<p>ভোরের দিকে একটি ফোনে ঘুম ভাঙে মায়ের। দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর খবর পান। মুহূর্তে যেন আকাশ ভেঙে পরে মাথায়। আমার বাবা আর নাই।</p> <p>বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মুহতাসিমের মৃত্যুর পর এভাবেই ভেঙে পড়েন মা <br /> রাইসা সুলতানা। এই ধাক্কা সামলে নিতে পারছেন না বাবা মাসুদ মিয়া।  </p> <p>শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে মুহতাসিমের লাশ নেওয়া হয় গ্রিন রোডের বাসায়। সেখানে আগ থেকেই উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়স্বজন ও মুহতাসিমের সহপাঠীরা।</p> <p>এ সময় একমাত্র ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে আসেন মা রাইসা সুলতানা। ছেলে মুহতাসিমের মুখের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তখন কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলেকে শেষবিদায় দিয়ে মা রাইসা সুলতানা বলেন, ‘আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও।’</p> <p>ছেলেকে শেষ বিদায় দিয়ে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন রাইসা সুলতানা। তিনি বিলাপ করে বলেন, ‘আমার বাবা শান্তিতে ঘুমায়...’ তিনি বলেন, কামরুল নামে মুহতাসিমের এক বন্ধু ভোরে ফোন করে জানায়, মুহতাসিম দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ছেলের মৃত্যুর খবর প্রথম বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।</p> <p>বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে যায় মুহতাসিম জানিয়ে তিনি বলেন, ছেলে বলেছিল রাত ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। বাসায় না ফেরায় সাড়ে ১১টার দিকে ছেলেকে ফোন দেই। ছেলে বলে পুরান ঢাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খাচ্ছে। রাতে হলে থাকবে, বাসায় ফিরবে না। ছেলের সঙ্গে কথা বলে তিনি ঘুমাতে যান।</p> <p>এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পূর্বাচল ৩০০ ফিট নীলা মার্কেট এলাকায় <br /> পুলিশের সংকেত পাওয়ার পর পূর্বাচলে তল্লাশি চৌকিতে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল আরোহী তিন বন্ধু। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেট কার ধাক্কা দেয় তাদের। ঝড়ের গতিতে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মুহতাসিম মাসুদ। মারাত্মক আহত হন মেহেদী হাসান ও অমিত সাহা।</p> <p>এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মুহতাসিম মাসুদের বাবা মাসুদ মিয়াও। গতকাল বাসার সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে ছেলের লাশের পাশে বসে মাসুদ মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’</p> <p>পারিবারিক সূত্র জানায়, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই ছিল মাসুদ মিয়া ও রাইসা সুলতানা দম্পতির সংসার। দুই সন্তানের পড়াশোনাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন তারা। ছেলে মুহতাসিম মাসুদ (২২) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে পড়ে ঢাকার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে। তাদের দুজনকে নিয়েই গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন তারা।</p>