২০২১ সালের ২১ জুলাই ছিল ঈদের দিন। ঈদ শেষে ঘুরতে বের হওয়া যাত্রী বোঝাই ব্যাটারি চালিত তিন চাকার একটি অটোরিকশাকে রক্ষা করতে দুই কোচের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত আরো ১৫ জন। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদসংলগ্ন রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কে আনজিরনেছা কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বন্ধে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি। মাঝেমধ্যে জেলা, মহানগর ও হাইওয়ে পুলিশ এ নিয়ে মামলা দিয়ে মহাসড়কে এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নিলেও কার্যত কোনো কাজই হচ্ছে না। ঈদকে ঘিরে মহাসড়কে চাল চলাচল তিনগুণ বেড়েছে। বেড়েছে তিন চাকা যানের সংখ্যাও।
এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রংপুর-দিনাজপুর ও রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রায় শঙ্কা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আরো পড়ুন
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে কুড়িগ্রামের ৫ উপজেলায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত
গতকাল শনিবার (২৯ মার্চ) রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ফ্রি স্টাইলে চলাচল করছে। বেপরোয়া এই অটোরিকশার কারণে দ্রুতগামী বাস, মিনিবাস ও নাইটকোচকে এলোমেলোভাবে চালাতে হচ্ছে।
একটি পরিবহনের সঙ্গে আরেকটি পরিবহণ অতিক্রম করার সময় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে চালককে।
মহাসড়কটির রংপুরের মেডিক্যাল মোড় থেকে সৈয়দপুর অংশে প্রায় ৪০ কিলোমিটারে অবাধে চলাচল করছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান। কোথাও কোথাও প্রকাশ্যেই চলছে নছিমন, করিমন, ভটভটিও। মহাসড়কের ওপরেই বসা বিভিন্ন স্ট্যান্ডে থাকা সারি সারি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন। মহাসড়ক দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছেন তারা।
দূরপাল্লার বাস, মিনিবাসের সঙ্গে অসংখ্য অটোরিকশা যাত্রী তুলছেন। সেখান থেকে মহাসড়কের ওপর দিয়ে সৈয়দপুর, পাগলাপীরসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে ধরে চলে যাচ্ছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব যানবাহন চললেও নেই কোনো আইনি পদক্ষেপ। দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে তারাগঞ্জসহ বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ অবস্থান করলে, সেই পয়েন্ট ছেড়ে অন্যরুটে চলে যাচ্ছে এই অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার। সে কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এই তিন চাকার বাহনকে। একই অবস্থা রংপুর সাতমাথা থেকে কুড়িগ্রাম মহাসড়কেও। কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই চলছে অটোরিকশা।
হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সড়কে যে দুর্ঘটনা ঘটে এসবের মধ্যে অটোরিকশা ও যাত্রীদের বাঁচাতেই দুর্ঘটনাগুলো বেশি হয়েছে। কিছু কিছু দুর্ঘটনা হয় রাতে, সেগুলো চালকদের অসাবধানতাবশত হয়।
আরো পড়ুন
বাংলাদেশিসহ লাখো বিদেশির স্বপ্ন ধূলিসাতের উপক্রম
বাসচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘তিন চাকার যানগুলো মহাসড়কে চলার কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। এরা যেখানে সেখানে ওভারটেকিং করে, যেখানে সেখানে যাত্রী নামায় ও মোড় টার্নিং নেম, তারা সড়কে কোনো সিগনাল মানে না, কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ হয় আমাদের বড় গাড়ির চালকদের।’
আরেক বাসচালক নাসির মিয়া বলেন, ‘মহাসড়কে অটোরিকশার কারণে আমাদের গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হয়। তারা সড়কে গাড়ি চালানোর নিয়ম-নীতি বোঝে না। আসন্ন ঈদ ঘিরে তারা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে।’
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, বগুড়া -রংপুর -সৈয়দপুর -দশ মাইল ও বাংলাবান্ধা এই ২৫০ কিলোমিটারের মহাসড়কটি যানজট মুক্ত এবং অপরাধমুক্ত রাখতে গোবিন্দগঞ্জ বাজার, মায়ামনি মোর, পলাশবাড়ী, মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ী, পীরগঞ্জ বাজার, সৈয়দপুর এবং দশ মাইল এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, সেই সঙ্গে এ সমস্ত এলাকায় টহল পুলিশ দ্বিগুণ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহে ঈদ উদযাপন
হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে মহাসড়কে ইজি বাইক এবং থ্রি হুইলার চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত অন্যান্য সকল মালবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। হাতীবান্ধা থেকে সব বালু এবং পাথর বহনকারী ট্রাক চলাচল সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এবং বাজারে মহাসড়কের ওপর অবৈধ দোকান, পার্কিং উচ্ছেদ করা হয়েছে।’