হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মহাসড়কের চালক ও যাত্রীরা। ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের চলন্ত বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করতে দেখা যায়।
হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় গত জুলাই মাসের ২ তারিখ কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান মিস্টন নামে এক ফার্মেসির মালিক চাঁদা না দেওয়ায় হাতির শুঁড় দিয়ে আঘাত করে। সেই আহতে মারা যান তিনি।
চাঁদার কবল থেকে মুক্ত নয় রাস্তার পাশের দোকানিরাও। হাতিকে টাকা দেওয়া ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। আবার টাকা কম দিলেও না নেওয়ার অভিযোগ হাতি পরিচালকের বিরুদ্ধে। আর এতে ভোগান্তিতে আছেন এই রোডে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা।
মঙ্গলবার নান্দাইল-ত্রিশাল সড়কের খালেকের মোড়ের আগে একটি হাতিকে দেখা যায়। সড়কের উভয় দিক থেকে আসা-যাওয়া সব ধরনের যানবাহন আটকিয়ে চাঁদা নিচ্ছে এই হাতি। মাহুত হিসেবে (পরিচালনা) রয়েছেন একজন কিশোর। তার নাম জীবন।
বাড়ি রাজশাহীর বোদা উপজেলায় বলে জানায়।
এ পর্যন্ত কত কামাই হয়েছে জানতে চাইলে মাহুত জীবন মিয়া হাতের একটি ব্যাগ দেখিয়ে বলে, এই যে স্যার।
এক সপ্তাহ আগেও এই রোডে চাঁদাবাজি করতে দেখা গেছে নবী হোসেন নামের এই যুবককে। তার বাড়ি বলেছিল নওগাঁ। গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম সড়কের মাঝে যানবাহন থামিয়ে ইচ্ছে মতো চাঁদা আদায় করছিলেন তিনি।
চাঁদা আদায় ছাড়া কোনোভাবেই তার বাধা অতিক্রম করতে পারছিলেন না চালকরা। কেউ কেউ হাতিকে এড়িয়ে যেতে দ্রুতগতিতে বিপজ্জনকভাবে রাস্তার পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতেও দেখা গেছে। চাঁদা না দিলে হাতি দিয়ে ভয় দেখানোর অনেক অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী সিএনজিচালক রমজান কালের কণ্ঠকে জানান, ৩০ টাকার ভাড়ায় ১০ টাকা চাঁদা দিলাম, আর এটাই শেষ না, আবার দেখা হলে আবারও দিতে হবে। আমরা ব্যস্ত সড়কে বিপজ্জনক হাতি দেখতে চাই না।
নান্দাইল কানুরামপুর থেকে ত্রিশালে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আমজাদ আলী। তিনি বলেন, 'মোটরসাইকেল চালিয়ে নির্বিঘ্নে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ হাতির শুড় এগিয়ে এলে হতবিহ্বল হয়ে যাই। এতে নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছিলাম। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি।'
বেতাগৈর গ্রামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, 'হাতিরে টেহা না দিয়া তাড়াতাড়ি যাইতাম চাইচলাম। কিন্তু হাতির ডরে যাত্রীরা গাড়িততে নাইম্যা যায়। এতে আমার অটোডা প্রায় পইর্যা গেছিন।'
তবে হাতির মাহুত (পরিচালক) এটাকে চাঁদাবাজি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, সার্কাস বন্ধ থাকায় হাতিকে লালনপালন করতে মানুষের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা চেয়ে নিচ্ছেন। কেউ না দিলে তার ব্যাপারে কোনো জোরাজুরি নেই।