<p>চলতি বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সিনেমা ‘ওমর’ এবার দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে। সিনেমাহলে দেখা হয়নি, তবে চরকির মাধ্যমে ছবিটি দেখার সুযোগ হল। তাই সিনেমাপ্রেমীদের জন্য আজকের রিভিউ। নির্মাতা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের আগের সিনেমাগুলো দেখে আমি কখনোই খুব বেশি মুগ্ধ হইনি। তাই ‘ওমর’ নিয়ে আমার তেমন কোনো প্রত্যাশা ছিল না। তবে ছবিটি শেষ করে মনে হয়েছে, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ এবার চলচ্চিত্র নির্মাণে উতরে গেছে ভালো করেই।</p> <p>ছবিটির গল্প মোটেও নতুন কিছু নয়। এরকম গল্পে দেশ-বিদেশে বহু সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তবে ‘ওমর’-এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এর চিত্রনাট্য। একটি সাধারণ গল্প চিত্রনাট্যের মাধ্যমে দর্শকের জন্য উপভোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে ছবির চিত্রনাট্যকার সিদ্দীক আহমেদ প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। পেশাদার লেখক হিসেবে তিনি একটি গোছানো চিত্রনাট্য উপহার দিতে চেষ্টা করেছেন। যদিও একেবারে ব্যতিক্রম কিছু নয়, তবে বাংলা চলচ্চিত্রে থ্রিলার ঘরানায় এটা অবশ্যই ঠিকঠাক গোছানো একটা কাজ বলা যায়। </p> <p>ছবির গল্প মূলত একটি দুর্ঘটনা ও তার প্রভাব নিয়ে। বড় মির্জার ছেলে ছোট মির্জা দুর্ঘটনাক্রমে খুন হয়। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল দুই ব্যক্তি—ওমর (শরিফুল রাজ) ও বদি (নাসির উদ্দিন খান)। এই মৃত্যুর জন্য একে অপরকে দায়ী করে তারা। ওমর দাবি করে বদির কারণেই ছোট মির্জার মৃত্যু হয়েছে, অন্যদিকে বদি বলে এর জন্য দায়ী ওমর। কিন্তু তারা বুঝতে পারে, যার কারণেই মৃত্যু হোক না কেন- বড় মির্জা যদি এ ঘটনা জানতে পারে, তাহলে দুজনকেই হত্যা করবে। পরে নিজেদের বাঁচাতে তারা লাশ লুকানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু তারা কি সফল হবে? </p> <p>ছবিতে অভিনয়ের দিক থেকে নাসির উদ্দিন খান সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন। তার চরিত্রের রূপ কয়েকরকম তারপরও সেখানে তিনি সুন্দর অভিনয় করেছে। শরিফুল রাজ কিছু কিছু জায়গায় খানিকটা দুর্বল মনে হলেও সামগ্রিকভাবে তিনি তার চরিত্রে ঠিকঠাক ছিলেন। শহীদুজ্জামান সেলিম প্রতিবারের মতোই দুর্দান্ত। তার অভিনয়ের গভীরতা দর্শকদের মুগ্ধ করবে। আবু হুরায়রা তানভীর অল্প অংশে ঠিকঠাক কাজ করেছে। আরফান মৃধা শিবলুও ভালো কাজ করেছেন।</p> <p>ছবির বেশিরভাগ অংশ শুট করা হয়েছে একটি বাড়িতে। প্রায় ৮০ শতাংশ দৃশ্য বাড়ির ভেতরে হলেও দর্শক একঘেয়েমি অনুভব করবে না। এটাই ছবির অন্যতম ইতিবাচক দিক। চিত্রনাট্যের শক্তির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফার রাজু রাজের কাজও প্রশংসার দাবিদার। তিনি গল্পের মেজাজের সঙ্গে মিল রেখে সুন্দরভাবে শ্যুট করেছেন।</p> <p>তবে ছবির কিছু দিক তুলনামূলক দুর্বল। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। নাভেদ পারভেজ ও স্যাভির সংগীতায়োজন মোটামুটি ভাল হলেও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের আরও উন্নতি প্রয়োজন ছিল। রিপন নাথের সাউন্ড ডিজাইন ও ছবির সম্পাদনা ঠিকঠাক হলেও তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।</p> <p>ছবির ক্লাইম্যাক্স বেশ প্রেডিক্টেবল। গল্পের শেষ কী হতে যাচ্ছে, তা দর্শক আগেই অনুমান করতে পারে। সংলাপ খুব সাধারণ, তেমন কোনো ভালো ডায়লগ নেই। ইমোশনাল দৃশ্যগুলো ঠিকঠাক কাজ করেনি। বরং কিছু কিছু কমেডি দৃশ্য তুলনামূলক ভালো লেগেছে।</p> <p>মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ তার আগের সিনেমাগুলোতে পরিচালক হিসেবে সেভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। তবে ‘ওমর’-এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি এখন একজন ভালো নির্মাতা হওয়ার পথে। যদিও ছবিটি অসাধারণ কিছু নয়, তবে চিত্রনাট্যের শক্তি, অভিনয় ও গোছানো নির্মাণের কারণে এটি দর্শকদের কাছে একটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।</p> <p>বাংলা সিনেমার থ্রিলার ঘরানায় ‘ওমর’ নিঃসন্দেহে একটি ডিসেন্ট কাজ। এটি এমন একটি সিনেমা, যা দর্শকদের অতিরিক্ত কিছু না দিয়েও একবার দেখার মতো অভিজ্ঞতা দেবে। সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন সিনেমাটি।</p>