<p style="text-align:justify">লবণাক্ততার কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী উপকূলের এ সমস্যা সমাধানে একটি লাগসই প্রযুক্তি বের করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, বিশেষত বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় শুষ্ক মৌসুমে বিঘার পর বিঘা জমি পতিত থাকে। লবণাক্ততার কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়।</p> <p style="text-align:justify">স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী উপকূলের এ সমস্যা সমাধানে একটি লাগসই প্রযুক্তি বের করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চের সহায়তায় সাত-আট বছর ধরে তিনি গবেষণা করছেন পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় আনার জন্য।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলছেন, রিলে পদ্ধতিতে গম বা মুগডাল চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকের আয় অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। যেহেতু গম ও ডাল জাতীয় ফসলে অল্প সেচ দিলেই ভালো ফসল উৎপাদন সম্ভব এবং গম ফসল প্রকৃতিগতভাবেই কিছুটা লবণাক্ততা সহিষ্ণু, তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপঘাত মোকাবেলায় উপকূলে রিলে পদ্ধতিতে গম ও মুগ ফসলের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে তিনি গবেষণা করছেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলছেন, গম মূলত ঠাণ্ডা আবহাওয়া পছন্দ করে। ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচের তাপমাত্রায় গমগাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সেখান থেকে ভালো মানের গমের শীষ বের হতে সহায়তা করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন শীতকাল ছোট হয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলে শীতকাল আরো কম। তবে গম ফসল উৎপাদনে এ ধরনের ঠাণ্ডা আবহাওয়া এখনো বাংলাদেশের উপকূলে শুধু ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে এবং জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align:justify">এ জন্য বাংলাদেশের উপকূলে গম বোনার প্রকৃত সময় মধ্য নভেম্বর। এ সময় জমিতে গমবীজ বুনলে জানুয়ারির অনুকূল ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় প্রচুর গমের ছড়া বের হতে সহায়ক হবে।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু উপকূলের জমিতে নভেম্বর মাসে আমন ধান থাকে, যা কৃষকরা ডিসেম্বর মাসে কেটে থাকেন। এ কারণে সঠিক সময়ে গমবীজ বোনার লক্ষ্যে জমিতে আমন ধান থাকা অবস্থায়ই মধ্য নভেম্বরেই গমবীজ ছিটানো হয়েছে। এটিই রিলে পদ্ধতিতে গম চাষ প্রযুক্তি।</p> <p style="text-align:justify">বরগুনার নলবুনিয়ায় বেশ কয়েকজন কৃষক এই পদ্ধতিতে গম চাষ করেছেন। তাঁদের মাঠ পরিদর্শন করি। কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, রিলে প্রযুক্তিতে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না বলে উৎপাদন খরচও অনেক কম, যা পরিবেশ সহায়ক। গম চাষাবাদে কম পানি সেচ দিতে হয়। আবার রিলে গম চাষাবাদে পানি আরো কম লাগে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন প্রায় প্রতিবছরই ডিসেম্বর বা জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমে বৃষ্টি হচ্ছে, যা গম চাষের জন্য ভালো। এ সময় বৃষ্টি হলে সেচের প্রয়োজন হয় না।</p> <p style="text-align:justify">ড. নিয়োগী বলেছেন, উপকূলের পতিত জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ফসল ফলাতে লবণাক্ততার পাশাপাশি সেচযোগ্য পানির অপ্রতুলতাও একটি সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলের লবণাক্ত জমির ঠিক নিচেই যে পানির স্তর আছে, তা লবণাক্ত এবং সেচযোগ্য নয়। কিন্তু এসব জমির এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ ফুট গভীরের পানি লবণাক্ততামুক্ত এবং সেচযোগ্য, যা শুধু ফসল চাষাবাদেই নয়, খাওয়ারও যোগ্য।</p> <p style="text-align:justify">সাবমারসিবল পাম্পের সাহায্যে এক হাজার ১০০ ফুট বা তারও নিচের পানি উত্তোলন করা সম্ভব। বোরিং এবং ফিটিংসহ সম্পূর্ণ পাম্পটি কিনতে এবং বসাতে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ ধরনের একটি পাম্প দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে অনায়াসে রিলে প্রযুক্তিতে গমসহ অন্যান্য রবি ফসলের চাষাবাদ করা যাবে। এ থেকে নিরাপদ খাওয়ার পানিও পাওয়া যাবে।</p> <p style="text-align:justify">ছোট্ট একটি প্রযুক্তি বিশাল জনপদকে আমূল বদলে দিতে পারে। এ নিয়ে উপকূলের কৃষকদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন রচিত হচ্ছে। তাঁরাও আগ্রহী হচ্ছেন দিন বদলে।</p>