<p>ঢাকায় ছেলের বাসা থেকে নিখোঁজ হন এক বৃদ্ধা। খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন প্রচারই করছিলেন ছেলে ও তার স্ত্রী। অবশেষ ৯ মাস পর জানা গেল, অসুস্থ মা একটি বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। ছেলে তার স্ত্রীর কথা রাখতে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছেন বলে অভিযোগ করেন বৃদ্ধার এক সৎভাই। এমন ঘটনা নান্দাইলের মুশল্লী ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গ্রামের।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইলের মুশল্লী ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গ্রামের মৃত সাহেদ আলীর স্ত্রী মোছাম্মৎ হামিদা বেগম (৭০)। নিজের সামান্য সম্পদ থাকলেও ভিক্ষাবৃত্তি করে স্বামী-সন্তানসহ সংসারের হাল ধরেন তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পর বেকায়দায় পড়েন হামিদা। এ অবস্থায় একমাত্র ছেলে আব্দুল হান্নানকে নিয়ে ১৫ বছর আগে ঢাকায় যান তিনি। সেখানে গিয়েও ভিক্ষাবৃত্তি করেন হামিদা। </p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামে থাকা নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি ও নিজের জমানো অর্থ ছেলের হাতে তুলে দেন হামিদা। একপর্যায়ে ছেলে আব্দুল হান্নান বিয়ে করেন। কিন্তু মা ও স্ত্রীকে নিয়ে কখনো গ্রামের বাড়িতে আসেননি তারা। পরে বাড়িতে খবর পাঠানো হয়, বৃদ্ধা মা সবার অগোচরে বাসা থেকে বের হলে আর খোঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছে না। </p> <p>হান্নানের আর তৎপরতা দেখা যায়নি। এর মধ্যে ‘চাইল্ড ওল্ড অ্যান্ড কেয়ার’-এর পরিচালক মিল্টন সমাদ্দারের ফেইসবুক আইডিতে প্রচার হয় ওই বৃদ্ধার আকুতি নিয়ে একটি ভিডিও। সেখানে ওই বৃদ্ধা নিজের নাম হামিদা ও ছেলের নাম হান্নান এবং বাড়ি নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামে বলে জানান। </p> <p>বৃদ্ধা তখন কান্না করে বলেন, ‘হান্নান তুমি আমারে লইয়া যাও, আমি বাড়িত যাইয়াম।’ ঘটনা জানতে পেরে খোঁজ নিলে বৃদ্ধার পরিচয় জানা যায়। </p> <p>বৃদ্ধার সৎভাই আফাজ উদ্দিনের নম্বর সংগ্রহ করে কথা বললে তিনি বলেন, 'আমিও জানতাম বোন নিখোঁজ ছিলেন। এখন জানা গেছে, তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আছেন। এ অবস্থায় তার ছেলেকে বলা হয়েছে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু কেন আনছে না, তা বলতে পারছি না।' </p> <p>তিনি আরো জানান, বোনের ছেলে হান্নান তার স্ত্রীর কথা রাখতে গিয়ে গত এপ্রিল মাসে হামিদাকে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে হান্নান ও তার স্ত্রী নারায়ণগঞ্জের নবাবগঞ্জ এলাকার একটি সড়কে ওই বৃদ্ধাকে ফেলে রেখে আসেন। যে কারণে ছেলের ইচ্ছা থাকলেও স্ত্রীর জন্য হয়ত মাকে আনতে পারছেন না।</p> <p>বৃদ্ধাশ্রম ‘চাইল্ড ওল্ড অ্যান্ড কেয়ার’-এর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে জানতে চাইলে সেখানকার দেবাশীস নামের একজন জানান, হামিদা নামের যে বৃদ্ধা তার তত্ত্বাবধানে আছেন তাকে ৩ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় কিছু লোক এখানে দিয়ে যায়। এরপর থেকেই তিনি ছেলের জন্য শুধু কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন। </p> <p>আব্দুল হান্নান মোবাইল ফোনে বলেন, ওই মহিলা আমার মা কিনা জানতে হবে। তিনি তো আপনার নাম ও বাড়ির ঠিকানা বলেছেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। </p> <p>রবিবার সকালে ওই বৃদ্ধার বাড়ি নান্দাইলের মেরেঙ্গা গ্রামে গেলে জানা যায়, অত্যন্ত সহজ-সরল মানুষ ছিলেন হামিদা। ছেলের জন্য ভিক্ষা করেছেন তিনি। তার ছিল বেশ কিছু জমিজমা ছিল। সৎভাই সব জমি বিভিন্ন সময় বিক্রি করে দেন। বর্তমানে এক টুকরা জমি আছে। যেখানে একটা ঘর করে তুলে রেখেছেন ওই সৎভাই। </p> <p>রাবিয়া খাতুন নামের তার এক প্রতিবেশী জানান, ছেলের কাছে বেশ কয়েক বছর ভালোই ছিল। কিন্তু বিয়ে করার পর থেকে বৃদ্ধা হামিদার যত দুর্দশা শুরু হয়।</p>