বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের এক ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বেড়া দিয়ে ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দিলেও ঘর উঠানোর কাজ অব্যহত রেখেছে দখলদারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়। ওই সময় বিদ্যালয়ের জমিদাতা মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খান অলিখিভাবে ওই বিদ্যালয়ে ১৪ শতাংশ জমি দান করেন।
শুরুতেই ওই দানকৃত জমির পশ্চিম অংশে একটি এল টাইপের টিনসেট ঘর নির্মাণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়ে পাঠদানের কার্যক্রম শুরু হয়। যা ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান ছিল। পরে ওই জমির পূর্ব অংশে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত নতুন ভবনেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এতে বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম অংশে নির্মিত পুরাতন ওই এল টাইপের টিনসেট ঘরটি ব্যবহার না করায় পরিত্যক্ত হয়ে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে।
২০১৬ সালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ধান্ত নিয়ে ওই পরিত্যক্ত ঘরের একটি অংশ রেখে বাকীটা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠটি ভরাট করেন। হঠাৎ করে গত ১০ মার্চ সকালে আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ওই বিদ্যালয়ে জমিদাতা মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খানের জামাতা মো. ফজলুল হক হাওলাদার দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে জোরপূর্বক ওই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একাংশ দখল করে।।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে জানায়।
তারা প্রধান শিক্ষককে আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে জমি দখল ও কোনো প্রকার নির্মাণ কাজ না করার জন্য ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহিদ হোসেন ও অন্যান্য দখলদারদের ডেকে বলে আসেন। বিদ্যালয় বন্ধ ও ঈদের সরকারি ছুটির সুযোগ নিয়ে দখলদাররা পুলিশের নিষেধ উপেক্ষা করে গত ২৯ মার্চ সকালে পুনরায় আবারও তারা ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং ৩১ মার্চ দুপুরে ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, খেলার মাঠের পশ্চিম অংশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বেড়া দেওয়া রয়েছে। ওই বেড়া দেওয়া অংশের দক্ষিণ পাশে রাস্তা বরাবর একটি টিনসেট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয়রা জানান, আগে জানতাম এই জমি স্কুলের। এখানেই স্কুলের শুরেুতে টিনের ঘরে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠদান করানো হয়েছে। এখন শুনি এই জমি স্কুলের না। বিএনপি নেতা জাহিদ মাস্টারের নেতৃত্বে জমিদাতার মেয়ের জামাই মো. ফজলু হাওলাদার দখল নিয়ে ঘর উঠাইছে।
জমি দখলকারী মো. ফজলুল হক হাওলাদার বলেন, এই জমি আমার শ্বশুর মরহুম মোহাম্মদ হোসেন খান স্কুলে দান করেননি। ওয়ারিশ হিসেবে আমার স্ত্রী ওই জমির মালিক। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলেও অদ্যবদি জমি ফেরত দিচ্ছে না। তাই বাধ্যহয়ে আমরা জমির দখলে নিতে মাঠের মধ্যে বেড়া ও ঘর উঠাইছি।
আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠ দখলকারীরা আমার আত্মীয় হয় সেটা সঠিক। তবে আমি ওই জমি দখল নিতে নেতৃত্ব দেইনি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।
আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম অংশে আমাদের পুরাতন একটি এল টাইপের টিনের ঘরে শ্রেণীকক্ষ ছিল। সেই টিনের শ্রেণীকক্ষের একটি অংশ ও মাঠের একাংশ জোরপূর্বক দখল নিয়ে বেড়া দিয়ে ওই জমিতে আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে তার আপন বড় চাচা মো. ফজলুল হক হাওলাদারসহ একাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে দখল নেয়। সেখানে একটি ঘরও নির্মাণ করেছে। এতে বিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিষয়টি আমি আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। শুনেছি নির্দেশ অমান্য করে আবারও নাকি ঘরের নির্মাণ কাজ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি এখন ছুটিতে আছি। ছুটি শেষে সরেজমিনে গিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।