কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অভিযুক্ত আবুল হোসেন প্রিন্স কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলা শাখার অধীনস্থ সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন প্রিন্সকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হল।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন।
এর আগে রবিবার (১৬ মার্চ) ভোররাতে ছাত্রদল নেতা প্রিন্স ও তার ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন— কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ভাদার্ত্তীর এলাকার মোশারফ হোসেনের ছেলে আবুল হোসেন প্রিন্স (২৫), ছাত্রদল কর্মী ভাদার্ত্তীর নয়ন মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২৪), মুনসেফপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (১৯), বালীগাঁও এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে রিয়ান রহমান (১৯), হাফিজ উদ্দিন সুমনের ছেলে কামরুজ্জামান চয়ন (১৮) এবং শফিকের ছেলে সিহান হোসেন (১৮)।
স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মসজিদে সুদের বয়ান করা নিয়ে ইমামের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় স্থানীয় হরমুজের ছেলে খোকন (৫৫), সোহেল (৪৮), সুমনসহ (৪৮) কয়েকজনের।
এ নিয়ে ইমামের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা নিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলজার হোসেনের (৪৩) সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ান দুইপক্ষ। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে বিএনপি নেতা গোলজার ও তার সমর্থকদের ওপর ফের হামলা করেন খোকন ও তার সহযোগীরা। পরে খোকন কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিন্সকে খবর দিলে ইফতারের আগ মুহূর্তে প্রিন্সের নেতৃত্বে ছাত্রদলের ১০-১৫ জনের একটি দল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা গোলজার ও তার সঙ্গে থাকা বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ, শামীম, সিরাজ মিয়া, আক্তার ও মোক্তারের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জরুরি বিভাগে পুনরায় চিকিৎসা সেবা শুরু হয়।
এ ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা হলে রাতেই অভিযান চালিয়ে ছাত্রদল নেতা প্রিন্স ও তার ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সকাল ৯টার দিকে থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিতে থানার প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে রবিবার দুপুরে গ্রেপ্তার ৬ জনসহ অজ্ঞাত আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।
ঘটনার পর কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শামিমা জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা চলাকালে হামলা হয়।
আমরা তখন নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইমরান খান জানিয়েছেন, রোগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার কারণে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হলেও বর্তমানে তা স্বাভাবিক রয়েছে।
কালীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম প্রধান জানিয়েছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, সরকারি কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় ছয়জনকে রোববার গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।