গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রী ও স্ত্রীর বোনকে উত্ত্যক্তকালে প্রতিবাদ করায় এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে নেশায় মত্ত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে তারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ঘটনার পর প্রায় ১০ মিনিট সময় তারা সেখানে উল্লাস করে।
গতকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত প্রায় আড়াইটার দিকে শ্রীপুর পৌর শহরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড মসজিদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছার আগেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
আরো পড়ুন
এবার প্রতিশোধের কথা জানালেন সাঈদীর ছেলে
নিহত ওষুধ ব্যবসায়ীর নাম হাসিবুল ইসলাম বাদশা (৪০)। তিনি ওই এলাকার আবদুল হাইয়ের ছেলে। সেখানে ‘মা মনি’ নামে তার একটি ওষুধের দোকান রয়েছে।
হাসিবুল ইসলাম বাদশার গাড়িচালক শিমুল হোসেন জানান, তার স্ত্রী ও সন্তান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে শ্যালক-শ্যালিকাসহ তার স্ত্রী ও সন্তান বাড়ি ফিরছিলেন। রাত প্রায় আড়াইটার দিকে তার (বাদশা) বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই কিশোর গ্যাংয়ের ৮ থেকে ১০ জন সদস্য ঘিরে ধরে। তারা বাদশার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে উত্ত্যক্ত করছিল।
আরো পড়ুন
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর
শিমুল হোসেন অভিযোগ করেন, গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢোকার সময় বাদশার স্ত্রী ও শ্যালিকার শরীর স্পর্শ করে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য। ওই সময় বাদশা কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্যকে ‘ভাগিনা’ বলে সম্বোধন করে চলে যেতে অনুরোধ করেন। এতে তাকে (বাদশা) ধরে বেদম মারধর করে গ্যাংটির সদস্যরা। একপর্যায়ে তিনি ভেতরে ঢুকে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন। পরে প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে বাদশাকে নির্মমভাবে পেটায় তারা।
ওই সময় বুকে ইট দিয়ে আঘাত করে। নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে ঘিরে গ্যাংটির সদস্যরা প্রায় ১০ মিনিট সেখানে উল্লাস করে।
শিমুল অভিযোগ করে জানান, কিশোর গ্যাংয়ের ওই সদস্যরা মাতাল ছিল।
আরো পড়ুন
বই উৎসবের ব্যানারে হাসিনার ছবি, যা বললেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
হাসিবুল ইসলাম বাদশার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জানান, রুবেলের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন কিশোর তার স্বামীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নির্মম নির্যাতনে তার স্বামী সেখানে প্রস্রাব করে দিয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, রুবেলকে তার স্বামী ‘ভাগিনা, বাবা’ বলে সম্বোধন করে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। বারবার চলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা থামেনি, তাকেসহ তার ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করছিল। নির্যাতনের পর তার স্বামীকে নিস্তেজ অবস্থায় ফেলে যাওয়ার পর তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তারা মাওনা চৌরাস্তা আলহেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, ‘রাত তিনটার দিকে হাসিবুল ইসলাম বাদশাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’
আরো পড়ুন
চুয়াডাঙ্গায় আবারও শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা নামল ৯.৮ ডিগ্রিতে
শ্রীপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯-এ ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।’
থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘ঘটনার পরপর পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত রুবেলসহ অন্যদের আটক করার চেষ্টা চলছে।’