রাতভর পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার, ১০ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের রেশ কাটতে না কাটতেই খুলনায় ঈদের রাতে আবারো চার স্থানে সন্ত্রাসী হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটল।
রবিবার (৩০ মার্চ) রাতে এ চারটি ঘটনার মধ্যে দু’টি ঘটেছে নগরীর সদর থানাধীন রূপসা বেড়িবাঁধ ও কাস্টমঘাট এলাকায় এবং অপর দু’টি জেলার রূপসা উপজেলা এলাকায়। চারটি ঘটনায় মোট তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ তিনজন হলেন- নগরীর রূপসা নতুন বাজার এলাকার শাওন চৌধুরী (২৯), এক নম্বর কাস্টমঘাট এলাকার বাসিন্দা ও ট্রলি চালক শেখ ফরিদ (৩২) এবং রূপসা উপজেলার রামনগর বরফ কলের সামনের মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম (৩২)।
গুলিবিদ্ধ তিনজনকেই খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খুলনা থানার ওসি হাওলাদার সনোয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে রূপসা বেড়িবাঁধ সড়কের বরফ কলের সামনে শাওন নামের এক যুবক বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলযোগে আসা তিন অস্ত্রধারী তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শাওনের ডান হাতে লাগে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
গুলির কারণ জানা যায়নি। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ শাওন কেএমপির সদর থানাধীন নতুন বাজার লঞ্চ ঘাটের পার্শ্ববর্তী তরিক গলির বাসিন্দা মো. শুকুর আলীর ছেলে।
এদিকে, রাতে নগরীর এক নম্বর কাস্টমঘাট এলাকায় মৃত শেখ আব্দুল মান্নানের ছেলে ট্রলিচালক শেখ ফরিদ (৩২) রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত স্থান থেকে তার পিঠের ডান দিকে গুলি লাগে।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে, নগরীতে দু’জনের গুলিবিদ্ধের ঘটনা ছাড়াও জেলার রূপসা থানা এলাকার পৃথক দু’টি স্থানে একই রাতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান বলেন, পূর্ব রূপসার বাগমারা এলাকার বাসিন্দা রুবেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাগমারা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ব্যাংকের মোড়ে আক্রমণ করে সন্ত্রাসীরা। মাগরিবের নামাজের সময় হওয়ায় রুবেল ঘটনাক্রমে সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে বেঁচে যান। ওই সময় মুসল্লিদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় অস্ত্রধারীরা পিস্তল বের করলেও তাকে গুলি করতে পারেনি।
উপস্থিত জনতা বেশি থাকায় সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে বলেও ওসি জানান।
অপরদিকে ওই মিশনে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্রধারীরা রূপসা উপজেলার রামনগর এলাকার কথিত মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রবিউল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশে গুলি ছোড়ে। একটি গুলি তার ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করে। এ দু’টি ঘটনায় থানায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও ওসি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ভোর রাত পর্যন্ত নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আরামবাগ এলাকায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ ও নৌবাহিনী। এসময় প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। পরে সেখান থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ছাড়াও সেখান থেকে পুলিশ তিনটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি শটগান, শটগানের ২৩ রাউন্ড গুলি, দু’টি চাইনিজ কুড়াল, একটি চাপাতি, একটি হাসুয়া, দু’টি চাকু, চাটি মোবাইল ফোন এবং সাতটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো খুলনার তিনটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঈদের রাতে এমন ঘটনা আরো উদ্বেগজনক বলেও অনেকে মনে করছেন।