বাংলাদেশি ভাস্কর শামীম সিকদারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ (আজকের দিনে) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন শামীম সিকদার। তিনি সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টিল ও গ্লাস ফাইবার মাধ্যমে কাজ করতেন।
কমিউনিস্ট পন্থী নেতা সিরাজ সিকদার তার আপন বড় ভাই।
আরো পড়ুন
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের জন্মদিন আজ
শামীম সিকদার ভাস্কর্যের ওপরে ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ৩ বছরের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। এই কোর্সটির শিক্ষক ছিলেন মিস্টার সিভিস্কি, যিনি একজন বিখ্যাত ফরাসি ভাস্কর। লন্ডনের স্যার জন স্কুল অব কাস থেকে তিনি একটি সনদ অর্জন করেন ১৯৭৬ সালে।
১৯৯০ সালে চীনে মিস্টার লি ডুলি নামের একজন বিখ্যাত ভাস্করের সঙ্গে কাজ করেন এক বছরের মতো।
শামীম সিকদার ১৯৮০ সালে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে।
এরপর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর ভাস্কর শামীম সিকদার চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান।
১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত স্বোপার্জিত স্বাধীনতা শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তার সহকারী ছিলেন শিল্পী হিমাংশু রায়। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র।
১৯৮৮ সালের ২৫শে মার্চ এটি স্থাপন করা হয়।
স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত। ২০০০ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য উদ্যানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ইস্কাটনে অবস্থিত জাতীয় ভাস্কর্য গ্যালারিতে নির্মাণ করেন তিনি যেখানে আছে বিশ্বের অন্যান্য ব্যক্তিদের ভাস্কর্য।
আরো পড়ুন
এলএনজি আনতে ৪২৭০ কোটি ঋণ নিচ্ছে সরকার, গ্যারান্টার বিশ্বব্যাংক
১৯৭৫ সালে চারুকলা ইনন্সটিটিউটে শামীম সিকদারের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউটে, ১৯৮২ সালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে এবং ঐ বছরই শিল্পকলা একাডেমিতে তার ভাস্কর্যের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তার অনেক একক প্রদর্শনী হয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক শিল্প গ্যালারিতে। তার ভাস্কর্যের দলগত প্রদর্শনী হয়েছে বিভিন্ন স্থানে নানা সময়ে।
শামীম সিকদারের স্বামীর নাম কবি জাকারিয়া চৌধুরী। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি ভাস্কর্যের পাশাপাশি ছবি আঁকা, জুডো, কারাতে, শ্যুটিং, বাগান করা ও গাড়ি চালাতে পারতেন। শামীম সিকদার কবিতা, সংগীত ও নাটকের ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করেন। তিনি ইংল্যান্ড, ইতালি এবং চীন সফর করেছেন বিভিন্ন সময়ে।
ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস পুরস্কার অর্জন করেন ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭৩ এবং ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৩ সালে অর্জন করেন সিলভার জুবলি অ্যাডওয়ার্ড অব ফাইন আর্ট পুরস্কার। ১৯৭৪ সালে ভাস্কর্যের ওপর প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার জিতে নেন। ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
২০২৩ সালের ২১ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।