আদালতের কর্মচারীদের ঘুষ গ্রহণের ফি নির্ধারণকে কেন্দ্র করে বিতর্কের পর শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আদালত সেবা গ্রহণে অনিয়মের শিকার হলে সরাসরি অভিযোগ জানানোর জন্য অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে, পাশাপাশি হটলাইন, ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল বাশার মিঞা এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
বিজ্ঞপ্তিটি জেলা ও দায়রা জজ, আদালতের বিচারক, আদালত পুলিশ, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), জেলা তথ্য অফিসার, আইনজীবী সমিতি ও প্রেস ক্লাবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আরো পড়ুন
হিমাগার ছেড়ে পালাল কর্তৃপক্ষ, আলু নিয়ে বিপাকে কৃষকরা
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী সমিতির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সম্প্রতি শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতি এক সভায় বিভিন্ন মামলায় আদালতের পেশকার, পিয়ন ও কোর্ট পুলিশের জন্য উৎকোচের পরিমাণ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। গত ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই সভার কার্যবিবরণী বিভিন্ন কর্মচারী, আইনজীবী ও তাদের সহকারীদের কাছে পাঠানো হয়, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসনকে গতকাল ১৬ মার্চ রবিবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। বিতর্কের জেরে শরীয়তপুর আদালতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে বিচারিক সেবাকে আরও স্বচ্ছ করতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, প্রত্যেকটি অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ ও পর্যালোচনা করা হবে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। "দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স" দুর্নীতিমুক্ত বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিচার বিভাগীয় এই নির্দেশনার অনুলিপি ইতোমধ্যে জেলা ও দায়রা জজ, আদালতের বিচারক, আদালত পুলিশ,জেলা তথ্য অফিসার,পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), আইনজীবী সমিতি ও প্রেস ক্লাবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ জানানোর মাধ্যমসমূহ, অভিযোগ বাক্স: চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বাইরে স্থাপিত।
হটলাইন: ০১৭৭৮৮৪২৯৪৯, ভিডিও, অডিও বা ছবি সংযুক্ত করে অভিযোগ জানানোর সুযোগ, ই-মেইলে বিচার প্রার্থী, আইনজীবী ও সাধারণ জনগণকে যে কোনো ধরনের ঘুষ গ্রহণ, প্রদানের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সামছুল হক সরকার কালের কণ্ঠকে জানান, শরীয়তপুর আদালতের কোনো কর্মচারী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আইনজীবী সমিতি নিজেদের স্বার্থে একটি ফি নির্ধারণ করলেও বিচার বিভাগ তা সমর্থন করে না। দুর্নীতিতে আদালতের অবস্থান জিরো টলারেন্স।
আরো পড়ুন
এফডিসি এখন ভূতুড়ে বাড়ির মতো : নূতন
তিনি আরো বলেন, আদালতের কর্মচারীদের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এজন্যই অভিযোগ গ্রহণের নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শরীয়তপুরের আইনজীবী ও কয়েকজন বিচার প্রার্থীরা বলেন, বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।