<p>স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভালোবাসা একটি সুখী সংসারের মূল অনুষঙ্গ। যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আন্তরিক ভালোবাসা থাকে দুনিয়ার জীবন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে কাটে। ভালোবাসার ঘাটতি যে সংসারে যতটা, হতাশা ও অশান্তি সেখানে ততটা বেশি। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন কিভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসবে। নির্দিষ্ট সময় বা দিন নয়; বরং স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ভালোবাসবে প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহৃর্তে। তবেই ভালোবাসার জীবন গড়ে উঠবে পরস্পরের মাঝে। এখানে প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো।</p> <p><strong>এক. ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ করা</strong> : স্বামীরা বিভিন্নভাবে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেও অনেক সময় মুখে তা প্রকাশ করতে পারে না। তবে স্ত্রীদের পছন্দ হলো স্বামীরা যেন মাঝেমধ্যে তাদের ভালোবাসার কথা মুখেও প্রকাশ করে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-ও মুখে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতেন। আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, আয়েশা! (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬২)</p> <p><strong>দুই. প্রেমময় কথায় আপ্লুত করা</strong> : স্ত্রীদের পছন্দের আরেকটি বিষয় হলো প্রেমময় বা  হৃদয়গ্রাহী কথা বলে তাদের আনন্দ ও আপ্লুত করা। এতে তারা খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-ও মাঝেমধ্যে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীদের বিভিন্ন প্রেমময় কথায় আপ্লুত করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত খাদিজা (রা.) সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে তার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৪৩৫)</p> <p><strong>তিন. ভালোবাসা সঞ্চারিত বৈধ বিভিন্ন নামে ডাকা</strong> : স্ত্রীর আসল নাম ছাড়া পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এমন অর্থবহ বৈধ নামে ডাকা নাজায়েজ নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষ তা আবশ্যক। যেমন আনন্দ বা রাগের সময় তাকে বিভিন্ন নামে সম্বোধন করা, যাতে তার আনন্দ বৃদ্ধি পায় এবং রাগ নিয়ন্ত্রিত হয়। নবীজি (সা.)-এর পবিত্র জীবনীতেও এর উদাহরণ রয়েছে। এক বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)</p> <p><strong>চার. ব্যস্ততার ফাঁকে প্রেমময় আচরণ করা</strong> : প্রতিদিনের জীবনে আমাদের নানা রকম ব্যস্ততা রয়েছে। তবে এই ব্যস্ততার ফাঁকে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমময় আচরণ করা, আনন্দ দেওয়া এটা ইসলামের শিক্ষা। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) শত ব্যস্ততার মাঝেও স্ত্রীদের সঙ্গে আনন্দময় সময় পার করেছেন। নবী জীবনে স্বীয় স্ত্রীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার এত সব চিত্র অঙ্কিত রয়েছে, যা সত্যি একটি আদর্শ দাম্পত্য জীবনের অনন্য উপমা। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি পান করতাম এবং পরে নবী (সা.)-কে অবশিষ্টটুকু প্রদান করলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতাম, তিনিও পাত্রের সেই স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আবার আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় খেয়ে তা নবী (সা.)-কে দিলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়েছিলাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭৯)।</p> <p><strong>পাঁচ. সময়-সুযোগে বৈধ খেলাধুলা করা</strong> : সময়ে সময়ে স্ত্রীদের সঙ্গে বৈধ খেলাধুলা করা এটা নবীজির সুন্নত। এর দ্বারা পারস্পরিক ভালোবাসা আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭৮)</p> <p><strong>ছয়. ব্যক্তিগত কাজে পরামর্শ করা</strong> : ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ে অনেকই স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করাটাকে অনর্থক মনে করেন। এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু ঘরোয়া বিষয়ই নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রেও নিজের স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ নামক ইসলামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে নবীজি (সা.) স্বীয় স্ত্রী উম্মে সালমা (রা.)-এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় যা অতি কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৭৩১)</p> <p><strong>সাত. মৃত্যুর পরও ভালোবাসা প্রকাশ করা</strong> : প্রিয় নবীজি (সা.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকালের পরেও তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কোনো স্ত্রীর প্রতি আমি ঈর্ষান্বিত হইনি। তবে খাদিজা (রা.)-কে না দেখলেও তাঁর প্রতি আমার ঈর্ষা জাগত। রাসুল (সা.) প্রায়ই খাদিজা (রা.)-এর কথা স্মরণ করতেন। অনেক সময় তিনি ছাগল জবাই করে কয়েক ভাগ করে তা খাদিজা (রা.)-এর বান্ধবীদের কাছে পাঠাতেন। তাই আমি রাসুল (সা.)-কে বলতাম, পৃথিবীতে যেন খাদিজা ছাড়া আর কেউ নেই। তখন রাসুল (সা.) বলতেন, সে যেমন উঁচু সম্মানের অধিকারী ছিলেন, তেমনি খুবই বুদ্ধিমতীও ছিলেন। তাঁর থেকে আমার সন্তান হয়েছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮১৮)</p>