<p>ডিম আগে না মুরগি আগে? এই নিয়ে বিতর্ক তো চলে এসেছে সবসময়। তবে আজ এমন এক সিরিজ নিয়ে আলাপ হবে, যা সেই ডিম-মুরগির বিতর্ক উস্কে দেবে দর্শকমনে। আপনার মস্তিকের উপর আপনি ঠিক কতটা চাপ নিতে পারবেন, সেই সীমারেখা জানতে পারবেন এই সিরিজটির মাধ্যমে। সায়েন্স ফিকশন আর টাইম ট্রাভেলের গোলকধাঁধায় রীতিমতো ঘুরপাক খাবেন।</p> <p>বলছিলাম ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জার্মান সিরিজ ‘ডার্ক’ (Dark)-এর কথা। নেটফ্লিক্সের সায়েন্স ফিকশন এ সিরিজটি আপনাকে থ্রিল ও ড্রামাতেও ডুবিয়ে রাখবে সমানতালে। কারণ ‘ডার্ক’ শুধুমাত্র একটি সায়েন্স ফিকশন সিরিজ নয়; এটি একটি জটিল সময়ের ধাঁধা যা পরিবার, সময় এবং নিয়তির গভীরে প্রবেশ করে। জার্মান ভাষার এই সিরিজটি দর্শকদের এমন এক ভ্রমণে নিয়ে যায়, যেখানে প্রতিটি চরিত্র, সম্পর্ক এবং ঘটনা একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।</p> <p><img alt="5" height="225" src="https://static1.cbrimages.com/wordpress/wp-content/uploads/2019/06/Dark-Jonas.jpg" width="450" /></p> <p>সিরিজটি শুরু হয় একটি ছোট জার্মান শহর উইন্ডেনে, যেখানে একটি শিশুর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পর্দা উন্মোচিত হয় শহরের চারটি পরিবারের গভীর রহস্য এবং তাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে জটিল সংযোগ। যারা নিখোঁজ হচ্ছে তারা কি ফিরবে, নাকি তারা ফিরেছে আগেই! সময়ের ভেতর দিয়ে যাত্রা শুরু করে গল্পটি এমন এক জায়গায় পৌঁছায় যেখানে সময় চক্রাকারে বাঁধা থাকে এবং নিয়তি পাল্টানো প্রায় অসম্ভব। </p> <p>বারান বো ওদার এবং জাঞ্জে ফ্রেজ পরিচালিত সিরিজটি তিনটি আলাদা আলাদা টাইমলাইনের গভীরে নিয়ে যাবে আপনাকে যেখান থেকে হিসাব মেলানো হয়ে যাবে দুস্কর। তিনটি সফল সিজনের মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে এটি। এই সিরিজে সময়ের ধারণা, সিদ্ধান্তের পরিণতি এবং মানবিক সম্পর্ককে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে। টাইম ট্রাভেলের এখন পর্যন্ত সেরা নির্মাণ বলা হয় এটিকে। সিরিজের পজিটিভ দিক বলতে গেলে এর চমৎকার চিত্রনাট্য। অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং জটিল গল্প। সময়ের বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলোকে দারুণভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কিছুর উত্তর না পেয়ে হতাশ হওয়ার পরিবর্তে প্রতিটি ধাঁধা দর্শকদের কৌতূহলী করে রাখবে। প্রতিটি সিজন দর্শকদের নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাবে এবং আগের জটিলতার উত্তর দিয়ে দেবে। সেই সঙ্গে গা ছমছমে আবহ সংগীত এবং সিনেমাটিক দৃশ্যগুলো সম্পূর্ণভাবে মুগ্ধ করবে।</p> <p><img alt="450" height="225" src="https://hips.hearstapps.com/hmg-prod/images/dark-season-3-netflix-2-1593014021.jpg" width="450" /></p> <p>সুনিপনভাবে নির্মিত এই মাস্টারপিস সিরিজটির বাস্তবিক অর্থে নেগেটিভ দিক নেই বললেই চলে। তবে যারা সহজ গল্প পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটু কঠিন হতে পারে। মনোযোগ না দিলে ঘটনাগুলো জটিল মনে হতে পারে। তাই সায়েন্স ফিকশনপ্রেমী ও টাইম ট্রাভেল যারা পছন্দ করেন, তারা একটু মনোযোগ দিয়েই দেখবেন এটি।</p> <p>এবার আসি সিরিজের প্রাণ অর্থাৎ অভিনয় প্রসঙ্গে। অভিনয়ের কথা বলতে গেলে প্রতিটি অভিনেতা তাদের চরিত্রকে গভীরতা দিয়েছে, বিশেষত লুইস হফম্যান (যিনি জোনাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন) এবং লিসা ভিসারি (যিনি মার্থা চরিত্রে অভিনয় করেছন)। এছাড়াও অভিভার মাসুচ্চি, মাজা সোন, ক্যারোণি এইচরর্ন, জর্ডিস ট্রিবেল প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন। অভিনয়ে নজর কেড়েছেন ম্যাক্স স্কিমেলফেনিগ, জুলিকা জেনকিনস, উইনফ্রিড গ্লেজেডার, এঞ্জি ট্রাইয়ের মতো তারকাগন।</p> <p>সর্বোপরি বলতে গেলে, ‘ডার্ক এমন একটি সিরিজ যা সময় এবং চরিত্রের স্তরগুলিকে এতটাই দক্ষতার সাথে জুড়ে দেয় যে এটি দেখতে গিয়ে আপনি নিজেও সময়ের ভেতরে আটকে পড়ার অনুভূতি পাবেন। যারা সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করেন এবং গভীরভাবে অনুধাবন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি মাস্ট-ওয়াচ সিরিজ। সিরিজটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৭ এবং রোটেন টমেটোস রেটিং ৯৫ শতাংশ। সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন এই সময়ের অন্যতম মাস্টারক্লাস সিরিজটি।</p>