ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
শেয়ার
ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখলের অভিযোগ
সংগৃহীত ছবি

বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দিলেও ঘর উঠানোর কাজ অব্যহত রেখেছে দখলদারা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়। ওই সময় বিদ্যালয়ের জমিদাতা মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খান অলিখিভাবে ওই বিদ্যালয়ে ১৪ শতাংশ জমি দান করেন।

শুরুতেই ওই দানকৃত জমির পশ্চিম অংশে একটি এল টাইপের টিনসেট ঘর নির্মাণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়ে পাঠদানের কার্যক্রম শুরু হয়। যা ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান ছিল। পরে ওই জমির পূর্ব অংশে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত নতুন ভবনেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

এতে বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম অংশে নির্মিত পুরাতন ওই এল টাইপের টিনসেট ঘরটি ব্যবহার না করায় পরিত্যক্ত হয়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে।

২০১৬ সালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ধান্ত নিয়ে ওই পরিত্যক্ত ঘরের একটি অংশ রেখে বাকীটা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠটি ভরাট করেন। হঠাৎ করে গত ১০ মার্চ সকালে আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ওই বিদ্যালয়ে জমিদাতা মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খানের জামাতা মো. ফজলুল হক হাওলাদার দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে জোরপূর্বক ওই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একাংশ দখল করে।। 

বিষয়টি তাৎক্ষণিক ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে জানায়।

তারা প্রধান শিক্ষককে আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে জমি দখল ও কোনো প্রকার নির্মাণ কাজ না করার জন্য ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহিদ হোসেন ও অন্যান্য দখলদারদের ডেকে বলে আসেন। বিদ্যালয় বন্ধ ও ঈদের সরকারি ছুটির সুযোগ নিয়ে দখলদাররা পুলিশের নিষেধ উপেক্ষা করে গত ২৯ মার্চ সকালে পুনরায় আবারও তারা ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং ৩১ মার্চ দুপুরে ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। 

বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, খেলার মাঠের পশ্চিম অংশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বেড়া দেওয়া রয়েছে। ওই বেড়া দেওয়া অংশের দক্ষিণ পাশে রাস্তা বরাবর একটি টিনসেট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয়রা জানান, আগে জানতাম এই জমি স্কুলের। এখানেই স্কুলের শুরেুতে টিনের ঘরে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠদান করানো হয়েছে। এখন শুনি এই জমি স্কুলের না। বিএনপি নেতা জাহিদ মাস্টারের নেতৃত্বে জমিদাতার মেয়ের জামাই মো. ফজলু হাওলাদার দখল নিয়ে ঘর উঠাইছে।

জমি দখলকারী মো. ফজলুল হক হাওলাদার বলেন, এই জমি আমার শ্বশুর মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খান স্কুলে দান করেননি। ওয়ারিশ হিসেবে আমার স্ত্রী ওই জমির মালিক। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলেও অদ্যবদি জমি ফেরত দিচ্ছে না। তাই বাধ্যহয়ে আমরা জমির দখলে নিতে মাঠের মধ্যে বেড়া ও ঘর উঠাইছি।

আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ দখলকারীরা আমার আত্মীয় হয় সেটা সঠিক। তবে আমি ওই জমি দখল নিতে নেতৃত্ব দেইনি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।

আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম অংশে আমাদের পুরাতন একটি এল টাইপের টিনের ঘরে শ্রেণীকক্ষ ছিল। সেই টিনের শ্রেণীকক্ষের একটি অংশ ও মাঠের একাংশ জোরপূর্বক দখল নিয়ে বেড়া দিয়ে ওই জমিতে আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে তার আপন বড় চাচা মো. ফজলুল হক হাওলাদারসহ একাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে দখল নেয়। সেখানে একটি ঘরও নির্মাণ করেছে। এতে বিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিষয়টি আমি আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। 

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। শুনেছি নির্দেশ অমান্য করে আবারও নাকি ঘরের নির্মাণ কাজ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি এখন ছুটিতে আছি। ছুটি শেষে সরেজমিনে গিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বাকেরগঞ্জে কৃষক দলের নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

বরিশাল অফিস
বরিশাল অফিস
শেয়ার
বাকেরগঞ্জে কৃষক দলের নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
সংগৃহীত ছবি

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাসসহ চারজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করা হয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) ভরপাশা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি গ্রামের ব্যবসায়ী মহসিন বিশ্বাস বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন।

অন্য আসামিরা হলেন মো. রাসেদুল ইসলাম রুবেল, জাকারিয়া পান্না, আবুল বাসার মোল্লা।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মহসিনের কাছে দীর্ঘদিন থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন জাহাঙ্গীর।

দাবীকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ৩ মার্চ মহসিনের বাড়ির সামনে কৃষক দলের ওই নেতা তার দলবলসহ তাকে মারধর ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। মহসিনের মা ছেলেকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে লাঞ্ছিত করে তারা। 

আরো পড়ুন
ছয় দশকেও আলোর মুখ দেখেনি দেশের প্রথম লৌহ খনি

ছয় দশকেও আলোর মুখ দেখেনি দেশের প্রথম লৌহখনি

৪ এপ্রিল ব্যবসায়ীকে মারধর ও গুলি করে হত্যার হুমকি ও তার বৃদ্ধ মাকে লাঞ্ছিত করার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় রবিবার মহসিন মামলা করেন।

 

জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ‘আমি মহসিনের কাছে কোনো চাঁদা চাইনি। তিনি আমাকে নিয়ে মিথ্যা ষড়যন্ত্র করছেন।’ 

বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির কারণে একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরো পড়ুন
বিশেষ অভিযানে ১৫ জন গ্রেপ্তার

বিশেষ অভিযানে ১৫ জন গ্রেপ্তার

মন্তব্য

সালিসে মারামারি ঠেকাতে গিয়ে হাসপাতালে বিএনপি নেতা

বরিশাল অফিস
বরিশাল অফিস
শেয়ার
সালিসে মারামারি ঠেকাতে গিয়ে হাসপাতালে বিএনপি নেতা
সংগৃহীত ছবি

সালিস-বৈঠকের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এক বিএনপি নেতা। শনিবার (৫ এপ্রিল) বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার ওই বিএনপি নেতার নাম আলমগীর পারভেজ। তিনি রত্নপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন
বিশেষ অভিযানে ১৫ জন গ্রেপ্তার

বিশেষ অভিযানে ১৫ জন গ্রেপ্তার

 

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অলিউল ইসলাম বলেন, রত্নপুর ইউনিয়ন বিএনপিকর্মী আবুবকর ও কবির শরীফের মধ্যে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছিল। ওই ঝামেলার সালিস করতে গিয়েছিলেন রত্নপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর পারভেজ।

সালিস-বৈঠকে বসেই এক গ্রুপ অপর গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলা ঠেকাতে গিয়ে হামলার শিকার হন বিএনপি নেতা আলমগীর পারভেজ। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন ও আকন কুদ্দুসুর রহমানের অনুসারী দুটি গ্রুপ।

আলমগীর পারভেজ জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারী আর আবুল বশর আকন কুদ্দুসুর রহমানের অনুসারী। ওই দুই নেতাই স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করার কথা জানিয়েছেন। এর আগেও মারামারি হয়েছে উভয় গ্রুপের মধ্যে। 

আরো পড়ুন
শহীদ আবু সাঈদ চত্বর পরিদর্শন করলেন প্রধান বিচারপতি

শহীদ আবু সাঈদ চত্বর পরিদর্শন করলেন প্রধান বিচারপতি

 

রত্নপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি মামুন ঘরামী জানান, স্থানীয় আবুবকর ও কবির শরীফের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি জমা নিয়ে ঝামেলা চলছিল। ওই ঝামেলার সালিস-বৈঠকে যান আলমগীর পারভেজ।

সালিসের মধ্যেই বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের আত্মীয় পরিচয়দানকারী আবুল বশরের নেতৃত্বে কবির শরীফ এবং তার স্বজনদের ওপরে হামলা চালানো হয়। 

ওই হামলায় মারামারি ঠেকানো ও আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে আলমগীর পারভেজকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে আবুল বশর ও তার অনুসারীরা।

মন্তব্য

ছয় দশকেও আলোর মুখ দেখেনি দেশের প্রথম লৌহখনি

শাহ্ মো. রেজাউল করিম, পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
শাহ্ মো. রেজাউল করিম, পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
ছয় দশকেও আলোর মুখ দেখেনি দেশের প্রথম লৌহখনি
ছবি : কালের কণ্ঠ

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের ভেলামারি পাথারে আবিষ্কৃত দেশের প্রথম লৌহখনিটি ছয় দশকেও আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৬৪ সালে এই লোহার খনির অস্তিত্ব নিশ্চিত করে তৎকালীন পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগ। ১৯৯৯ সালে পুনরায় খনন শুরু করে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি)। সুদীর্ঘ ৬০ বছর আগে এই লৌহখনিটির প্রথম সন্ধান পাওয়া গেলেও এখনো উত্তোলনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।

চলতি বছর ওই স্থানে ফের ড্রিলিং করে কূপ খনন করা হবে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

পীরগঞ্জের ভেলামারি খনি থেকে লোহা উত্তোলনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ (জিএসবি) ও পেট্রোবাংলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ও মিঠিপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি বিশাল একটি এলাকার নাম ভেলামারি পাথার। এখানেই আবিষ্কৃত হয়েছে দেশের প্রথম বিশ্বমানের লৌহখনির।

ওই সময়ে খনি এলাকা চিহ্নিত করে সেই জমিতে কংক্রিটের ঢালাই করে রাখা হয় অনুসন্ধান করা চারটি কূপের মুখ। ৬০ বছর ধরে খনি মুখে কংক্রিটের ঢালাই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জেসবি ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের পর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তৎকালীন পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগের একদল বিশেষজ্ঞ বিমান ও গাড়িবহর নিয়ে এই ভেলামারি পাথারে আসে। প্রায় ছয় বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পাথারে তারা লৌহখনির অবস্থান নিশ্চিত করতে অ্যারোমেটিক সার্ভে পরিচালনা করে।

উড়োজাহাজের নিচে একটি বিশাল শক্তিশালী চুম্বক ঝুলিয়ে দেন। এরপর উড়োজাহাজটি ট্রি লেবেলে পাথারের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে উড়োজাহাজে ঝুলন্ত চুম্বকটি ভেলামারি পাথারে ছোট পাহাড়পুর গ্রামের আবুল ফজল ও আবদুল ছাত্তার নামে দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন জমির ওপর এসে আকর্ষিত হয়। এই আকর্ষণ উড়োজাহাজটিকে বারবার মাটির দিকে টেনে নিচে নামাতে চেষ্টা করে। পরে অন্যান্য পরীক্ষার পর তৎকালীন পাকিস্তানের খনিজ বিজ্ঞানীরা এখানে লোহার খনির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
পরে উৎস হিসেবে ওই জমির ওপর কংক্রিটের ঢালাই করে চিহ্ন দিয়ে চলে যান।

সূত্র জানায়, পরের বছর পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগ চিহ্নিত স্থানে খননকাজ শুরু করে। প্রায় আট মাস ধরে তারা ভেলামারি এলাকার পাশের কেশবপুর, ছোট পাহাড়পুর, প্রথমডাঙ্গা, পবনপাড়া, সদরা কুতুবপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অসংখ্য স্থানে পাইপ বসিয়ে লোহার খনির সন্ধান করে নিশ্চিত হন। অনুসন্ধানের সময় পাইপের ভেতর দিয়ে মাটির গভীরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বোমার বিস্ফোরণে ওই এলাকার অনেক মাটির কুয়া ভেঙে যায়। দ্বিতীয় দফায় পাইপের মাধ্যমে জরিপকাজ শেষ করা হয়। ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে পাকিস্তান খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাসহ একদল বিদেশী খনিজ বিশেষজ্ঞ রংপুরে আসেন। তারা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিশাল বহর ও পরিবার পরিজনসহ স্থানীয় পানবাজার উচ্চ বিদ্যারয় মাঠে অস্থায়ীভাবে ক্যাম্প করে লোহার উপাদান উত্তোলন করে। মাটির ৯’শ ফুট নিচ থেকে ২২ হাজার ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে লোহার উন্নতমানের স্তরের সন্ধান পায়। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক অনুসন্ধান শেষ করে ভেলামারিতে বোরিংকৃত চারটি মূল পাইপের উৎসমুখে কংক্রিটের ঢালাইয়ের দিয়ে বন্ধ করে ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যান। এ সময় তারা বলে যান, লৌহ অপরিপক্ব অবস্থায় আছে। ধারণা করেন আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই এটি উত্তোলন যোগ্য হতে পারে। সেই হিসেবে ৪২ বছর আগে লোহা খনিটি পরিপক্বতা লাভ করেছে। 

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর দ্বিতীয়বারের মতো ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভেলামারি পাথারে লোহার খনির অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন। কিন্তু তারা পূর্বে আবিষ্কৃত লৌহ খনির উৎসমুখ ভেলামারি হতে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বড় পাহাড়পুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে পরীক্ষামূলক খনন করে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ না করেই চলে যান। ওই রিপোর্ট পরে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশও হয়নি। ২০২৩ সালের শেষের দিকে খনিটির মূল উৎস থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে কাশিমপুর গ্রামে ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে কূপ খনন করে। তবে সেখানে কি পাওয়া গেছে তা প্রকাশ করেনি জেএসবি।

জিএসবি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে উন্নতমানের আয়রন কোর (লোহা আকরিক) পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে আয়রন কোরের রিজার্ভ কম হওয়ায় লৌহ উত্তোলনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জিএসবি। কারণ হিসেবে বলেছে, রিজার্ভের পরিমাণ ইকোনমিক্যালি ভায়াবোল না হওয়ায় খনি থেকে লৌহ উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ খরচ হবে তা রিজার্ভ দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। লৌহখনির অবস্থান নিশ্চিত করে অনুসন্ধান চললেও উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি জিএসবি। লৌহ খনিটি আবিষ্কারের পর এখন প্রায় ৬০ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারের এই লোহার খনিটি এখন পরিপক্কতা অর্জন করেছে। অথচ পেট্রোবাংলা ড্রিলিং করে কূপ খনন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। চলতি বছরেও কূপ খনন করবে জিএসবি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম লৌহসহ আরো কিছু মিনারেল এর ট্রেস পাওয়া গেছে রংপুরের পীরগঞ্জে। এখনও মাইনিং পর্যায়ে যাওয়ার মত যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নাই। ভেলামারী পাথারে আরো একটি ড্রিলিংয়ের পরিকল্পনা চলছে।

পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল-ই-এলাহী চৌধুরী মশগুল বলেন, ‘১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম লৌহখনি আবিষ্কৃত হয় পীরগঞ্জে, যা পেট্রোবাংলায় পীরগঞ্জ-১ ফাইল নামে সংরক্ষিত আছে। এটাই দেশের প্রথম লোহার খনি।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শহীদ আবু সাঈদ চত্বর পরিদর্শন করলেন প্রধান বিচারপতি

রংপুর অফিস
রংপুর অফিস
শেয়ার
শহীদ আবু সাঈদ চত্বর পরিদর্শন করলেন প্রধান বিচারপতি
ছবি : কালের কণ্ঠ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ১ নম্বর গেটের সামনে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর পরিদর্শন করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

আজ রবিবার দুপুরে বেরোবি ক্যাম্পাসে গেলে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন করেন এবং তার সহপাঠী ও সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলে সেদিনের ঘটনা শোনেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী আবু সাঈদ স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রধান বিচারপতিকে জানান।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক, প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ