বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের শাপলার বিলে এখনও আগুন জ্বলছে। দুই দিনেও আগুন সম্পূর্ণ নিভানো সম্ভব হয়নি। আজ সোমবার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে আগুন, আবার কখনো ধোঁয়া দেখা গেছে। প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ভোলা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নিভানোর কাজ চলছে।
তবে ভোলা নদীর জোয়ারের পানি আগুন নিভানোর একমাত্র ভরসা। ভাটার সময় নদীতে পানি না থাকায় আগুনে পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এরমধ্যে প্রায় পাঁচ একর বনভূমি আগুনে পুড়ে গেছে। ফায়ার ব্রিগেড, বন বিভাগ এবং স্থানীয় গ্রামবাসী আগুন নিভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
একটানা চলছে আগুন নিভানোর কাজ। তবে এই মুহুর্তে আগুনের ভয়াবহতা নেই বলে ফায়ার ব্রিগেড এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
খুলনা ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান জানান, 'প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে ভোলা নদীতে পাইপ লাইন স্থাপন করে পাম্পের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নিভানোর কাজ চলছে। রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা পানি দিয়ে আগুন নিভানোর কাজ শুরু করেন।
সেই থেকে একটানা আগুন নিভানোর কাজ চলছে। কিন্তু ভোলা নদীর জোয়ারে উপর নির্ভর করছে আগুন নিভানোর কাজ।' ভাটার সময় নদীতে পানি না থাকলে আগুনে পানি দেওয়ার কাজ বন্ধ থাকে বলে তিনি জানান।
সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান আরো জানান, এই মুহুত্বে সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুনের ভয়াবহতা নেই। সকালেও থেমে থেমে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
সেই সাথে মাঝে মধ্যে ধোঁয়া উড়ছে। রবিবার রাতভর ৮টি ফায়ার স্টেশনের ৪১ জন এবং সোমবার সকালে ৬টি ফায়ার স্টেশনের ৩৫ জন সদস্য আগুন নিভানোর কাজে অংশ নিয়েছেন।'
কাছাকাছি পানির উৎসহ এবং পর্যাপ্ত পানি থাকলে অল্প সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো বলে তিনি জানান। তবে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, 'আগুন যাতে সুন্দরবনে ছড়াতে না পারে এজন্য শাপলার বিল এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়েছে। আগুন ওই ফায়ার লেন অতিক্রম করতে পারেনি। গাছ আর লতাপাতার কারণে ফায়ার লেনের ওই ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সব স্থানে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি।'
এসিএফ দ্বীপেন চন্দ্র দাস আরো জানান, সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটলে কাছাকাছি পানির উৎসহ না থাকায় আগুন নিভাতে বেগ পেতে হয়। ভোলা নদী থেকে আগুনের ওই স্থান প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরে। পলিমাটি জমে ভোলা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে সব সময় নদীতে পানি থাকে না। পানির জন্য শুধুমাত্র জোয়ারের উপর নির্ভর করতে হয়। ভাটার সময় নদীতে পানি না থাকলে আগুনে পানি দেওয়া সম্ভব হয় না।'
এসিএফ দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, শাপলার বিল এলাকায় যে স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে বলা যাতীয় গাছ এবং বিভিন্ন লতাপাতা বেশি রয়েছে। তাদের প্রাথমিক ধারণা, আগুনে পাঁচ এককর বনভূমি পুড়ে গেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, 'আগুন নিভানোর কাজ চলছে। বন বিভাগ, ফায়ার স্টেশন, সিপিজি, ভিটিআরটি এবং গ্রামবাসী আগুন নিভানোর কাজে অংশ নিয়েছে। সুন্দরবনের টেপার বিলে আগুনের ঘটনায় গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে শাপলার বিলে আগুনের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সুন্দরবনে আগুনের সুত্রপাত এবং আগুনে জীববৈচিত্রের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।'
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের শাপলার বিলের আগুনের আগে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলা জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় শনিবার সকাল ৭টার দিকে আগুন জ্বলতে দেখে বন বিভাগ।
পরে ফায়ার ব্রিগেড কর্মী এবং স্থানীয় গ্রামবাসী চেষ্টা চালিয়ে রবিবার দুপুরে টেপার বিলের আগুন সম্পূর্ণ ভাবে নির্বাপণ করতে সক্ষম হয়। টেপার বিলের আগুনে প্রায় চার একর বনভূমি পুড়ে গেছে। টেপার বিলের আগুনের সুত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এর একদিন পর রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাট জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির ২৩ শের সিলার শাপলার বিল এলাকায় গহীন বনে আগুন দেখতে পায় বন বিভাগ। এর পর শুরু হয় আগুন নিভানোর কাজ। আগুন যাতে বনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্য শাপলার বিল এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়।
বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, সিপিজি, ভিটিআরটি এবং স্থানীয় গ্রামবাসী আগুন নিভানোর কাজে অংশ নিয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত আগুন নিভানোর কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে একদিনের ব্যবধানে সুন্দরবনের দুই স্থানে ৭ কিলোমিটারের দুরত্বে আগুনের ঘটনায় বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।