<p>নারায়ণগঞ্জ জেলার কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংপুর গ্রামে সাধুসংঘ ও লালন মেলা বন্ধ এবং মেলায় আগত সাধু ও লালন ভক্তদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জে ৭১টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। রবিবার (২৪ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল এক প্রতিবাদ লিপির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।</p> <p>প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির আয়োজনে ২২ ও ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে বাধা দেয় একটি মহল। দশ বছর ধরে পালন করে আসা এই মেলায় কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু ও লালন ভক্তরা অংশ নেন। বহু ধর্ম, বহু মত-পথ এবং বহু জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলনে গড়ে উঠেছে এই সংস্কৃতি। লালন মেলা বন্ধকে এই সংস্কৃতির ওপর আঘাত ও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন তারা। </p> <p>প্রশাসনের এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বহু মত-পথকে, বহুত্ববাদকে ধারণ করে বৈষম্যে বিরুদ্ধে যে প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের অবস্থান তার বিরুদ্ধে।</p> <p>বিবৃতিদাতা সংগঠনসমূহ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা কমিটি, বাসদ জেলা কমিটি, গণসংহতি আন্দোলন জেলা কমিটি, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা কমিটি, ন্যাপ জেলা কমিটি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা কমিটি, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, প্রগতি সাহিত্য পরিষদ, প্রগতি লেখক সংঘ, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জেলা জমিটি, খেলাঘর জেলা কমিটি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, সমমনা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উন্মেস সাংস্কৃতিক সংসদ, এই বাংলায়, হাওয়াইয়ান গিটার পরিষদ, কথন আবৃত্তি সংগঠন, কণ্ঠমালা আবৃত্তি সংসদ, অর্চনা একাডেমি, ষড়জ সাংস্কৃতিক অঙ্গন, ঐকিক থিয়েটার, উঠান থিয়েটার, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ প্রভৃতি। </p> <p>২১ নভেম্বর সাধুসংঘ ও লালন মেলা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, এই মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় হেফাজতের নেতারা দাবি জানিয়েছেন। মেলার অনুমতি দেওয়া হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এই মেলার অনুমতি প্রদান করিনি।</p> <p>১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এই মেলাকে ঈমান বিধ্বংসী আখ্যা দিয়ে মেলা বন্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে জড়ো হয়ে সেখানে বক্তব্য দেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল। </p> <p>তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মুসলিম তৌহিদী জনতা আপস করতে রাজি না। প্রয়োজনে হাত দিয়ে বাধা দিব। যা কিছু এখানে হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এটা না হয়। অপ্রীতিকর কিছু হলে তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।</p> <p>এই হুমকির প্রতিবাদে ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন মুক্তিধাম আশ্রমের লোকজন এবং নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা। </p> <p>মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের মত প্রকাশ, ধর্ম পালন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। নির্বিঘ্নে মেলা আয়োজনের জন্য রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের কাজ করতে হবে। এই দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে। সব ধর্ম, বর্ণ ও মতের মানুষের বসবাস এই দেশে। এখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। নিজের মত আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তার কণ্ঠরোধ করা শুধু চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধেই নয়, এটি সংবিধানেরও বিরোধিতা।</p>