<p>দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। ছোট পর্দা থেকে শুরু করে ওটিটি সবখানেই তার জয়জয়কার। কিছুদিন আগে নাম লিখিয়েছেন চলচ্চিত্রেও। বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়ে এবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অপেক্ষায় মেহজাবীনের সিনেমা। মেহজাবীন ও তাঁর ক্যারিয়ারের এই স্বপ্নিল বিবর্তনের গল্প তুলে ধরেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>১৫ বছর!</strong><br /> সময়টা কম নয়। তবে এই সময়ের মধ্যে মেহজাবীন চৌধুরী যেটুকু পথ পাড়ি দিয়েছেন, সাফল্যের আকাশ যতখানি বিস্তৃত করেছেন, তা সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ করা অসম্ভব। ক্যারিয়ারটা কেমন সাজাতে চান? এ সময়ের দশজন অভিনেত্রীকে এমন প্রশ্ন করলে অন্তত আটজনের উত্তর হবে—মেহজাবীনের মতো। এমন অবস্থানে আসতে মেহজাবীনকে শুধু দেড় দশক সময়ই পাড়ি দিতে হয়নি, লড়তে হয়েছে নিজের সঙ্গেও। চেষ্টার ধারে নিজেকে করতে হয়েছে আরো শাণিত।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বুঝতে পারিনি এতটা সাড়া পাব" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/19/1734582855-4fac0df04404f4e9ef447dbe66e550aa.png" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বুঝতে পারিনি এতটা সাড়া পাব</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/12/19/1459085" target="_blank"> </a> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="অস্কারের মঞ্চে যাওয়া হলো না ইমনের" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/18/1734516614-c652a686ed46c87969bd8306981c29a8.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>অস্কারের মঞ্চে যাওয়া হলো না ইমনের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/12/18/1458794" target="_blank"> </a></div> </div> </div> </div> <p><strong>মেহজাবীনের বিবর্তন</strong><br /> ২০০৯ সালে লাক্স সুপারস্টার বিজয়ী মেহজাবীন চৌধুরী [মাঝে] ২০০৯ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’-এ অংশ নেন মেহজাবীন। অত ভেবেচিন্তে নয়, খেয়ালের বশেই। কেমন ছিল সে অধ্যায়? উত্তরে <strong>মেহজাবীন বললেন</strong>, ‘এখন স্মরণ করলে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। স্কুলে থাকাকালে আমি খেলাধুলা নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিলাম। বিউটি পেজেন্টের বিষয় মাথায়ই ছিল না। তবে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারে এসে যখন চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই, তখন অনুভব করেছি, এটা আমার জীবনের অন্যতম বড় অর্জন। এত মেধাবী মেয়ের মধ্যে আমি বিজয়ী হলাম; একদিকে আমি বাংলাদেশে ছিলাম না, বাংলা ভাষা থেকেও দূরে ছিলাম, শোবিজজগতের সঙ্গেও আমার পরিবারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। একেবারে নতুন একটি জগতে পা রাখা, অতঃপর একটু একটু করে শেখা, এগিয়ে যাওয়া...।’</p> <p>অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে ‘নোবডি’ থেকে ‘সামবডি’ তো হলেন, কিন্তু মেহজাবীনের স্বপ্নের ডালপালা তখনো প্রসারিত হয়নি। ভেবেছিলেন, টুকটাক মডেলিং করেই কাটবে সময়। তবু আসতে থাকল অভিনয়ের মুহুর্মুহু ডাক। অগত্যা সাড়াও দিলেন। হয়তো কিঞ্চিৎ অনিচ্ছা নিয়েই। তবে একটা বিষয় তাঁর মাথায় ছিল। মডেলরা অভিনয়ে ভালো করতে পারেন না—প্রচলিত এই ধারণা তাঁকে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। মনে মনে পণ করলেন, এই ধারণা ভুল প্রমাণ করবেন। <strong>মেহজাবীন বলেন,</strong> ‘কোনো কিছুই তো অসম্ভব না। সেই জায়গা থেকেই শুরু। প্রতিটি কাজেই কঠোর পরিশ্রম জরুরি। মডেলরাও অনেক পরিশ্রম করেন। আমি একটি প্ল্যাটফরম থেকে আসার কারণে অনেক ভাগ্যবান। চেষ্টা করার আগেই অনেক কাজ আমার কাছে এসেছে। বড় বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু দিনশেষে নিজের মনেই ভাবনা আসত, এটাই কি যথেষ্ট? আরো কিছু করা যায় কি না? ভালো অভিনয়শিল্পীদের কাজ দেখে নিজেরও ইচ্ছা হতো, আমাকে নিয়েও যদি কেউ সিরিয়াস গল্প ভাবতেন!’</p> <p>কেবল গল্পের চরিত্রের মতো হরবোলা হয়ে থাকতে চাননি মেহজাবীন। ধীরে ধীরে তাঁর বোধ জাগ্রত হয়েছে, নিজের ও সমাজের অধিকার নিয়ে হয়েছেন সচেতন। পুরুষশাসিত ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি শুধু একটি পার্শ্বচরিত্র হয়ে থাকতে চাননি। যোগ্যতা ও চেষ্টা অনুযায়ী নিজের হিস্যা বুঝে নিতে চাইলেন। কিন্তু সেটা তো কেউ গড়ে দেবে না, নিজেকেই গড়ে নিতে হবে। এই মনোবল থেকেই অভিনয়ে নিজেকে ঢেলে দেওয়া। এর পেছনে নির্মাতা-সহশিল্পীদের সহযোগিতাও ছিল, তাঁদের প্রতিও তাঁর কৃতজ্ঞতা অশেষ। মেহজাবীন মনে করেন, শোবিজে তাঁর পথচলা ১৫ বছরের হলেও অভিনয়ের মূল ক্যারিয়ার মোটে আট বছরের। ২০১৬-১৭ সাল থেকে তিনি অভিনয়ে পূর্ণ মনোযোগী হয়েছেন।</p> <p>আনাড়ি এক তরুণী থেকে দেশের অন্যতম সফল অভিনেত্রী হয়ে ওঠার বিষয়ে <strong>তাঁর মন্তব্য</strong> এটুকু, ‘যেকোনো মানুষ তখনই শিখতে পারে, যখন সে ভুল করে। প্রতিটি ভুলের পর কিছু না কিছু শেখা যায়। আমি অনেক ধরনের নাটক করেছি, সবই যে অনেক ভালো মানের কিংবা আমি ভালো অভিনয় করেছি, তা কিন্তু নয়। তবে প্রতিটি কাজ থেকেই আমি একটু একটু করে শিখেছি। অনেক চিত্রনাট্য পড়েছি। এভাবে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করেছি। শেখার জন্য ভালো-মন্দ সব ধরনের কাজের চেষ্টা করেছি। দর্শকও আমাকে গ্রহণ করেছেন।’</p> <p>মেহজাবীনের কথার বাস্তবতাও আছে। ২০১৭ সালে ‘বড় ছেলে’ মুক্তির পর তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য শুরু হয়। জনপ্রিয়তার স্রোতে ভেসে না গিয়ে নিজেকে প্রতিনিয়ত ব্যতিক্রম সব চরিত্রে হাজির করেছেন, তাক লাগিয়েছেন যথারীতি।</p> <p>২০২২ সালে মেহজাবীন এলেন ওটিটিতে। ভিকি জাহেদের ওয়েব ছবি ‘রেডরাম’ দিয়ে শুরুতেই বাজিমাত। ওটিটিতে আসা এবং এখানেও সাফল্য পাওয়া নিয়ে <strong>তাঁর ভাষ্য</strong>, ‘আমি প্রতিনিয়ত নিজেকে ডেভেলপ করতে চাই, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। একটা সময় আমরা নাটক দেখতাম না, রেডিওতে শুনতাম। এরপর সাদা-কালো টেলিভিশন এলো, তারপর রঙিন টিভি—এভাবে পরিবর্তন হতে হতে আমরা ডিজিটালে এসেছি। একইভাবে ক্যারিয়ারেও পরিবর্তন আনতে হয়। আমি যদি রেডিওর মতো একই জায়গায় পড়ে থাকি, তাহলে তো হবে না। আর নাটকে পর্যাপ্ত বাজেট নেই। দর্শককে ভালো কিছু দিতে হলে, বড় পরিসরে কোনো কাজ করতে হলে আরো বাজেট দরকার। সেই জায়গা থেকে ওটিটিতে কাজ করা। ওটিটি আসার পর আমরা অনেক গল্প দেখতে পারছি, যেটা টেলিভিশনে দেখানো সম্ভব হতো না।’</p> <p>মেহজাবীনের বিবর্তনলাক্স সুন্দরী হওয়ার পরপরই একটি ছবিতে যুক্ত হয়েছিলেন মেহজাবীন। ‘ওয়ারিশ’ নামের ছবিটি শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। এরপর বিভিন্ন সময়ে বহু ছবির প্রস্তাব এসেছে তাঁর কাছে। কিন্তু গল্পে মুগ্ধতা খুঁজে পাননি। তাই বড় পর্দায় আসতে লেগে গেল দেড় দশক। আগামীকাল শঙ্খ দাশগুপ্তের ‘প্রিয় মালতী’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হবে মেহজাবীনের। অনুভূতিটা কেমন? প্রথম নাটক মুক্তির আগমুহূর্তের মতো?</p> <p>—‘না।’ তড়িঘড়ি করে উত্তর দিলেন মেহজাবীন। একটু পর কারণটাও<strong> বললেন</strong>, ‘কারণ সে সময় অভিনয়ের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ ছিল না। এখন অভিনয়ই আমার পেশা, আমি শুধু এ কাজটাই পারি, এখন এটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে গল্পটা নিয়ে এসেছি, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গা থেকে এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। কৌতূহল হচ্ছে, দর্শক কিভাবে গ্রহণ করবেন, আমার অভিনয় তাঁদের কেমন লাগে।’</p> <p>‘প্রিয় মালতী’ অবশ্য বাণিজ্যিক মসলাদার ও গতানুগতিক নাচ-গানের ছবি নয়। মেহজাবীনের মতে, যাঁরা মৌলিক এবং পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গল্প দেখতে চান, ছবিটি তাঁদের জন্য। ‘এটা আসলে সোশ্যাল ড্রামা, সব বয়সী মানুষ এটা দেখতে পারবেন এবং সবাই কানেক্ট করতে পারবেন। ছবিটা নিয়ে আমরা কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে গিয়েছি। যদিও সেটা ভিন্ন দেশ, ভিন্ন ভাষার মানুষ সেখানে, তবু ওখানকার মানুষ বলেছেন, তাঁদের জীবনের সঙ্গেও ছবিটার গল্প মিলে গেছে। তো, বাইরের দর্শক যদি আমাদের গল্পের সঙ্গে মিল খুঁজে পান, তাহলে আমাদের দর্শক কেন পাবেন না?’ আরেকটু আগবাড়িয়ে <strong>বললেন মেহজাবীন</strong>।</p> <p>প্রসঙ্গত, মেহজাবীন অভিনীত প্রথম ছবি মাকসুদ হোসেনের ‘সাবা’, যেটা বিভিন্ন দেশের উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং প্রশংসাও পেয়েছে। তবে আগে মুক্তি পাচ্ছে ‘প্রিয় মালতী’। এটাকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা বলেই জানালেন তিনি। নতুন বছরে ‘সাবা’ আসবে, দিন-তারিখ এখনো চূড়ান্ত নয়।</p>