<p>রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গত তিন দিনে ১৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ৩৪ জনকে। </p> <p>মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান এই তথ্য দেন। তিনি বলেন, তিন দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেড় শতাধিক অপরাধী গ্রেপ্তার হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অভিযান চলমান রয়েছে। </p> <p>পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, সরকার পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলা অবস্থার অবনতি ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি ও হত্যাকাণ্ড বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বিহারি ক্যাম্প ঘিরে মাদক কারবারিদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে মোহাম্মদপুরে অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরই মধ্যে প্রাণ গেছে ১০ জনের বেশি। বিভিন্ন ঘটনায় আহত প্রায় অর্ধশত। এমন অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। </p> <p>গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে  বলা হয়, সোমবার দিবাগত রাতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল দল যৌথ অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর থানার জেনেভা ক্যাম্প জি ব্লকের ৫০৮ নম্বর বাসার চতুর্থ তলা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি রিভলবার, ২০ রাউন্ড গুলি এবং পাঁচটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।</p> <p>ওই রাতে আরেকটি অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আরো ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুই কেজি গাঁজা, দুটি সামুরাই, একটি চাপাতি, একটি ছুরি ও একটি অটোরিকশা জব্দ করা হয়।  </p> <p>এদিকে পৃথক অভিযানে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাতি মামলায় তিনজন সক্রিয় ডাকাত সদস্য, দস্যুতা মামলায় পাঁচজন, চুরি মামলায় তিনজন পেশাদার চোর এবং ডিএমপি অ্যাক্টে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। </p> <p>এ ছাড়া আলাদা আরেকটি অভিযানে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ছিনতাইবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আট ছিনতাইকারীকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২। গতকাল র‌্যাব-২-এর সহকারী পরিচালক এএসপি শিহাব করিম এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-২ জানতে পারে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করতে দেশীয় অস্ত্রসহ প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই সব স্থানে র‌্যাব-২-এর একাধিক দল অভিযান চালিয়ে মূল হোতাসহ আট ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, সামুরাই, চাকু, চাপাতি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।</p> <p>এএসপি শিহাব করিম আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পথচারীদের চাপাতি, সামুরাই ও দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিত।</p> <p>এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিরপেক্ষতা ও পেশাদারির সঙ্গে কাজ করছে সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্প থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। এ সময় দুটি পিস্তল, ২০ রাউন্ড বুলেটসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।</p> <p>প্রথমে সেনাবাহিনীর একটি দল জেনেভা ক্যাম্পে এই অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল ও তাঁর সঙ্গীদের  গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আইএসপিআর জানায়, জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে গত কয়েক দিনের বিশেষ অভিযানে বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হওয়ায় মোহাম্মদপুরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সন্ত্রাস দমন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।</p>