<p>শুধু নামের কারণে ২২ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি নাটোরের বাগাতিপাড়ার "শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ"। ফলে কলেজটিতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরই মধ্যে অনেকে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন, আবার নতুনভাবে যোগদান করেছেন কিছু শিক্ষক। সর্বশেষ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন (এনটিআরসিএ) এর মাধ্যমে ৪ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়নি।</p> <p>প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, "শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ" নাম হওয়ায় এতদিন এমপিও হয়নি। তাই তারা দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছেন, যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা যায়।</p> <p>প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৪ এপ্রিল সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান (পটল) "শহীদ জিয়াউর রহমান" কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান শুরু করে এবং ২০০৫ সালে স্বীকৃতি পায়। শর্তপূরণের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নামে জমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি, আসবাবপত্র এবং নিয়মিত পাঠদান প্রক্রিয়া চালু হলেও, শিক্ষক-কর্মচারীদের বিনা বেতনে শ্রম দিতে হচ্ছে।</p> <p>বর্তমানে ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী কলেজটিতে কর্মরত আছেন, কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তারা অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিছু শিক্ষক টিউশনি করে বা বিকল্প উপায়ে সংসার চালাচ্ছেন।</p> <p>এছাড়াও জানা যায়, এমপিওভুক্ত না হওয়া এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে ২০২১ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে "দয়ারামপুর কলেজ" রাখা হয়। তবে তাতেও কোন লাভ হয়নি। স্থানীয়রা জানান, দয়ারামপুর ইউনিয়ন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যেখানে একটি সামরিক স্থাপনা - "কাদিরাবাদ সেনানিবাস" রয়েছে। এই এলাকায় সামরিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।</p> <p>কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষকরা আরও বেশি মনোযোগী হয়ে শিক্ষাদানে অংশ নেবেন, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।</p> <p>কলেজটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আলতাব হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি এখানে কর্মরত আছেন। ২২ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, এটাই বাংলাদেশের একমাত্র কলেজ যেখানে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে, অথচ এমপিওভুক্ত নয়।</p> <p>কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোরশেদ জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সকল শর্ত পূরণ করে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে আসছেন, কিন্তু আজও কলেজটি এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বিনা বেতনে কর্মরত আছেন। এতে তারা সামাজিকভাবে নানা ধরনের কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তিনি আরো দাবি করেন, কলেজটির নাম 'শহীদ জিয়াউর রহমান' হওয়ায় তারা প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।</p> <p>তারা দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু হয় এবং শিক্ষকরা সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারেন।</p>