বিশ্ব ইজতেমায় জঙ্গি হামলার হুমকি দেওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ও দেশ নাটকের কর্ণধার এহসানুল আজিজ বাবু রিমান্ডে। তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর মেট্রো থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে জিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ।
আরো পড়ুন
নির্বাচন নিয়ে কমিশনের ওপর কোনো চাপ নেই : আলী রীয়াজ
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার তাকে গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে হাজির করে আরো তথ্য-প্রমাণ উদঘাটনের জন্য পুলিশ তার দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন আদালতে উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণাদি বিবেচনায় নিয়ে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি সমাপ্ত হওয়া তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইজতিমায় জঙ্গি হামলার হুমকি দিয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ঘটনাটি তখন লাখ লাখ মুসল্লির মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
পরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি সাইবার টিমের সহযোগিতায় হুমকিদাতা আলামিন হোসেন নামের এক যুবলীগকর্মীকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মহানগরীর শিমুলতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে আসামি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। তার স্বীকারোক্তি ও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সদর মেট্রো থানার এসআই মাসুদ আনোয়ার আকন্দ বাদী হয়ে সদর মেট্রো থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন/২০০৯-এ একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ রনি সরকার, সাইফুর রহমান শাওন, সিয়াম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এহসানুল আজিজ বাবুকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হাউজিং সোসাইটি এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনকালে সাইবার পেট্রোলিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফরম ও গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, মো. আলামিন হোসেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড যথা— জননিরাপত্তা বিঘ্নিত, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অন্য আসামিদের যোগসাজশে উপরোক্ত কর্মকাণ্ড করছে।
প্রাপ্ত সংবাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে মৌখিক অনুমতিক্রমে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জিএমপি সদর থানাধীন শিমুলতলী এলাকার মো. আলামিন হোসেনকে ওই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আরো পড়ুন
‘রিজার্ভ না বাড়ার ৪ কারণ’ পোস্টে শেয়ার করলেন আসিফ নজরুল
তার স্মার্ট মোবাইল ফোন, ব্যবহৃত সিম পর্যলোচনা করে দেখা যায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মো. আলামিন হোসেন তার মোবাইলের ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ ‘চুমকি আপার সৈনিক’ থেকে পোস্ট দেয় যে, ‘আগামীকাল গাজীপুরে জঙ্গি হামলা হবে জুম্মার নামাজের পর- এমন তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। গাজীপুরে যারা আছেন, এই মেসেজটি সবাইকে জানিয়ে দেন’ সন্দেহজনক লিংকগুলো পাওয়া যায়।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদকালে সে রনি সরকারসহ কতিপয় ব্যক্তির নাম বলে।
পরে এলআইসি শাখা মোবাইল পর্যালোচনা করত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’, ‘মুজিব ভাই’, ‘আওয়ামী লীগ যুব লীগ’ এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ-১. ‘জুম ব্রিগেড’ (আমেরিকাপ্রবাসী রাব্বি ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর ওই গ্রুপের অ্যাডমিন ও অর্থদাতা), ২. ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অনেক সাব-গ্রুপ (ক্রিয়েটর রনি সরকার) সন্ধান পাওয়া যায়।
ওই রনি সরকার আসামি আলামীনের সহযোগী। উক্ত গ্রুপের অ্যাডমিন ও নিরাপত্তা সেটিংয়ের দায়িত্বে ধৃত আসামি আলামীন। এ গ্রুপের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সাইবার অপরাধ করছিল। গ্রুপগুলো বিশ্লেষণপূর্বক মো. আলামীন হোসেনকে (৩৩) নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে সহায়তা করার কারণে মো. রনি সরকারকে
গ্রেপ্তার করা হয়।
ধৃত আসামি মো. আলামিন হোসেন ও অন্য আসামিরা অনলাইন গ্রুপগুলো পরিচালনা করে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ করার নির্দেশনা প্রদান করে এবং সে নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা প্রচার করে।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মো. আলামিন হোসেনের মোবাইল থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামিরা ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপরোক্ত লিংক পেজ ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের ওপর হামলা, আক্রমণ, গুলি বর্ষণসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এ ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা/২০২৫ চলাকালীন ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে এবং গাজীপুর মহানগরের সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অনলাইনভিত্তিক অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে, অর্থায়ন করে, অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। যা সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ সংশোধনী ২০১৩-এর ০৬/০৭/১০ ধারার অপরাধ।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল ফোন ও তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃত ও পলাতক আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকিমুলক বিভিন্ন কাজে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।