<article> <p style="text-align: justify;">অবসরের আগে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন বেনজীর আহমেদ। ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবন তাঁর। ১৯৮৮ সালে মাসিক এক হাজার ৪৭০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। আর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিজীবন শেষ করেন ৭৮ হাজার টাকা বেতনে। সব মিলিয়ে তিনি বেতন-ভাতা বাবদ আয় করেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। এর আগে ২০১১, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">অবসরে যাওয়ার আগে ২০২১ সালে ভূষিত হন শুদ্ধাচার পুরস্কারেও। তবে অবসরে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে, শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত এই প্রভাবশালী কর্মকর্তার দুর্নীতির ফিরিস্তি দীর্ঘ। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধান বলছে, স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে তিনি দেশের নানা প্রান্তে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।</p> <p style="text-align: justify;">জাতীয় বেতন স্কেল ১৯৭৭ অনুযায়ী বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে চাকরিতে যোগদানের পর নবম গ্রেড হিসেবে সর্বসাকল্যে প্রতি মাসে বেতন পান এক হাজার ৪৭০ টাকা। সে অনুযায়ী প্রথম তিন বছরে সর্বসাকল্যে বেতন পান ৫২ হাজার ৯২০ টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">পরবর্তীকালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পদোন্নতির পর জাতীয় পে স্কেল ১৯৯৭ হিসাবে সপ্তম গ্রেড অনুসারে প্রতি মাসে ৯ হাজার ৭৫০ টাকা বেতন পান। এই পদে দায়িত্বকালে চার বছরে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় চার লাখ ৬৮ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">২০০১ সালে এআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ছয় বছরে জাতীয় পে স্কেল ১৯৯৭ হিসাবে ষষ্ঠ গ্রেড অনুসারে প্রতি মাসে ১০ হাজার ৮৪০ টাকা মাসিক বেতনে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের অর্থ দাঁড়ায় সাত লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">এআইজি হিসেবে পঞ্চম গ্রেড অনুযায়ী জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৫ অনুসারে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মাসে ১৭ হাজার ৩২৫ টাকা বেতন পান। সে হিসাবে ওই সময়কালে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের মোট অর্থ দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ টাকা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী অতিরিক্ত আইজিপি পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে দ্বিতীয় গ্রেডে পুলিশের সাবেক এই আইজির আট বছরে প্রতি মাসে ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা হারে সর্বসাকল্যে বেতনের অর্থ দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সাল থেকে তাঁর চাকরিজীবনের শেষ ধাপ ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রেড-১ হিসাবে জাতীয় বেতন কাঠামো ২০১৫ অনুযায়ী সাত বছরে প্রতি মাসে ৭৮ হাজার টাকা হারে সর্বসাকল্যে তাঁর বেতনের অর্থ দাঁড়ায় ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">সেই হিসাবে এই কর্মকর্তা চাকরিজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট বেতন বাবদ উপার্জন করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">এর সঙ্গে পুলিশের সাবেক এই আইজি বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণ করে বৈধ পন্থায় অর্জন করেছেন কিছু আর্থিক সুবিধা।</p> <p style="text-align: justify;">বেনজীরের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে, দুদক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বেনজীর আহমেদ যেহেতু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন, সে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির তথ্য উঠে এলে অবশ্যই সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের এ বিষয়ে বিশদভাবে অনুসন্ধানে নামা উচিত।</p> <p style="text-align: justify;">ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের যেকোনো পর্যায়েই চাকরি করুন না কেন বৈধ উপায়ে কোনোভাবেই এত সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয়। বেনজীর আহমেদ যদি সত্যিই এত সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন, সেটি বিস্ময়কর। বেনজীর দুর্নীতি করে থাকলে সেটি চিহ্নিত করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের উৎস ও সূত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তাঁর দুর্নীতির পুরো চিত্র উন্মোচন করা উচিত। কারণ আইন সবার জন্য সমান।</p> </article>