জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ বিগত ১৭ বছরে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যদের তালিকা প্রকাশ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে জুলাই মঞ্চ। এসব অপরাধে জড়িত সদস্যদের তালিকা এক মাসের সময় বেঁধে দেন তারা। অন্যথায়, জুলাই আন্দোলনের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টায় রাজধানীর উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরের সামনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘সন্ত্রাসী বাহিনীর দমনের জন্য র্যাব গঠন করেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে এই বাহিনীকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে। একটি বিশেষ দলে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, গুম ও খুনসহ অবৈধ নির্বাচন পরিচালনায় তাদের ব্যবহার করে। র্যাবের যেসব সদস্য এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, দ্রুত তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানাই।
’
অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে গুম-খুনে জড়িত র্যাব সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা না হলে জুলাই মঞ্চ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে যারা ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, তাঁদের মধ্যে ১ নম্বরে আছে র্যাব। জনগণের টাকায় কেনা বুলেট তাঁদের বুকে ছুঁড়েছে। বর্তমান সরকারের ৭ মাস অতিবাহিত হলেও তাঁদের বিচার করা হয়নি।
বরং অনেকে প্রমোশন পেয়েছে। গণহত্যার বিচার না হলে কিসের সংস্কার, কার জন্য সংস্কার? এসব সংস্কারের আগে প্রয়োজন গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা। দ্রুত এই বিচারব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা আবারো জুলাই অভ্যুত্থানের মতো কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’
জাবি শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, ‘র্যাবের ডিজি স্বীকার করেছেন, বিগত ১৬ বছরে ৱ্যাবের মাধ্যমে গুম-খুন হয়েছে। গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭৩টি গুম র্যাবের মাধ্যমেই হয়েছে।
আমরা দেখতে চাই, কারা এই গুম-খুনের সাথে জড়িত। তাঁদের তালিকা চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রত্যেক বাহিনীতে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে জনগণ আবারো রাস্তায় নেমে আসবে।’
জুলাই মঞ্চ প্ল্যাটফর্মের এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর সাড়ে ৩টায় তারা ট্রাকসহ মিছিল নিয়ে র্যাব সদর দপ্তরের বাইরে মূল সড়কে গিয়ে পৌঁছায়।
সেখানে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের আটকে দিলে সড়কে বসেই অবস্থান নেন। বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট অতিবাহিত করেন। এরপর তারা পুনরায় র্যাব সদর দপ্তর অভিমুখে রওনা দেন।
এ সময় সদর দপ্তরের মূল ফটকে র্যাব সদস্যদের বাড়তি নিরাপত্তা দেখা যায়। তারা সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটকে দেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে জুলাই মঞ্চের বক্তারা বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করেন। কর্মসূচি শেষে তাদের দাবি দেওয়া ও আলটিমেটামের বিষয়টি র্যাব মহাপরিচালকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
কর্মসূচিতে ব্যানার প্রদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গুমকারীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ মুগ্দ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’।