ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দিন দিন বাড়ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) তৎপরতা। বিশেষত উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর থানার সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে শিলিগুড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—সীমান্ত সিল করা হচ্ছে। কোনো ধরনের সন্দেহজনক চলাচল দেখলেই নেওয়া হবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা।
শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে চরম সতর্কতা :
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখা মাত্র ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সরু ভূখণ্ড—যাকে বলা হয় শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন নেক’। এই অংশটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সর্বোচ্চ সতর্কতা।
সরকারের শীর্ষ মহলের ধারণা, এই অংশটির মাধ্যমে চীন-সমর্থিত কোনো গুপ্তচর বা অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পড়তে পারে। এ জন্য শিলিগুড়ি করিডরকে ঘিরে সীমান্ত নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ স্তরে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও চীনের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ :
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ের চীন-বাংলাদেশ সামরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের খবরের পর ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শঙ্কা আরো বেড়েছে।
স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের শঙ্কা :
এই করিডরে চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা নিয়ে আরেকটি আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে এই সুযোগটা হতে পারে মোক্ষম।
ভারতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা যদি এই করিডরে দুর্বলতা দেখায়, তাহলে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে।
সীমান্ত এলাকায় গ্রামে গ্রামে সতর্কবার্তা :
উত্তর দিনাজপুর, ইসলামপুর, কোচবিহার—এই অঞ্চলের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বিএসএফের পক্ষ থেকে সরাসরি মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাতের বেলায় অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা এড়িয়ে চলতে এবং সন্দেহজনক কোনো কিছু চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন বা বিএসএফকে জানাতে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিদিন মাইকিং হচ্ছে। সীমান্তে আগের চেয়ে অনেক বেশি সৈন্য দেখা যাচ্ছে।
আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।’
আন্তর্জাতিক উত্তেজনার ছায়া :
এই পুরো পরিস্থিতি আঞ্চলিক ভূরাজনীতির এক গভীর উত্তেজনার ইঙ্গিত বহন করে। চীন-ভারত সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশকেও বিভিন্ন কৌশলগত মেরুকরণে টানার চেষ্টা করছে দুই দেশই। এই প্রেক্ষাপটে সীমান্তে এমন নিরাপত্তা জোরদার করা, মাইকিং করে সতর্কতা জারি করা এবং চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। কিন্তু সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ পড়েছে নতুন এক দুশ্চিন্তার মধ্যে। ভারতের এই নিরাপত্তা তৎপরতা ভবিষ্যতে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।