ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে পুঁজি করে নারী ও কন্যাশিশুর বহুমাত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথায়-বার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়।
রবিবার (১৬ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। যে প্রতিষ্ঠানের ওপর সবচেয়ে বেশি নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব, সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ; পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ‘ধর্ষণ’ শব্দটা ব্যবহার না করতে গণমাধ্যমকে যখন অনুরোধ করেন, তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাদের এই অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ এর মাধ্যমে ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে।
কোনো অবস্থায় এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি সংবাদপত্রের ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ‘ধর্ষণ’।
আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নিপীড়ন’ বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।
খুনিকে চোর বলতে পারবেন না উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশকে তো আমি আনসার বলতে পারব না।
পুলিশ পুলিশই। পুলিশ যেভাবে কলঙ্কিত করেছে নিজেদের, সে কারণে কী মানুষ বলেছে ‘পুলিশ’ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না? সেই পুলিশ কীভাবে ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না, এ ধরনের মন্তব্য রাখতে পারে। সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। ধর্ষণ ঘটনা আরো জোরালোভাবে প্রচারের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশে অতীতের চর্চার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এর মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই কন্যাশিশুসহ সব বয়সী নারী ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতঙ্কে আছে। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তৃতা করেন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, মানবাধিকারকর্মী মহুয়া পাল, নাগরিক উদ্যোগের লাকী আক্তার প্রমুখ।