট একটি নম্বর থেকে তার মোবাইলে ফোন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ভোটার আইডি কার্ড ফেরত পেতে হলে বিকাশে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এ প্রস্তাব শুনে ভুক্তভোগী ড্রাইভার মামুন সীতাকুণ্ড থানা পুলিশকে জানান।
ওসি মো. ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক সব জেনে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য ফাঁদ পাতেন। তারা ড্রাইভারকে বলেন লাইসেন্স ও আইডি কার্ড নিয়ে হাতে হাতে টাকা দেবার প্রস্তাব দিতে।
এতে ছিনতাইকারীরা রাজি হয়ে তাকে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডের শুকলালহাটে আসতে বলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা উপজেলার বাড়বকুণ্ড ফুটওভার ব্রীজের কাছে গিয়ে সেই নম্বরে ফোন করলে ইকবাল হোসেন (২৩) নামে এক ছিনতাইকারী আইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আসেন। এ সময় মামুন তাকে ডেকে টাকা দেবার সময় সেখানে পূর্ব থেকে পাগলের ছদ্মবেশে থাকা পুলিশের এ.এস.আই আব্দুল্লা আল আমিন ও চালক মামুন মিলে তাকে ধরে ফেলেন। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে শুকলালহাট তেলিবাজার এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম (৩২) নামক অপর ছিনতাইকারীকেও আটক করা হয়।
ইকবাল বাড়বকুণ্ডের মধ্যম মাহমুদাবাদ তেলিপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে এবং জাহাঙ্গীর একই গ্রামের জহুরুল হকের ছেলে। পরে এ ঘটনায় ট্রাক চালক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, একবার গাড়ি চালক মামুনকে অজ্ঞান করে সব টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুই অজ্ঞান পার্টির সদস্য। তারপর তার আইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ফেরতের নাম করে আবারো ১০ হাজার টাকা আদায় করতে গিয়েই বিপদে পড়ে তারা। এই টাকা নিতে আসবে জেনে আমরা এএসআই আব্দুল্লা আল আমিনকে পাগলের ছদ্মবেশে পূর্ব থেকে সেখানে রেখে পরে গাড়ি চালককে সেখানে পাঠাই।
এরপর টাকা লেনদেনের সময় প্রথম ইকবাল ও পরে জাহাঙ্গীর নামক দুই অজ্ঞান পার্টির সদস্যকে আটক করে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ভোটার আই কার্ড উদ্ধার করি।