<p style="text-align:justify">স্কুল একটি, সেখানে প্রধান শিক্ষকের পদও একটি। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ছয়ঘরিয়া শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ারের দাবিদার দুজন। তাদের এই পদ নিয়ে মামলা, আন্দোলনে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এর সমাধান চেয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।</p> <p style="text-align:justify">মূলত বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন সেলিনা বেগম। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী তাকে বরখাস্ত করেন। একই সঙ্গে আঞ্জুমানারা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের আদেশে আগের পদে ফিরেছেন সেলিনা বেগম।</p> <p style="text-align:justify">তবে সেলিনা বেগম পদে বহাল হওয়ার পরই বাধে বিপত্তি। শুরু হয় আন্দোলন। সেলিনা যোগদান করতে গেলে কয়েকজন বাধাও দেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা পর্যন্ত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিদ্যালয়ে গেলে ওই সেলিনা বেগমকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে ওই তাকে উদ্ধার করেন। এর আগে এলাকাবাসীও তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে।</p> <p style="text-align:justify">সেলিনা বেগমের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক এক আদেশে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ইউএনও) চিঠির মাধ্যমে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে পুনর্বহাল করেছেন। সেই কাগজপত্র নিয়ে যোগদানের পর বাইরের কিছু লোকজন ও বিদ্যালয়ের দু-একজন কর্মচারী এতে বাধা দেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘মূলত আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করে মামলা করায় কিছু লোকজন আমার ওপর ক্ষিপ্ত। বিদ্যালয়ের স্বার্থেই আমি মামলা করেছি। এর পর থেকেই তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এটা-সেটা করছে। আমি নিয়ম মেনে যা করার করব।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে আঞ্জুমানারা বেগম সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন অভিযোগে সেলিনা বেগমকে বরখাস্ত করেছেন। আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। এর পর থেকে আমি দায়িত্ব পালন করছি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সেলিনা বেগম কিছুদিন আগে পুনর্বহাল হয়েছেন বলে শুনেছি। তিনি বিদ্যালয়ে না আসা পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালন করব।’</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে সেলিনা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এখন আবার তাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের জন্য একটি স্মারকলিপি পেয়েছি, যেটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই বিষয়টির সমাধান করা যাবে।’</p> <p style="text-align:justify">বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেলিনা বেগম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মোবারক হোসেনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয় ১০ জুলাই মোবারক হোসেনের মৃত্যুর পর।</p> <p style="text-align:justify">ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের দেওয়া মামলায় মানসিক চাপেই তিনি মারা যান বলে অভিযোগ ওঠে। এর আগে ২৬ মে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ওই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়।</p> <p style="text-align:justify">এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলছে। কয়েক মাস ধরে বিদ্যালয়টিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সর্বশেষ রবিবার ছয়ঘরিয়াসহ আশপাশের নয়টি গ্রামের মানুষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে গত শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে ওই শিক্ষকের পক্ষে মানববন্ধন করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ অভিভাবকরা এতে অংশ নেন। এ সময় শিক্ষককে লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও তাকে নিজ দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।</p>